মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দিল্লিতে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যা হয়েছে তাতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রাতে তিনি এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন। সেখানে গোটা ঘটনায় ক্ষোভপ্রকাশের পাশাপাশি নিন্দাও করেছেন।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর দেখা না-পেয়ে কৃষি ভবনেই অবস্থান শুরু করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের অন্য নেতারা। এর পরেই তাঁদের আটক করে দিল্লি পুলিশ। তাঁদের টেনেহিঁচড়ে তোলা হয় প্রিজ়ন ভ্যানে। নিয়ে যাওয়া হয় উত্তর দিল্লির মুখার্জীনগর থানায়। সেখানে প্রায় দু’ঘণ্টা আটকে রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এই গোটা ঘটনার নিন্দা করে সমাজমাধ্যম এক্স-এ দীর্ঘ পোস্ট করেছেন মমতা।
এক্সে মমতা লিখেছেন, “আজ গণতন্ত্রের জন্য একটি অন্ধকার, অশুভ দিন। বাংলার জনগণের প্রতি বিজেপির ঘৃণা, দরিদ্রদের অধিকারের প্রতি তাদের অবজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও লিখেছেন, “প্রথমত, তারা বাংলার দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ গুরুত্বপূর্ণ তহবিল আটকে রেখেছে। আমাদের প্রতিনিধি দল যখন দিল্লিতে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ করতে এবং জনগণের দুর্দশার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তখন তাদের সঙ্গে নির্মম ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমে রাজঘাটে এবং তার পরে কৃষি ভবনে। বিজেপির হাত হিসাবে কাজ করা দিল্লি পুলিশ আমাদের প্রতিনিধিদের নির্লজ্জ ভাবে হেনস্থা করেছে। যাঁদেরকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের অপরাধীদের মতো পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ, তাঁরা ক্ষমতার সামনে সত্য কথা বলার সাহস দেখিয়েছিল। তাঁদের ঔদ্ধত্যের কোনও সীমা নেই। অহঙ্কার তাঁদের অন্ধ করে দিয়েছে। বাংলার কণ্ঠস্বরকে দমন করতে তারা এখন সব সীমা অতিক্রম করেছে!” সব শেষে তিনি লিখেছেন, “কিন্তু আমরা ভয় করব না ভয় করব না, দু’বেলা মরার আগে মরব না, ভাই, মরব না।”
মঙ্গলবার যন্তর মন্তরের কর্মসূচি শেষে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক-সহ তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দলের। সেই অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে পায়ে হেঁটে দিল্লির কৃষি ভবনে পৌঁছয় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। সঙ্গে ছিল ভুক্তভোগীদের আট জন। কৃষি ভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা না করায় কৃষি ভবনেই অবস্থান শুরু করে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। রাত্রি ৯টা নাগাদ কৃষি ভবনে অবস্থানরত তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে জোর করে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে দিল্লি পুলিশ। শুরু হয় তুমুল ধস্তাধস্তি। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, অভিষেক-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁদের মোবাইল ফোনও। প্রায় দু’ঘণ্টা পর রাত ১১টা নাগাদ ছেড়ে দেওয়া হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে।
থানার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জ্যোতিকে আক্রমণ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, “কৃষি ভবনে ঢোকার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়ে দেন তিনি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখা করবেন না। বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি সেই অনুরোধ রাখেননি। আমরা সন্তানহারাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুরোধ করলেও তিনি রাজি হননি।”
অভিষেক আরও বলেন, “বেশ খানিক ক্ষণ বসে থাকার পর আমরা জানতে পারি, মন্ত্রী আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন না। তিনি বেরিয়ে গিয়েছেন। সন্তানহারাদের সঙ্গে দেখা না করে পালিয়ে গেলেন মন্ত্রী!”
দিল্লিতে হেনস্থার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কলকাতায় রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন অভিষেক। ওই দিন বেলা ৩টের সময় রাজভবন অভিযান করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy