Advertisement
E-Paper

নিশানায় সাত্তোরের নির্যাতিতা

আক্রান্তকেই ফের শাসকের আক্রমণ! সাত্তোরের নির্যাতিতা বধূকে গ্রেফতারের ঘটনায় পুলিশের পাশেই দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। বোলপুরে গিয়ে মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, ‘‘নিশ্চয়ই কিছু আছে! না হলে পুলিশ কি এমনি এমনি করবে সব!’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩১
অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কথা। বোলপুরে, প্রশাসনিক বৈঠকের পরে। বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কথা। বোলপুরে, প্রশাসনিক বৈঠকের পরে। বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

আক্রান্তকেই ফের শাসকের আক্রমণ! সাত্তোরের নির্যাতিতা বধূকে গ্রেফতারের ঘটনায় পুলিশের পাশেই দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী।

বোলপুরে গিয়ে মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, ‘‘নিশ্চয়ই কিছু আছে! না হলে পুলিশ কি এমনি এমনি করবে সব!’’ এর পরে প্রত্যাশিত ভাবেই বিরোধীরা আরও সুর চড়িয়ে দাবি করছেন, আক্রান্তদের পাল্টা অভিযোগে ‘ফাঁসিয়ে’ দেওয়ার পরম্পরায় ফের সিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি তৃণমূল সরকারের মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

বীরভূমের সাত্তোরের বাসিন্দা ওই বধূকে গত ১৭ জানুয়ারি জঙ্গলে তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ নির্যাতন করে বলে অভিযোগ। আদালতের নির্দেশে তাঁর বাড়ির সামনে বসেছে পুলিশি পাহারা। কিন্তু অভিযুক্তদের কেউই এখনও গ্রেফতার হননি। অথচ সেই নির্যাতিতাকেই পুলিশের উপরে বোমা মারা-সহ নানা অভিযোগে গ্রেফতার করে সমালোচনার মুখে পড়েছে বীরভূম পুলিশ। এই ভাবে পুলিশ নির্যাতিতার উপরে তাদের পুরনো আক্রোশ মিটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। এ বার ওই ঘটনায় জেলা পুলিশের ভূমিকাকে সমর্থন করে বিতর্ক আরও বাড়ালেন মমতা।

মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্যের পরে বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘সাত্তোর মামলায় যাতে নির্যাতিতা, অসহায় ওই মহিলা হাইকোর্টে হাজির হতে না পারেন, তার জন্যই তাঁকে এই ভাবে জেলে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের নজরদারির মধ্যে থেকে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করলেন, হুমকি দিলেন? কোলে একটা বাচ্চা নিয়ে এক জন মহিলা পুলিশের ঘেরাটোপের মধ্যে বসে অপরাধ করে গেলেন?’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘স্বাধীনতার পরে বাংলায় এই প্রথম এক জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পুলিশ দফতরের দায়িত্বে। তাঁরই আমলে এক জন গৃহবধূকে জেলখানায় কাটাতে হচ্ছে! তাঁর অপরাধ একটাই যে, পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে প্রতিবাদ করেছিলেন।’’ সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বারেবারেই অপরাধীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এ বারও দাঁড়ালেন! বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর কাছে মহিলা, শিশুসন্তানের মা, সংখ্যালঘু— এ সব কোনও কিছুই বিবেচ্য নয়!’’

বস্তুত বিজেপি-র রূপা যে প্রশ্ন তুলেছেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও। বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকের পরে এ দিন সাত্তোর-কাণ্ড নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে বলেন, ‘‘আমার এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। আইন আইনের পথে চলবে। আমি নিজে একটা পার্টি করি বলে আইনটাকে হাতে তুলে নিতে পারি না! আমার পার্টির কেউ হলেও আমি তার নিন্দা করব। আমি ভগবান নই যে, আমি যা ইচ্ছে তা-ই করব, আর যা ইচ্ছে তা-ই বলব!’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ওই মহিলা ২৪ ঘণ্টা পুলিশি ঘেরাটোপে থাকলেও বিস্ফোরক আইনে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে আনা হয়েছে। যে ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে, সেটা এমনকী পিংলা বিস্ফোরণেও দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, ‘‘এত কিছু বলতে পারব না আপনার কাছে। নিশ্চয়ই কিছু আছে, না হলে পুলিশ এমনি এমনি করবে সব?’’ কিন্তু তিনি তো ২৪ ঘণ্টা পুলিশি পাহারাতেই আছেন? মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন ‘‘তাতে কী হয়েছে? পুলিশ গিয়ে কি তাঁর ঘরের মধ্যে গিয়ে বসে থাকছে?’’ বাড়ির কাছেই তো পুলিশের ক্যাম্প? মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, ‘‘বাড়িতে ক্যাম্প আছে তো কী হয়েছে? তাঁর আত্মীয়স্বজন কোথায় ঢুকছে না ঢুকছে, পুলিশ দেখে বসে থাকবে? পুলিশ তাঁর নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আছে।’’ পুলিশ তো ভিডিও রেকর্ডিং করে? মুখ্যমন্ত্রীর সাফ মন্তব্য, ‘‘এ সব বাজে কথা বলবেন না! ডোন্ট মিসলিড!’’

যে ঘটনার জেরে ওই মহিলার গ্রেফতারি, তা নিয়ে বিশেষ কিছু বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার সকালে তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল অফিসে বেশ কিছু বোমা মিলেছিল। বিকেল পর্যন্ত পুলিশ তা উদ্ধার না করায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের পথ অবরোধে সামিল হয়েছিলেন ওই নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবার। এর পরেই একাধিক জামিন-অযোগ্য ধারায় বিজেপি সমর্থক পরিবারের ওই বধূ, তাঁর স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করে পাড়ুই থানা। পুলিশকে লক্ষ্য করে তিনি বোমা ছুড়েছিলেন বলে অভিযোগ। রবিবার সিউড়ি আদালত ধৃতদের জেল হাজতের নির্দেশ দেয়। শাসক দলের কার্যালয়ে বোমা মেলার ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতেই পুলিশ ওই মহিলাকে গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বধূ পুলিশ-প্রহরায় থাকা সত্ত্বেও কী করে তাঁর পক্ষে পুলিশের দিকে বোমা ছোড়া সম্ভব, প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। কিন্তু এত সবের পরেও মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের পাশে দাঁড়ানোয় নির্যাতিতার আত্মীয়-পরিজনদের আশঙ্কা, হয়তো তদন্তটাই ধামাচাপা পড়ে যাবে। নির্যাতিতার শ্বশুর বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগে বৌমাকে পুলিশ ফাঁসিয়েছে। ঘটনার বিচার চলছে। তার আগেই মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষায় পুলিশের দাঁড়ালেন, তাতে যেন বৌমাকেই অপরাধী বানানো হল! মুখ্যমন্ত্রীর এ কেমন বিচার?’’

mamata supports police sattor wife tortured wife mamata sattor wife blamed abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy