সামলে চালান, জীবন বাঁচান।
পথে নিরাপত্তার স্বার্থে গাড়িচালকদের সচেতনতাবৃদ্ধির প্রচার আগেই শুরু হয়েছে। তাতে দুর্ঘটনার হিড়িকে খানিক রাশও টানা গিয়েছে বলে রাজ্য পুলিশের দাবি। কিন্তু তারই মধ্যে সিঙ্গুরে গুরুতর দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে তৃণমূল সাংসদ তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি। এক দল মদ্যপ যুবকের বেপরোয়া ড্রাইভিং স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর চোখে ধরা পড়ে গিয়েছে।
এ বার তাই আরও কড়া দাওয়াই দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ইচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজেই কঠোর আইন প্রণয়ন করে বেয়াদপ চালকদের ‘টাইট’ দিক। মঙ্গলবার নবান্নে পরিবহণ সংক্রান্ত এক বৈঠকে এমনই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘এক মাস সময় দেওয়া হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে বেয়াদপি সহ্য করা হবে না।’’
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েক জন মন্ত্রী-আমলা ও কলকাতা-সহ অন্যান্য কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনারেরা। কিন্তু দেশ জুড়ে অভিন্ন মোটর ভেহিক্লস আইন বলবৎ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য কী ভাবে আলাদা আইন করবে, সে সম্পর্কে প্রশাসনের অন্দরেও কিছুটা সংশয় বহাল। নবান্নের খবর, পরিবহণ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইনটি সব রাজ্য মেনে চলে। তাকে আরও কঠোর করে তুলতে দিল্লি এই মুহূর্তে সংশোধনী প্রক্রিয়াও চালাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কয়েক দিন আগে পশ্চিমবঙ্গ নিজের মতামত জানিয়েও দিয়েছে। এমতাবস্থায় রাজ্যের স্বতন্ত্র আইনের চিন্তা কতটা বাস্তব?
নবান্নের এক কর্তার জবাব, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন বেপরোয়া গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে। সে জন্য তিনি রাজ্যের নিজস্ব একটা আইন চেয়েছেন। আলোচনায় ঠিক হবে, কী ভাবে তা করা যায়। দরকারে দেখে নেওয়া হবে, কেন্দ্রীয় আইনে কী কী সংশোধনী আসছে।’’
সাংবাদিক বৈঠকে ‘বেয়াদপ’ চালকদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি ছোড়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বিস্তারিত জানিয়েছেন, ‘বেয়াদপি’ করলে তাঁর প্রশাসন কী কী ব্যবস্থা নেবে। যেমন?
মমতার বক্তব্য: অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালকের দোষে মানুষের প্রাণ যায়। তেমন সব ঘটনায় পুলিশ রুজু করবে খুনের মামলা। কোনও ছাড় মিলবে না। পর পর তিন বার ট্র্যাফিক আইন ভাঙলেই চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হবে। জাতীয় ও রাজ্য সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ অংশে থাকবে বিশেষ নজরদারি। মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবাণী, ‘‘পুলিশ ও পুরসভাকে দেখতে হবে, রাস্তায় যেন চুন-বালি, ইট-সুড়কি পড়ে না-থাকে। কেউ কথা না-শুনলে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেখানে-সেখানে পার্কিং করা যাবে না। প্রয়োজনে কলকাতায় আরও পার্কিং লট হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসবে।’’
কিন্তু এ সব করবে কে?
সে উপায়ও বাতলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘‘রাজ্য পথ নিরাপত্তা পর্ষদ তৈরি হবে। তার মাথায় থাকবেন মুখ্যসচিব। সদস্য হবেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের কর্তা ও পুলিশ অফিসারেরা।’’— মন্তব্য তাঁর। পর্ষদকে আইনি ক্ষমতা দিয়ে বলশালী করা হবে বলেও তাঁর
দাবি। এবং সেই কারণেই মোটর ভেহিক্লস আইনের পাশাপাশি পথ নিরাপত্তা ও পথচারীদের জীবন সুরক্ষিত করতে রাজ্যের তরফে নতুন আইন আনার নির্দেশ।
পর্ষদ কী দেখবে?
মুখ্যমন্ত্রী জানান, পর্ষদ বেপরোয়া গাড়ি চালানো রুখবে। দেখবে, মদ খেয়ে কেউ যেন গাড়ি না চালায়। মোটরবাইক আরোহীদের মাথায় যেন হেলমেট থাকে। রাস্তায় গ্রিন করিডর, বাইক করিডর তৈরি ও আরও বেশি ইলেকট্রনিক নজরদারির বন্দোবস্তও করবে। এত সবের খরচ আসবে কোথা থেকে?
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিবহণ-করের উপরে আরও ৫% পথ নিরাপত্তা সেস চাপানো হবে। এতে অতিরিক্ত যে টাকা উঠবে, তা পথ নিরাপত্তার বিভিন্ন প্রকল্পে খরচ হবে।
তবে এর জেরে পশ্চিমবঙ্গে যে কোনও ধরনের গাড়ি কেনার খরচ কিছুটা বাড়তে পারে। কারণ, এখন পরিবহণকর্মী কল্যাণ সেস বাবদ ৫% সেস তোলা হয়। রাজ্যের নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে সেসের বহর বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
সুরক্ষা-ঝাঁপি
• স্টেট রোড সেফটি অথরিটি গড়া হবে
• বিপজ্জনক পথে সিসিটিভি, ওয়াচ টাওয়ার
• বড়-মাঝারি-ছোট যানের পৃথক করিডর
• পণ্যবাহী ট্রাকে বিশেষ নজরদারি
• তিন বার আইন ভাঙলে লাইসেন্স বাতিল
• বাসের রুট পারমিটও বাতিল হতে পারে
• লাইসেন্সের আগে চালকের ভিডিও রেকর্ডিং
• মোটরবাইক কিনলে বিনামূল্যে হেলমেট
• ভিন রাজ্যের গাড়ি এ রাজ্যেও নথিভুক্তি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy