সুকান্ত মজুমদারের কর্মসূচি ঘিরে ফের উত্তপ্ত হল পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছিল বিজেপি। শুক্রবার বিজেপির সংঘাত তৈরি হল পুলিশের সঙ্গে। প্রথমে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের মাঝে সুকান্তের বাইক সফরে বাধা দিল পুলিশ। পরে পথ ছাড়লেও সুকান্ত ফের বাধা পেলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবেশীর বাড়ি যাওয়ার সময়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের অন্যতম রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়়ি যেতে চেয়েছিলেন সুকান্ত। প্রথমে পুলিশ পথ আটকায়। তার পরে তুলে নিয়ে যায় লালবাজারে। সুকান্তের সঙ্গেই রাস্তা থেকে আটক হন রজতশুভ্রও।
মুখ্যমন্ত্রীর খাসতালুক ভবানীপুরে এবং তার আশেপাশেই শুক্রবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্তের একের পর এক কর্মসূচি ছিল। যাবতীয় উত্তেজনাও তৈরি হল সেই এলাকাতেই। প্রথমে সুকান্ত যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়িতে। সেখানে শ্যামাপ্রসাদের মূর্তিতে মাল্যদানের পরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাড়ির উদ্দেশে সুকান্ত রওনা দেন। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদের বাড়ির সামনে থেকে বাইকে চড়ে তিনি এলগিন রোডের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করায় প্রথমেই পুলিশ তাঁর রাস্তা আটকায়। সুকান্তের সঙ্গে পুলিশকর্মীদের বচসা শুরু হয়। বিজেপি কর্মীরা ছুটে এসে পুলিশি বাধা সরানোর চেষ্টা করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত সুকান্ত এবং অন্য বিজেপি কর্মীরা বাইক নিয়েই নেতাজি ভবনের দিকে চলে যান।

লালবাজারে সুকান্ত মজুমদার, রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আটক হওয়া বিজেপি নেতাকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত।
নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদানের পরে রজতশুভ্রের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন সুকান্ত। হরিশ মুখার্জি রোডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির ঠিক পাশের বাড়িটিই রজতশুভ্রের। কিন্তু সে বাড়িতে সুকান্ত আর পৌঁছোতে পারেননি। পূর্ণ সিনেমার কাছে ফের পুলিশ তাঁর পথ আটকায়। সুকান্ত কারণ জানতে চান। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকেরা কোনও স্পষ্ট কারণ জানাতে পারেননি বলে সুকান্তের অভিযোগ। কিছু ক্ষণ পরে সুকান্তকে জানানো হয়, রজতশুভ্র বাড়িতে নেই। পুলিশের দেওয়া এই তথ্য খণ্ডন করতে রজতশুভ্রের বাড়িতে বসে তাঁকে পাশে নিয়েই ভিডিয়ো রেকর্ড করে সুকান্তকে পাঠান বিজেপি নেতা সৌরভ শিকদার। তার পরেও পুলিশ সুকান্তকে এগোতে দেয়নি। ফলে রজতশুভ্র নিজেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে হেঁটে হেঁটে পূর্ণ সিনেমার কাছে যান। সুকান্তের সঙ্গে রাস্তাতেই তাঁর দেখা হয়। সুকান্তকে তিনি বলেন, ‘‘আমার বাড়ি যাওয়ার পথে আপনি এ রকম পুলিশি হেনস্থার মুখে পড়েছেন জেনে আমি আর বাড়িতে বসে থাকতে পারলাম না। আমার অশীতিপর মা-ও সব দেখে আতঙ্কিত। তাই আমি নিজেই চলে এলাম আপনাকে নিয়ে যেতে।’’
আরও পড়ুন:
সুকান্ত বলেন, ‘‘চিকিৎসক হিসাবে রজতশুভ্রবাবু ৩০ বছর ইংল্যান্ডে কাজ করছেন। সে দেশে কেলগ কলেজে যখন মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দিতে গিয়েছিলেন, তখন রজতশুভ্রবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে কিছু প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছিলেন। ফলে এখন তিনি কলকাতায় নিজের বাড়িতে আসার পরে তাঁকে নানা রকম ভয় দেখানো হচ্ছে।’’ সুকান্তের কথায়, ‘‘ডাক্তাররূপী কিছু গুন্ডা কয়েক দিন ধরে মেডিক্যাল কাউন্সিলের নাম করে, আরও নানা কথা বলে, রজতশুভ্রবাবুকে ভয় দেখাচ্ছেন। সে কথা জেনে আমি আজ ওঁর বাড়ি গিয়ে দেখা করার কথা ভেবেছিলাম।’’ রাস্তায় দাঁড়়িয়েই সুকান্তকে ফের রজতশুভ্র বাড়িতে চায়ের আমন্ত্রণ জানান। গাড়ি ছেড়ে দিয়ে সুকান্ত হেঁটেই তাঁর বাড়ির দিকে এগোতে শুরু করেন। কিন্তু কয়েক পা এগোতেই পুলিশ সুকান্তকে আটক করে। বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। সে সবের মাঝেই বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে পুলিশ গাড়িতে তোলে। রজতশুভ্রকেও তোলা হয় একই গাড়িতে। কয়েক জন বিজেপি কর্মী সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের দ্রুত সরিয়ে গাড়িটিকে লালবাজারের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির দুই সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ এবং অনুপম ভট্টাচার্য-সহ বেশ কিছু বিজেপি কর্মীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়। তাঁদেরও লালবাজারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বজবজে আক্রান্ত দলীয় কর্মীকে দেখতে গিয়ে হেনস্থার মুখে পড়েছিলেন সুকান্ত। তাঁকে ঘেরাও করে ‘চোর’ স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। তাঁর দিকে ছোড়া হয়েছিল চপ্পল। অশ্রাব্য গালিগালাজও করা হয়েছিল বলে বিজেপির অভিযোগ। সুকান্ত দাবি করেছিলেন, তৃণমূলের স্থানীয় নেতা জাহাঙ্গির খানের দলবল তাঁকে ঘিরে ‘অসভ্যতা’ করেছে। শুক্রবার সুকান্ত বাধা পেলেন পুলিশের কাছ থেকে। পর পর দু’দিন রাজ্য সভাপতিকে এ ভাবে বাধার মুখে পড়তে হওয়ায় শুক্রবার এবং শনিবার রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিজেপি। প্রতিটি জেলা সদরে বিক্ষোভ এবং পথ অবরোধ করা হবে বলে বিজেপি জানিয়েছে।