Advertisement
E-Paper

জমি ফেরানোর দিনে লগ্নির ডাক টাটাকেই

মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল কৃষিজমি ফেরানোর আন্দোলনের সাফল্য উদ্‌যাপনে। কিন্তু সিঙ্গুরে জাতীয় সড়ক আটকে তৈরি করা সেই মঞ্চে দাঁড়িয়েই বুধবার গোটা রাজ্যে শিল্পায়ন ও তার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বার্তা দিতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একেবারে নিজস্ব কেতায় বললেন, ‘‘হতাশ হওয়ার কারণ নেই। কৃষির সঙ্গে শিল্পেও ভরিয়ে দেব বাংলাকে। আমি তো রয়েছি আপনাদের পাহারাদার।’’ একই সঙ্গে আরও এক বার টাটাদের বার্তা দিলেন, রাজ্যে নতুন করে গাড়ি কারখানা তৈরি করার জন্য।

শঙ্খদীপ দাস ও গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৯

মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল কৃষিজমি ফেরানোর আন্দোলনের সাফল্য উদ্‌যাপনে। কিন্তু সিঙ্গুরে জাতীয় সড়ক আটকে তৈরি করা সেই মঞ্চে দাঁড়িয়েই বুধবার গোটা রাজ্যে শিল্পায়ন ও তার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বার্তা দিতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একেবারে নিজস্ব কেতায় বললেন, ‘‘হতাশ হওয়ার কারণ নেই। কৃষির সঙ্গে শিল্পেও ভরিয়ে দেব বাংলাকে। আমি তো রয়েছি আপনাদের পাহারাদার।’’ একই সঙ্গে আরও এক বার টাটাদের বার্তা দিলেন, রাজ্যে নতুন করে গাড়ি কারখানা তৈরি করার জন্য।

সিঙ্গুরে চাষিদের জমি ফেরানোর জন্য শীর্ষ আদালত ১২ সপ্তাহ সময় দিলেও কাজ ফেলে রাখতে চায়নি সরকার। দু’সপ্তাহের মধ্যেই চাষিদের হাতে প্রতীকী ভাবে পরচা তুলে দিয়ে সেই কাজ শুরু করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সূত্র বলছে, দীর্ঘ ১০ বছর লড়াইয়ের পরে জয় এসেছে। সেই জয়ে ভর করে গ্রাম বাংলায় নিজের এবং দলের জনভিত্তি আরও মজবুত করতে চান মমতা। বস্তুত, ‘সিঙ্গুর-সাফল্যের’ কৃতিত্ব সবটুকু শুষে নেওয়ার লক্ষ্যে তৃণমূলনেত্রী এ দিন বারবার বলেন, ‘‘কথা দিয়েছিলাম, কথা রেখেছি। পাঁচ বছর আগে ক্ষমতায় এসেই সিঙ্গুরের জমি সরকারের হাতে নিয়েছিলাম। আদালতের রায়ের পর এ বার তা আপনাদের ফিরিয়েও দিচ্ছি। এবং শুনে রাখুন শুধু আমরাই এটা পারি।’’

কিন্তু রাজনৈতিক সাফল্যের এই উদ্‌যাপন এ দিনের অনুষ্ঠানের খণ্ডচিত্র মাত্র। মমতা বিলক্ষণ জানেন, পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে আরও একটা ভোটে জনগণের বিপুল আস্থা তাঁর উপরে পাহাড়প্রমাণ প্রত্যাশার প্রতিফলন। আগামী পাঁচ বছরে নবীন প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেখাতে হবে তাঁকে।

সেই কারণে দ্বিতীয় দফায় শপথ নেওয়ার দিনেই শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। এ দিনও সিঙ্গুর আন্দোলনের অতীত আবেগ, তাঁর অনশন, বুকে রক্তক্ষরণ— এ সব প্রসঙ্গ ছুঁয়েই মুখ্যমন্ত্রী চলে আসেন শিল্পের কথায়। এবং গোড়াতেই ঝেড়ে ফেলতে চান তাঁর গায়ে লেগে থাকা শিল্পবিরোধী তকমা।

মমতা এ দিন ফের অভিযোগ করেন, তৎকালীন বাম সরকার জোর করে কৃষিজমি কেড়ে নিতে গিয়েই টাটাদের কারখানার সর্বনাশ করেছে! তাঁর কথায়, ‘‘একে তো অনিচ্ছুক চাষিরা ছিলেন, সেই সঙ্গে যাঁদের ইচ্ছুক বলা হচ্ছিল, তাঁদের অনেকেই জমি দিয়েছেন স্রেফ ভয় পেয়ে।’’ টাটাদের ভূমিকাও যে ইতিবাচক ছিল না তা বোঝাতে চেয়ে মমতা বলেন, ‘‘জেদাজেদি করতে গিয়েই টাটাবাবুরা কারখানা করতে পারলেন না।’’

কিন্তু সেই অতীতকে যে তিনি আঁকড়ে ধরে থাকতে চান না, এর পরেই তা বুঝিয়ে দেন মমতা। বলেন, ‘‘(টাটার সঙ্গে) এটা কোনও ইগোর বিষয় নয়। ব্যাপারটা স্পোর্টিংলি নিতে হবে। এই তো আগামিকালই আইটিআই প্রশিক্ষণকেন্দ্র নিয়ে টাটার এক কোম্পানির সঙ্গে আমাদের চুক্তি হবে। তাই বলছি, এক মাস সময় দিলাম। একটু ভাবুন। গোয়ালতোড়ে আমাদের হাজার একর জমি রয়েছে। যদি কেউ গাড়ি কারখানা গড়ে তুলতে চান, তা সে টাটা হোক বা বিএমডব্লিউ, ওখানে জমি দেব। যদি রাজি থাকেন, তা হলে শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র বা শিল্পসচিবের সঙ্গে কথা বলুন।’’

শুধু গাড়ি কারখানা নয়, শিল্পায়ন নিয়ে তাঁর সামগ্রিক ভাবনাও এ দিন তুলে ধরতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বারবার বলেছি, কৃষি ও শিল্প দুই বোন। আমি চাই বাংলায় আরও আইটি ইন্ডাস্ট্রি হোক। সেই সঙ্গে উৎপাদন শিল্প, বস্ত্র, কৃষিভিত্তিক, গহনা, গ্যাস, কয়লাভিত্তিক শিল্পও গড়ে তুলতে চাইছি।’’

২ নম্বর জাতীয় সড়কের যেখানে এ দিন যেখানে মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল, তার সামনেই আদিগন্ত সবুজ ধানের ক্ষেত। পিছনে পরিত্যক্ত ন্যানোর কারখানা। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘আসলে এই দুয়ের মাঝে দাঁড়ানো বিজয় মঞ্চের কাছে এ দিন অদৃশ্য দাবিটাই ছিল কৃষি ও শিল্পের মধ্যে ভারসাম্য রাখার।’’ তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক চাষি যেমন ছিলেন, তেমনই অনেকে যে শিল্প চেয়ে স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছিলেন, সেটাও ভুলে গেলে চলবে না। সে দিন যাঁরা অনিচ্ছুক ছিলেন, তাঁদেরও অনেকে আজ শিল্পের পক্ষে। ফলে এ দিন শিল্পায়নের বার্তা দেওয়া ছিল সময়ের দাবি।

আর তাই কৃষিজমি ফেরানোর মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী সে পথে হেঁটেছেন। এমনকী, রাজ্যে এখনই নতুন কোনও শিল্প না-এলেও কর্মসংস্থানের সুযোগ যে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি, তা বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। সেই কারণেই টেট পরীক্ষা ঘিরে মামলার জট কেটে গিয়ে ৬০ হাজার চাকরি হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন সিঙ্গুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে।

singur tata investment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy