ভিন্ রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার ঘটনাকে ঘিরে তপ্ত রাজনৈতিক আবহ। বাংলাভাষী মানুষের নিগ্রহের জেরে সরাসরি ‘ভাষা-আন্দোলনে’র ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার দুর্গা পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে পুজোর সঙ্গে সম্পৃক্ত বাঙালি আবেগকে ফের সামনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, বাঙালি অস্মিতার রাজনীতি মাথায় রেখে পুজো নিয়ে বিজেপির প্রচারের জবাব দিয়েছেন মমতা। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘কেউ কেউ বলেন, মমতা তো দুর্গা পুজো করতে দেন না! সরস্বতী পুজো করতে দেন না! আরে, আমাদের এখানে সরস্বতী পুজো ঘরে ঘরে হয়। সকলে জানে। গণেশ পুজোও হয়। সব পুজোই এখানে হয়।’’
নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠকে ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসবে’র সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসুর বক্তব্য ছিল, ‘‘গত বছর দুর্গা পুজোর আগে একটা ঘটনা ঘটেছিল। আমরা সকলে প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ দুর্গা পুজোর আগে বলে দেওয়া হল, পুজো ছোট করে দাও। দুর্গা পুজো কোনও একটা ধর্মীয় উৎসব নয়।’’ তিনি বলেন, বাংলার দুর্গা পুজোর সঙ্গে ৮০ হাজার কোটি টাকার অর্থনীতি জড়িয়ে আছে, সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি মানুষ যুক্ত। শাশ্বতের সংযোজন, ‘‘কেউ কেউ এসে বলেন, বাংলায় নাকি দুর্গা, সরস্বতী পুজো হয় না। কেউ আবার বলে গেলেন, জয় মা ‘দুর্ঘা’! দুর্গা কথাটা আগে বলতে শিখুন! কলকাতার দুর্গা পুজোয় আপনারা আয়কর দফতরের চিঠি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কেন? দুর্গা পুজোকে এ ভাবে ছোট করার চেষ্টা করবেন না।’’
এই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ‘‘আমি একমত।’’ সব উৎসবই বাংলায় হয় বলে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, ‘‘এমন কোনও উৎসব নেই, যা এখানে হয় না। অনেকে আবার আদালতে চলে যান। আরে ভাই, এটা একটা উৎসব। পুজোটা হয় বলে কত শ্রমজীবী মানুষ কাজ পান, সেটা আগে ভাবুন!’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নিজের এলাকায় যোগেশচন্দ্র কলেজে সরস্বতী পুজো আয়োজনের জন্য আদালতে যেতে হয়েছিল। নদিয়ার নগর উখড়ায় আপনার দলের নেতা সরস্বতী পুজো বন্ধ করেছিলেন, আমরা গিয়ে করিয়েছিলাম। এগুলো তো ঘটেছে!’’
বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার প্রতিবাদে এবং ‘বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আমরা ছাড়ব না’, এই স্লোগান তুলে এ দিনই শহরে বৃষ্টির মধ্যে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সামনে থেকে উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি হয়ে কলেজ স্ট্রিটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করেছে কংগ্রেস। সেখানে যোগ দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেছেন, “বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলার দীর্ঘদিনের বাসিন্দাদের বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। আর এই অত্যাচার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এখনও সর্বদল বৈঠক ডাকেননি বা সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেননি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)