দলীয় কর্মিসভায় মানস ভুঁইয়া। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
আসন্ন বিধানসভা ভোটে দলের একা লড়াইয়ের পক্ষেই এত দিন সওয়াল করছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। কিন্তু শনিবার নিজের খাসতালুক সবংয়ে একটি কর্মিসভায় মানসবাবুর বক্তব্যে বাম-কংগ্রেস জোটে তাঁর সমর্থনের ইঙ্গিতই পাওয়া গেল। সবং ব্লক কংগ্রেস আয়োজিত ওই সভায় মানসবাবু বলেন, ‘‘এক সময় বামেরা আমাদের বুর্জোয়া, ফ্যাসিস্ত বলে দাবি করত। ৩৭ বছর পরে এই প্রথম সিপিএম বলছে, কংগ্রেস জাতীয়তাবাদী দল। কংগ্রেসের হাত ধরতে হবে। আসলে কংগ্রেস ছাড়া ওদের গতি নেই। এতে আমি আনন্দিত, গর্ব বোধ করছি।’’
সদ্য সমাপ্ত প্লেনামের অবসরে সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় তাঁরা রাজি। এমনকী, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কট্টরপন্থী প্রকাশ কারাটও কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা খারিজ করে দেননি। সেই প্রসঙ্গ টেনে এ দিন মানসবাবু বলেন, ‘‘সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটদের বোধোদয় হয়েছে। ওঁরা কংগ্রেসের মূল্যায়ন করছেন। বলছেন, রাজ্য কমিটি জোটের সিদ্ধান্ত নিলে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনুমোদন দেব।’’ এই অবস্থায় পরিস্থিতি বিচার করেই কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জোটের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মানসবাবুর আশা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা জাতীয় দল। তাই নীতির প্রশ্নে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী যা নির্দেশ দেবেন, মেনে চলব।’’ বর্তমান পরিস্থিতিতে বামেরাই তাঁদের স্বাভাবিক মিত্র বলে মনে করছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের একটা বড় অংশ। সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান বামেদের সঙ্গে জোট করার আর্জি নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে দরবার করেছেন। তখন অবশ্য মানসবাবু বিষয়টিকে ভাল ভাবে নেননি। ঘনিষ্ঠ মহলে এ ব্যাপারে তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও সম্প্রতি বর্ধমানে এক সভায় বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে কোনও বন্ধুত্বে যাব না।’’ এ দিন মানসবাবুও বলেন, ‘‘অত্যাচারের নিরিখে বর্তমান সরকার গত সাড়ে চার বছরে বাম আমলকে ছাপিয়ে গিয়েছে।’’ এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার বার্তা দেন তিনি। সেই সঙ্গে জানান, পক্ষপাতদুষ্ট ডিএম, এসপি, এসডিও, বিডিও-র নামে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাবেন।
বাম-কংগ্রেস জোটের সম্ভাবনা নিয়ে মানসবাবুর মত পরিবর্তন সম্পর্কে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘আমরা স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্যের পক্ষে। মানসবাবু বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন। এতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার হবে।’’ তবে সিপিএমের অন্দরের খবর, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্নে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর শঙ্কা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে আরও আলোচনার পক্ষপাতী সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব।
বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, ‘‘বাম-কংগ্রেস, নাকি তৃণমূল-কংগ্রেসের মিলন হবে, সেটা পরে বোঝা যাবে। ওরা নিজেদের মধ্যে ধরাধরি করুক। আমরা মানুষকে ধরব।’’ বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্যের সহ পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের তির্যক মন্তব্য, ‘‘বাম এবং কংগ্রেস দুর্বল বলেই পরস্পরের হাত ধরতে চাইছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy