Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Manik Bhattacharya

তিনটি বাড়িই তালাবন্ধ, খোঁজ মিলছে না জেলবন্দি তৃণমূল বিধায়ক মানিকের স্ত্রী, পুত্রের

মানিকের সম্পর্কে আরও সবিস্তার তথ্য পেতে তাঁর ছেলে ও স্ত্রীকে তাঁরা হন্যে হয়ে খুঁজছেন বলে ইডির তদন্তকারীদের দাবি। ফ্ল্যাট ও বাড়িতে গিয়ে তাঁরা দেখছেন, দুই ক্ষেত্রেই তালা মারা।

মানিক ভট্টাচার্য।

মানিক ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।

  শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২২ ০৭:০৭
Share: Save:

একদা তাঁর ‘অন্তর্ধান’ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ বার মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী-পুত্রও উধাও। তাঁদের যাদবপুরের দু’টি বাড়িতে তালা। নাকাশিপাড়ার বাড়িতেও মা-ছেলের কোনও খোঁজ নেই। তবে অন্তর্ধান পর্বে মানিক সংবাদমাধ্যমে দাবি করতেন, তিনি তাঁর যাদবপুরের বাড়িতেই আছেন। তাঁর স্ত্রী-পুত্রের ক্ষেত্রে এমন কোনও খবরও নেই।

প্রাথমিক টেট-দুর্নীতির মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি তথা তৃণমূলের বিধায়ক মানিক এখন আছেন জেলে। মানিকের সম্পর্কে আরও সবিস্তার তথ্য পেতে তাঁর ছেলে ও স্ত্রীকে তাঁরা হন্যে হয়ে খুঁজছেন বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তকারীদের দাবি। ফ্ল্যাট ও বাড়িতে গিয়ে তাঁরা দেখছেন, দুই ক্ষেত্রেই তালা মারা।

মানিক-পুত্র সৌভিক তদন্তে অসহযোগিতা করছেন বলে ইতিমধ্যে আদালতে নালিশ করেছেন তদন্তকারী অফিসার। একাধিক বার তলব করা সত্ত্বেও সৌভিক ইডি-র মুখোমুখি হচ্ছেন না বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, মানিকের স্ত্রী শতরূপাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনিও তদন্তে সহযোগিতা করছেন না বলে ইডি-র অভিযোগ।

ইডি সূত্রের দাবি, মানিকের ছেলের দু’টি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের একটিতে দু’কোটি ৬৪ লক্ষ এবং অন্যটিতে দু’কোটি ৪৭ লক্ষ টাকার হদিস পাওয়া গিয়েছে। বেসরকারি বিএড-ডিএলএড কলেজ এবং তাদের সংগঠন অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি ওই টাকা সৌভিকের দু’টি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। কোন চুক্তির ভিত্তিতে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল, সেই বিষয়ে সৌভিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্তকারীরা।

ইডি জানিয়েছে, সম্প্রতি মানিক-ঘনিষ্ঠ ওই কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডল এবং তাঁর দুই হিসাবরক্ষককে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু নতুন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সৌভিক খাদ্য দফতরের একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হলেও বিদেশি গাড়ি (মার্সিডিজ়) ব্যবহার করতেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

ইডি-র দাবি, মানিক-পত্নী শতরূপার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এখনও পর্যন্ত তিন কোটি টাকার হদিস পাওয়া গিয়েছে। শুধু ছেলে বা স্ত্রী নয়, মানিকের মেয়ে ও জামাই এবং মেয়ের শ্বশুরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও তাঁদের আতশ কাচের নীচে। ইডি-র দাবি, মানিকের পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়দের সঙ্গে যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের হদিস পাওয়া গিয়েছে। সেই কারণেই সৌভিক ও শতরূপাকে জিজ্ঞাসাবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তদন্তকারীদের দাবি, ওই দু’জনকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সব ফোনের সুইচড অফ। কয়েক দিন যাদবপুরে দু’টি বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, মানিকের বাড়ি তালাবন্ধ। তদন্তকারীরা জানান, আরও কয়েক দিন খোঁজখবর করা হবে। তার পরে আইনি পদক্ষেপ করতে চান তাঁরা। পলাতক বলে জানিয়ে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করার জন্য আদালতে পরোয়ানা জারির আবেদন করতে চাইছে ইডি।

এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতারের পরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডি-র হেফাজতে থাকাকালীন ২৮ জুলাই তাঁর মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পরে মানিকও বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ। ওই সময় আদালতে সিবিআই মানিকের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারির আবেদন করে। পরে মানিক নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং ইডি-র তদন্তকারীদের মুখোমুখি হন।‌ সম্প্রতি তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

আনন্দবাজারের পক্ষেও শতরূপা ও সৌভিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে মানিকের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত বলেন, “এটি সম্পূর্ণ তদন্তের বিষয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE