আবার ‘কাছে’ এলেন ওঁরা! আড়াই মাস পর।
সারদা-কেলেঙ্কারিতে শিল্পী শুভাপ্রসন্নের দিকে সিবিআই ও ইডি আঙুল তোলায় তাঁকে কার্যত ঝেড়ে ফেলতে তৎপর হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও আইন আইনের পথে চলবে বলে দায়মুক্ত হয়েছেন, কখনও প্রকাশ্য মঞ্চে কথা বলতে গিয়ে নাম পর্যন্ত ভুলে গিয়েছিলেন মমতা। এ বার ফের তাঁর মুখে শোনা গেল শুভাদা’র নাম।
একুশের ঢাকায় যাওয়ার আগে কলকাতায় একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপনের সূচনা বৃহস্পতিবারই করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই অনুষ্ঠানেই বলেছেন, ভাষা-দিবস উদ্যাপনে শুভাপ্রসন্নের মুখ্য ভূমিকার কথা। শুধু তা-ই নয়, কাল শহরে ভাষা-দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে মমতার অনুপস্থিতিতে শুভাপ্রসন্ন পুরোভাগে থাকবেন বলেও সরকারি সূত্রের খবর। শুভাপ্রসন্ন নিজে অবশ্য এ সব নিয়ে কিছু বলেননি। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে ফোন করে ভাষা-দিবসের অনুষ্ঠান নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি।
মমতা বিরোধী নেত্রী থাকার সময়ে শাসক বামফ্রন্টের সংস্রব এড়িয়ে একটি পৃথক অনুষ্ঠানে ভাষা-দিবস উদ্যাপনে সামিল হতে শুরু করেছিলেন। ২০১০ সালে তৃণমূল পুরবোর্ডের সাহায্য নিয়ে সেই অনুষ্ঠানটির মূল পরিকল্পক ও সংগঠক ছিলেন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নই। দেশপ্রিয় পার্কে ‘শুভাদা’র নেতৃত্বেই একটি ভাষা-শহিদ স্মারক গড়ে তোলা হয়। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দেশপ্রিয় পার্কই সরকারি তরফে একুশে উদ্যাপনের মঞ্চ হয়ে ওঠে। সে-কথা স্মরণ করে মমতা এ দিন বলেছেন, “দেশপ্রিয় পার্কে ভাষা-দিবস পালন করায় শুভাপ্রসন্নদা আমাদের খুব ‘হেল্প’ করেছেন।”
গত নভেম্বরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের কর্মিসভায় মমতা কিন্তু ‘শিল্পী, কী যেন নাম’ বলে শুভাপ্রসন্নের নামটাই বিস্মৃত হয়েছিলেন। বলেছিলেন, “শিল্পীকে চিনতাম। কিন্তু ব্যবসায়ী শুভাপ্রসন্নকে নয়।” এর কিছু দিন আগে পৈলানের এক কর্মিসভায় তিনি বলেন, শুভার বিষয়ে আইন আইনের পথে চলবে। তিনি আলাদা করে কোনও সাপোর্ট করবেন না। এই দু’টি সভার মাঝে নজরুল মঞ্চে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে মমতা ও শুভাপ্রসন্নকে দেখা গিয়েছিল। তবে সে-দিন দু’জনের মধ্যে বাক্যালাপ বিশেষ হয়নি।
পরবর্তী পর্যায়ে ইডি ও সিবিআইয়ের জেরার মুখে বারবার পড়তে হয়েছে শুভাপ্রসন্নকে। সরকারি অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রিতের তালিকা থেকেও তিনি আচমকা বাদ হয়ে যান। চলচ্চিত্র-উৎসব থেকে শুরু করে একেবারে টাটকা সঙ্গীতমেলার উদ্বোধনী আসরেও তিনি ছিলেন না।
তা হলে হঠাৎ কী ভাবে ফের নেত্রীর নেকনজরে চলে এলেন শুভাদা? কী এমন ঘটল? তৃণমূলের অন্দরে এর এক কথায় কোনও স্পষ্ট জবাব নেই। ‘সরকারি অনুষ্ঠানে তো ওঁকে ডাকাই হয়’ বলে নবান্নের কর্তারা জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার ধারণা, “নেত্রী হয়তো বোঝাতে চান, সারদা কেলেঙ্কারিতে দলকে যতই কোণঠাসা করা হোক, তাতে আসলে উনি মোটেও পরোয়া করেননি। তা বোঝাতেই শুভাকে ফের কাছে টানার ইঙ্গিত দিয়েছেন।” তৃণমূলের উঁচুতলার নেতাদের কারও কারও আবার যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে এ বারের ভাষা-দিবসের অনুষ্ঠানে শুভা থাকলেও বিতর্কিত শিল্পীর সঙ্গে মমতার ফ্রেম-বন্দি হওয়ার ঝুঁকি নেই। দেশপ্রিয় পার্কের অনুষ্ঠানে গত চার বছরই মমতার পাশে দেখা গিয়েছে শিল্পীকে। এ বার তা হওয়ার জো নেই। মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন ঢাকায়। তাতে নেত্রীর গায়ে কালির ছিটে লাগবে না, আবার দলের অন্দরে সাহসী বার্তাও দেওযা যাবে।
তবে ইডি সূত্রের খবর, সারদা তদন্তে ‘শুভা’ কিন্তু এখনও তাঁদের নিশানায় রয়েছেন। তাঁর মালিকানাধীন সংবাদ চ্যানেল সুদীপ্ত সেনকে বিক্রি করে শুভা কেন সাড়ে ছ’কোটি টাকা নেন, তদন্ত করছে ইডি। সেই সাড়ে ছ’কোটি টাকা শুভার একাধিক ফ্ল্যাট ও অন্য সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে উদ্ধারের পরিকল্পনাও রয়েছে তদন্তকারীদের। শুভার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সিবিআই শুভাকে ডেকে মমতার ছবি কোন যুক্তিতে লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করা হল, তার হদিস চেয়েছে। একদা শিল্পী মমতাকে চিত্রামোদীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা দিতে সাংসদ-শিল্পী যোগেন চৌধুরীর সঙ্গে শুভাপ্রসন্নই বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। এক থেকে তিন লক্ষে নেত্রীর ছবির দাম বেঁধে দেওয়া থেকে প্রদর্শনীর আয়োজন নেপথ্যে মুখ্য চরিত্র ছিলেন ‘শুভাদা’ই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy