Advertisement
E-Paper

দুর্নীতি করলে রেয়াত নয়, ফের বার্তা মমতার

আরও একবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় বার সরকার গঠনের পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে প্রথম প্রশাসনিক সভা করতে এসে সাফ বলে গেলেন, দুর্নীতি করলে দলে জায়গা নেই।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩২
পশ্চিম মেদিনীপুরের অনূর্ধ্ব ১৭ মহিলা ফুটবল দলের হাতে ক্রীড়া সরঞ্জাম তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জামবনির সভায় দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

পশ্চিম মেদিনীপুরের অনূর্ধ্ব ১৭ মহিলা ফুটবল দলের হাতে ক্রীড়া সরঞ্জাম তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জামবনির সভায় দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

আরও একবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় বার সরকার গঠনের পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে প্রথম প্রশাসনিক সভা করতে এসে সাফ বলে গেলেন, দুর্নীতি করলে দলে জায়গা নেই। বৃহস্পতিবার দুপুরে জামবনির প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, “ভোটের সময় আমাকে জনগণের কাছে যেতে হয় রাজনীতির কথা বলতে। আর সারা বছর আমি সরকারের কাজ করি। দল সাহায্য করে। মানুষের কাজ করাটাই আমাদের কাজ। এর থেকে যাঁরা বিচ্যুত হবেন, তাঁরা দয়া করে তৃণমূল কংগ্রেস করবেন না।”

এর আগেও কখনও মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘ভোটের থেকে নোটকে বেশি গুরুত্ব দিলে দু’দিনেই চলে যেতে হবে।’ আবার কখনও দলের কাউন্সিলরের দুর্নীতি প্রসঙ্গে তাঁর কড়া বার্তা ছিল, ‘আমি এ সব টলারেট করব না।’ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এমন কড়া নির্দেশেও দুর্নীতিতে শাসক দলের নাম জড়ানো থামেনি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি নেত্রীর বার্তা দলের নিচুতলায় পৌঁছচ্ছে না!

ঘটনা হল, তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসের গোড়া থেকেই মমতা বলে চলেছেন, সিন্ডিকেট, তোলাবাজি-সহ কোনও রকম দুর্নীতি আর বরদাস্ত করবেন না। এই সব ঘটনায় নাম জড়ানো শাসকদলের বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়াও শুরু হয়েছিল। কখনও তৃণমূল কাউন্সিলরকে গ্রেফতার হতে হয়েছে, কখনও বা পদ হারাতে হয়েছে অভিযুক্ত নেতাকে। তারপরেও অবশ্য শাসকদলের একাংশ নেতার বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ ওঠা থামেনি। কয়লা খাদানের মতো বেআইনি ব্যবসায় মদত, সিন্ডিকেট, তোলাবাজি ও চাঁদার জুলুমে বারবার জড়িয়েছে তৃণমূল নেতাদের নাম। আর তাতে তিতিবিরক্ত সাধারণ মানুষও।

মুখ্যমন্ত্রীর সাধের জঙ্গলমহলেও এক ছবি। একশো দিনের প্রকল্পে ভুয়ো মাস্টার রোলে টাকা তোলা, সুপার স্পেশ্যালিটিতে কর্মী নিয়োগে দাদাগিরি, বেআইনি বালি খাদানের কারবারে মদত দেওয়ার মতো ঘটনায় এখানে অভিযুক্ত শাসক দলের নেতারা। কিছুদিন আগে নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ঠিকাকর্মী নিয়োগে হস্তক্ষেপ করতে গিয়ে পদ হারিয়েছেন ব্লকের এক তৃণমূল নেতা। বেআইনি বালি খাদানে মদত দেওয়ার অভিযোগে সাঁকরাইল ব্লকের এক নেতাকেও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু তাতেও রাশ টানা যায়নি বেআইনি কারবারে।

শাসকদলের প্রশ্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব বিরোধীরাও। তাদের ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা নেহাতই কথার কথা। একটি-দু’টি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ হলেও বেশিরভাগ সময়ই কিছু করা হচ্ছে না। ফলে, তৃণমূলের নিচুতলায় নেত্রীর বার্তা প্রভাব ফেলছে না।

এই পরিস্থিতিতে এ দিন দুপুরে জামবনির বাণীবিদ্যাপীঠ হাইস্কুল মাঠের সভা থেকে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমি খুবই মানবিক। কিন্তু মানুষকে সমস্যায় ফেলে যারা টাকা তোলার চেষ্টা করে, তাদের আমি সমর্থন করি না। আমরা মন দিয়ে মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করি। কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, জনগণের স্বার্থ দেখাই আমার কাজ।” পরে প্রশাসনের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দলকে যেমন বলব, তেমনই সরকারি অফিসারদের কাছেও আমার আবেদন, মানুষের কাজ করতে গিয়ে সংকীর্ণতা রাখা চলবে না।” সভা থেকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগের তদন্তের নির্দেশও দেন তিনি।

আসলে, পঞ্চায়েত-প্রশাসনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জঙ্গলমহলে যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে, সে খবর রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছেও। আর সেই সূত্রে ফের মাওবাদীদের শক্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে, তা অজানা নয় মুখ্যমন্ত্রীরও। এ দিন তাই পুরনো স্মৃতি উস্কে মমতা বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগেও আমার মা-বোনেদের চোখে জল দেখতাম। একটা প্রোগ্রাম করতে আসতাম লুকিয়ে চুরিয়ে। ছেলেমেয়েরা রাস্তায় বেরোলে মাওবাদী তকমা দিয়ে গ্রেফতার করা হত। সন্ধের পরে বাজার বন্ধ, বিকেলের পরে বাস বন্ধ। জঙ্গলমহলে এখন আর কান্না নেই। সবাই হাসিমুখে আছেন।’’ আর এই হাসিতে যে তিনি দুর্নীতির ছায়া ফেলতে দেবেন না, এ দিন বারবারই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা দলের নিচুতলা পর্যন্ত পৌঁছয় কিনা, এখন সেটাই দেখার!

Mamata Banerjee corruption Jamboni stern message
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy