Advertisement
E-Paper

ধাক্কাটা পায়ের উপর দিয়ে গেল, এটাই রক্ষে

কিন্তু আমারও তো পঞ্চাশের বেশি বয়স! সহ্যের একটা সীমা আছে। তখন সিঁড়িতে লুটিয়ে আরও কত জন। আমার পায়ে টান দিয়েই তাঁরা সমানে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। হঠাৎ বাঁ পায়ে একটা হ্যাঁচকা টান। মট করে একটা শব্দ! তারপরই পা-টা অসাড় হয়ে গেল।

অচিন্ত্যকুমার হড় (সাঁতরাগাছি স্টেশনে আহত ট্রেনচালক)

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:২৯

আমার পিছনে সিঁড়ির উপর থেকে ভিড়টা আছড়ে পড়ছে গায়ে। টাল সামলাতে শক্ত করে রেলিংটা আঁকড়ে বাঁচতে চাইছি আমি। হাত ছুটে গেলে শুধু আমি নয়, আমার গায়ে লেপ্টে থাকা তিন বছরের একরত্তি একটা মেয়ে বা তার মা-ও জনস্রোতের নীচে পড়ে গিয়ে পিষে যাবেন! রেলিংটা ধরে রাখা ছাড়া আমার তখন কোনও গতি নেই।

থাকি দক্ষিণ বাকসাড়ায়। সাঁতরাগাছি থেকে হাওড়ায় যাওয়ার কথা ছিল। হাওড়া থেকে রোজ সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে যে পাঁশকুড়া লোকাল ছাড়ে আমি তার চালক। পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে হাওড়ার ডাউন ট্রেন ধরতে অত এব ভিড় ঠেলে আমাকে ফুটব্রিজে উঠতেই হল। ভিড় তো প্ল্যাটফর্মেও ছিল। কিন্তু ভিড়ের বহরটা তখনও আমি বুঝতে পারিনি। ফুটব্রিজ থেকে নামার সিঁড়ির মাঝপথ অবধি পৌঁছতেই টের পেলাম সামনে পিছনে মানুষের চাপে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি। রেলিংটা না-ধরলে আর দেখতে হবে না! তাই সেটা ধরেই পায়ের নীচের জমিটা ধরে রাখার চেষ্টা করছিলাম।

কিন্তু আমারও তো পঞ্চাশের বেশি বয়স! সহ্যের একটা সীমা আছে। তখন সিঁড়িতে লুটিয়ে আরও কত জন। আমার পায়ে টান দিয়েই তাঁরা সমানে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। হঠাৎ বাঁ পায়ে একটা হ্যাঁচকা টান। মট করে একটা শব্দ! তারপরই পা-টা অসাড় হয়ে গেল।

তখনই আমি বুঝে গিেয়ছি, পা-টা ভেঙেছে। আর এখনও বাড়িতে শুয়ে শুয়ে সাঁতরাগাছি স্টেশনের সেই চেহারাটা ভেবে শিউরে উঠছি। এক নম্বর প্ল্যাটফর্মটাই ভিড়ে থিকথিক করছিল। আর ওই একফালি সরু ফুটব্রিজে উঠে দেখি, এক সঙ্গে তিনটে প্ল্যাটফর্মের ভিড়। এক এবং দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী এবং তিন নম্বরের লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা তখন ফুটব্রিজের মাথায় মিশে গিয়েছে। সব মিলিয়ে যেন জনসমুদ্র। আমি বুঝলাম এ ভাবে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়া সম্ভব নয়। পিছনেও যাওয়া যাবে না। তাই দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের সিঁড়িতে নামতে শুরু করলাম।

সিঁড়ির অর্ধেকের বেশি নামতে পারিনি। তখন পিলপিল করে লোক উল্টো দিক থেকে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে। আমার পিছনে দুদ্দাড় করে নামছেন লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা। দেখলাম, এই অবস্থায় টাল সামলে সিঁড়ি দিয়ে নামা অসম্ভব। আমার পাশেই একজনকে মুখ থুবড়ে পড়তে দেখলাম। আর ঝুঁকি নিইনি। প্রাণে বাঁচতেই রেলিংটা আঁকড়ে ধরি।

চারপাশে মহিলা, শিশুদের চিৎকার, কান্না! সিঁড়িতে পড়ে যাওয়া ক’জনকে মাড়িয়েই উপরে ওঠার চেষ্টাও করছেন তখন কেউ কেউ। আমি প্রাণপণে বাঁচার চেষ্টা করছিলাম। আমার সামনে থাকা শিশুটি ও তার মাকেও আগলে রাখার চেষ্টা করি। জানি না, কী করে ভিড় কমা অবধি রেলিংটা আঁকড়ে থাকতে পারলাম। পরে প্ল্যাটফর্মে নেমে অবশ্য বেহুঁশ হয়ে পড়ি। পা দু’টো তখন রক্তাক্ত। এলাকার টোটো চালকেরা আমায় হাসপাতালে নিয়ে যান। ভাবছি, চোটটা পায়ের উপর দিয়ে গিয়েছে, সেটাই যা রক্ষে। রেলিংটা হাতের কাছে না-থাকলে আমার তো বাঁচারই কথা ছিল না।

Death Injury Stampede Santragachi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy