Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভোট মিটতেই জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী

পুর নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা সফরের সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই আসছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। যদিও পুর নির্বাচনের সার্বিক ফল আশানুরূপ বলা যায় না। ৬টি পুরসভার মধ্যে চারটি পুরসভা দখলে রাখতে পারলেও অন্য দু’টি পুরসভা ত্রিশঙ্কু। তার মধ্যে রয়েছে খড়্গপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুরসভাও।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৭
Share: Save:

পুর নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা সফরের সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই আসছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। যদিও পুর নির্বাচনের সার্বিক ফল আশানুরূপ বলা যায় না। ৬টি পুরসভার মধ্যে চারটি পুরসভা দখলে রাখতে পারলেও অন্য দু’টি পুরসভা ত্রিশঙ্কু। তার মধ্যে রয়েছে খড়্গপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুরসভাও। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফলাফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। নেতৃত্বে বদলও করতে পারেন। তাই প্রশাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার জন্যও সময় রাখতে এক রাত জেলাতে কাটাবেন তিনি।

জেলায় শুধু ফলাফল নয়, গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার তৃণমূলের আরও একাধিক সমস্যাও রয়েছে। দখলে রাখা পুরসভাগুলিতে কে চেয়ারম্যান হবেন, তা নিয়ে এখনও প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়নি বটে, তবে শুরু হয়ে গিয়েছে তদ্বির। সকলেই যে নিজেকে পুরপ্রধান হিসাবে দেখতে চান। যেমন ধরা যাক ক্ষীরপাই পুরসভার কথা। গতবারের সিপিএমের পুরপ্রধান দুর্গাশঙ্কর পান এ বার তৃণমূলের হয়ে জয়ী হয়েছেন। সেখানে তৃণমূলের অন্য দুই নেতা পুরপ্রধান হওয়ার জন্য মরিয়া। একদিকে সুজয় পাত্র, অন্যদিকে গৌতম ভট্টাচার্য।

তাঁদের দু’জনের আবার দুই ভিন্ন গোষ্ঠী। ফলে মত বিরোধ তীব্র আকার নিতে পারে।

এ দিকে রামজীবনপুর কী ভাবে নিজেদের দখলে রাখা যায় তার কৌশল স্থির করা। ন্যূনতম আরও একজন কাউন্সিলরকে নিজেদের পক্ষে আনতে মরিয়া তৃণমূল। এ সব কিছু নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে যাবেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। তবে দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুখ্যমন্ত্রী আসতে পারেন বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই।’’ পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে সভাপতি বলেন, “সবে তো নির্বাচন শেষ হল। তারপরই আবার সাধারণ মানুষকে হেনস্থায় ফেলতে একদিন কর্মনাশা বনধ‌্ ডেকেছে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস-সহ সব দল। অন্যদিকে নেপালে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়। সব মিলিয়ে মানুষকে কিভাবে স্বস্তি দেব তা নিয়ে ভাবছি। এখনও তো সময় রয়েছে। পরে পুরপ্রধান নিয়ে আলোচনা হবে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭ তারিখ জেলায় আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। ওইদিন বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক সেরে বিকেলের মধ্যে ঝাড়গ্রামে ঢুকবেন। তারপর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে রাতে রাজবাড়িতেই থাকবেন। রাতেই দলীয় নেতৃত্বকে নিয়ে আলোচনাতে বসতে পারেন। পরদিন প্রশাসনিক সভা হবে কিনা তা নিয়ে প্রশাসনিক কর্তারাও কিছু বলতে পারছেন না। তবে সব দিক দিয়ে তৈরি থাকছে প্রশাসন। হঠাৎ কোনও সিদ্ধান্ত হলে কী করা হবে তার তালিকা তৈরি হয়েছে।

সে তালিকায় রাখা হয়েছে কী কী প্রকল্পের শিলান্যাস করা যেতে পারে, কোন কোন প্রকল্পের উদ্বোধন করা যেতে পারে, কোন কোন উপভোক্তাকে কোন কোন প্রকল্পের সহায়তা দেওয়া যেতে পারে প্রভৃতি। দল ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সফরের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার দিকটি অবশ্যই রাজনৈতিক। কারণ, বিধানসভা নির্বাচন দরজায়। সদ্য পুরসভা নির্বাচন গেল। ভোটের হিসাবে ৬টি পুরসভার ৪টি তৃণমূলের দখলে থাকলেও চন্দ্রকোনা ছাড়া সার্বিক ফল কোথাও তেমন ভাল হয়নি। বিশেষ করে, বাম আমলে যে সব পুরসভা বামফ্রন্টের দখলে ছিল, রাজ্যে পরিবর্তনের পর সেই সব পুরসভার দখল নিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু নির্বাচনের পর দেখা যাচ্ছে সেই সব জায়গায় কেবলমাত্র বোর্ড গঠনে প্রয়োজনীয় আসনটুকু পেয়েছে তারা। কমেছে জয়ের ব্যবধানও। তাছাড়াও বিজেপি মাথা তুলছে। সংগঠন ছাড়াই তারা প্রায় সব আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভোটও মিলেছে ভাল। জেলার অন্যত্র কোথাও কাউন্সিলর না হলেও খড়্গপুর পুরসভায় এক ধাক্কায় ১ থেকে কাউন্সিলরের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭। উল্টে জেতা ৬টি আসন হেরেছে তৃণমূল। ফলে বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল করতে হলে যে সংগঠনকে আরও চাঙ্গা করতে হবে, গোষ্ঠী কোন্দল ভুলে জোট বেঁধে লড়াই করতে হবে, এবার হয়তো মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় জেলা নেতৃত্বকে সেই বার্তাই দিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE