প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বঙ্গে ফের পা রাখার আগে ভিন্ রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার প্রশ্নে বিজেপির উপরে চাপ আরও বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় কেউ কথা বললই কেন তাঁকে আটক করে ফেরত পাঠানো হবে, সেই প্রশ্নে ফের সরব হয়েছেন তিনি। বিতর্কের মুখে বিজেপি বারবার দাবি করছে, অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি মুসলিম ও রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-শাসিত ওড়িশায় বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা বলে চিহ্নিত তালিকায় বাঙালি হিন্দুদের নাম সামনে রেখে সিপিএম পাল্টা তোপ দেগেছে, মুখে নানা কথা বললেও আসলে ‘বাঙালি বিদ্বেষ’ চালিয়ে যাচ্ছে আরএসএস-বিজেপি।
নিউ টাউনে সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধনে গিয়ে বৃহস্পতিবার বিজেপির উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, “সব ভাষাকে সম্মান করি। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলছে, বাংলায় কথা বললে ফেরত পাঠাও। ওঁরা জানেন না, কথা বলা লোকজনের সংখ্যার নিরিখে বাংলা ভাষা এশিয়ায় দ্বিতীয়। পৃথিবীতে পঞ্চম। আমি ওড়িয়াও বুঝি। খাউন্তি, করুন্তি, যাউন্তি। কিন্তু ঝগড়া না-করুন্তি!” তাঁর আরও প্রশ্ন, “বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা বলে দিচ্ছে। রোহিঙ্গা তো মায়ানমারে। ওঁরা বাংলা জানলেন কী ভাবে?” পরিযায়ী-প্রশ্নে মমতার সংযোজন, “আমাদের এখানেও দেড় কোটি বাইরের রাজ্যের লোক কাজ করেন। আমরা খুশি তাঁরা কাজ করেন বলে।”
ভোটার তালিকা থেকে ‘নাম বাদ’ দেওয়া নিয়েও নাম না-করে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, “কেন বলবে ১৭ লক্ষ লোকের নাম বাদ দাও? কে তুমি হরিদাস? ভারতে, বাংলায় যাঁরা বাস করেন, তাঁরা ভারতের নাগরিক। জাত, ধর্ম তোমার দেখার দরকার নেই। সবাই বাংলার ভোটার। কেউ বলছেন ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে। আমরা তো বলছি তাঁরা কারা, চিহ্নিত করুন, ঠিকানা দিন। সরকার চালাতে হলে মগজে মরুভূমি হলে হবে না!”
এরই মধ্যে সামনে এসেছে আটক বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের নিয়ে ওড়িশার রায়গড় থানার দেওয়া রিপোর্ট। সেই তালিকায় নাম রয়েছে কালিদাসী বিশ্বাস, সুরা বালা, অশোক রায়, মায়ারানি দাস, আলো রায়, গীতা হালদার, পাচি ঢালিদের। এই সূত্রেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘ছত্তীসগঢ় থেকে ৩০ জন বাংলাভাষী বাঙালিকে বাংলাদেশে পাঠানোর ছক হয়েছে। ওড়িশার তালিকায় দেখা যাচ্ছে নিম্ন বর্ণের হিন্দু বাঙালিদের নাম। আর মুখে বিজেপি বলে চলেছে রোহিঙ্গা এবং অনুপ্রবেশকারী! বিজেপি ঠিক করে দেবে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বঙ্গভাষীরা ভারতীয় কি না? মহারাষ্ট্র, অসম হোক বা অন্য কোথাও, বিজেপির এই ফরমান মানছি না!’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য দুর্গাপুরে পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘সার্বিক ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতে তৃণমূল এখন বাঙালির আশ্রয় নিয়েছে। এই সরকার আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করেছে। বলা হচ্ছে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘আমাকে ক্যাম্পে ভরো’। আমরা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, ভারতবর্ষের যেখানে বাঙালি-অধ্যুষিত এলাকা রয়েছে, সেখানে তৃণমূলের কেউ গিয়ে অন্তত পঞ্চায়েতে বা পুরসভায় বাঙালি বলে ভোট চেয়ে জামানত বাঁচিয়ে দেখান, নোটার চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে দেখান!’’
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীও ফের প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘যেখান থেকে শ্রমিকেরা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন, সেই সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে কেন তাঁদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন না? সারদার ভুক্তভোগী, চাকরিহারা, কসবা থেকে আর জি করের নির্যাতিতা, তাঁরাও বাঙালি। তাঁদের জন্য আন্দোলন করেছেন?”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)