Advertisement
E-Paper

দখলদারি, সিন্ডিকেটে কড়া মমতা

সহায়ক পরিবেশের অভাবে এ রাজ্যে শিল্পের দেখা মিলছে না, তাঁর প্রথম ইনিংসে এই নিয়ে চর্চা হয়েছে বিস্তর। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই রাজ্যের শিল্প ও উন্নয়নের বাতাবরণ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ভাঙতে সক্রিয় হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৫
প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কলকাতায়। — নিজস্ব চিত্র

প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কলকাতায়। — নিজস্ব চিত্র

সহায়ক পরিবেশের অভাবে এ রাজ্যে শিল্পের দেখা মিলছে না, তাঁর প্রথম ইনিংসে এই নিয়ে চর্চা হয়েছে বিস্তর। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই রাজ্যের শিল্প ও উন্নয়নের বাতাবরণ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ভাঙতে সক্রিয় হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে যে বার্তা তিনি দিয়েছিলেন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে শুক্রবার সেই কথাই আরও জোরালো ভাবে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর স্পষ্ট কথা, উন্নয়নের পথে কোনও বাধাকেই আর বরদাস্ত করা হবে না। সে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতিই হোক বা প্রোমোটিং, সিন্ডিকেটের মতো সমস্যা। উন্নয়নের জন্য পরিকাঠামো নির্মাণের স্বার্থে জবরদখলও তুলে দিতে হবে বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে এসেছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের প্রসঙ্গ।

ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পরে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের মনোভাবে যে পরিবর্তন আসছে, তার ইঙ্গিত এ দিন ধরা পড়েছে বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে প্রশাসনিক বৈঠকে। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিই জেলায় বাস, অটো রুটের সংখ্যা বাড়িয়ে পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির দাবি জানাচ্ছিলেন। পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার জন্য দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই তিনি পাল্টা জানতে চান, রাস্তা কোথায় যে বেশি করে বাস-অটো চলবে? ওই সূত্রেই উঠে আসে যশোর রোড ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ জবরদখলে আটকে থাকার প্রসঙ্গ। সমস্যার কথা শুনেই কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে খুশি এসে সরকারি জায়গা দখল করে বসে পড়বে আর সেই জবরদখলের জন্য উন্নয়নের কাজ থেমে যাবে— এমনটা চলবে না! কোনও রাজনৈতিক রং না দেখে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। নতুন করে আর কোনও জবরদখল যেন না হয়, সেই বিষয়ে কড়া নজরদারির কথাও বলেন তিনি। বস্তুত যখন যে ক্ষমতায় আসে, ভোট-রাজনীতির স্বার্থে জবরদখল নিয়ে তাদের নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখার অভিজ্ঞতা রাজ্যবাসীর কাছে নতুন নয়। তৃণমূল জমানার প্রথম পাঁচ বছরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক চওড়া করার কাজ আটকে থাকা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর থেকে এমন কড়া বার্তা পায়নি প্রশাসন, যা তারা এ বার শুনছে। বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যানের প্রস্তাব মেনে যশোর রোড চওড়া করতে মমতা প্রয়োজনে গাছ কাটার প্রস্তুতি নিতেও বলেছেন।

আইনশৃঙ্খলার সমস্যা থাকলে কোনও বিনিয়োগকারীই যে উৎসাহী হবেন না, এই বাস্তবও এখন উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই এ দিনের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলার উপরেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। কামদুনি, বারাসত-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে শাসক দলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষ এ রাজ্যের শিল্প পরিবেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ছবি তুলে ধরেছে। সেই কাঁটাই এ বার উপড়ে ফেলতে চান মমতা। পুলিশ-কর্তাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, শুধু থানায় বসে নয়, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আইনশৃঙ্খলায় সমস্যা কোথায় হচ্ছে, খুঁজে বার করে সমাধান করতে হবে।

সরকারি প্রকল্পগুলি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরনিগম, পুরসভা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন, এলাকায় কী ধরনের উন্নয়নের দাবি উঠে আসছে। তাঁদের সামনে রাজ্যের আর্থিক অবস্থার কথা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রীর বলেছেন, রাজ্য সরকার টাকা দেবে, তাই শুধু বাড়ির নকশার অনুমতি আর সিন্ডিকেট নিয়ে থাকলেই হবে না! অন্যান্য উন্নয়নের কাজ দ্রুতি গতিতে করতে হবে। পুর-প্রশাসনগুলিকে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হওয়ার পরিকল্পনা করতে বলেছেন তিনি। জেলায় পাটজাত শিল্পের উন্নয়নে আলাদা একটি ‘সেল’ তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন।

বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, প্রশাসন ভালই কাজ করেছে। জেলায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। কর্মসংস্থান হবে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার। এর সঙ্গে তাল রেখে পরিকাঠামো ঢেলে সাজতে হবে। বারাসত, মধ্যমগ্রাম-সহ বিভিন্ন জায়গায় উড়ালপুলের কাজও দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

Mamata Banerjee Syndicate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy