Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩

মামলা তুলে নাও, আবার হুমকিতে সন্ত্রস্ত জরিনারা

তিন ভাই খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়কের নামই চার্জশিট থেকে বাদ দিয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ। তার পরেই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন লাভপুরের নিহত তিন সিপিএম সমর্থক ভাইয়ের মা জরিনা বিবি। এ বার সেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের অনুগামীরা চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠল। শনিবার বিকেলে মনিরুলের অনুগামী যাদব শেখ-সহ কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক নিহতদের ভাই সানোয়ার শেখের লাভপুরের বাড়ির সামনে এসে প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

জরিনার কথা শুনছেন বৃন্দা। রবিবার।  নিজস্ব চিত্র

জরিনার কথা শুনছেন বৃন্দা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

তিন ভাই খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়কের নামই চার্জশিট থেকে বাদ দিয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ। তার পরেই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন লাভপুরের নিহত তিন সিপিএম সমর্থক ভাইয়ের মা জরিনা বিবি। এ বার সেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের অনুগামীরা চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠল।

Advertisement

শনিবার বিকেলে মনিরুলের অনুগামী যাদব শেখ-সহ কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক নিহতদের ভাই সানোয়ার শেখের লাভপুরের বাড়ির সামনে এসে প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, বাড়ির পাহারায় থাকা সিভিক পুলিশকর্মীদেরও বের করে দেওয়া হয়। এই যাদব ওই খুনের ঘটনাতেও অন্যতম অভিযুক্ত। রবিবার সকালে জরিনা বিবিরা জেলা সদর সিউড়িতে গিয়ে সরাসরি এসপি-র কাছেই অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু, দফতরে এসপি ছিলেন না। জুন মাসেও জরিনাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পরে ভয়ে দু’দিন তাঁরা থানায় গিয়ে নালিশ জানাতে পারেননি। পরে জরিনার নাতি যাদব শেখ-সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। সানোয়ার বলেন, “ওই ঘটনায় আজও কেউ ধরা পড়েনি। লাভপুর থানার দাবি, প্রত্যেকেই পলাতক। অথচ ওরাই ফের হুমকি দিল! তাই এ বার আর ওই থানায় অভিযোগ জানিয়ে সময় নষ্ট করতে চাইনি।”

বীরভূমের এসপি অলোক রাজোরিয়া অবশ্য বলেন, “পরিবারটিকে নিরাপত্তা দিতে বাড়িতে রাজ্য পুলিশের ক্যাম্প গড়া হয়েছে। এর পরেও যদি হুমকি দেওয়ার কোনও ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে তাঁরা তো থানাতেই যেতে পারতেন।”

যাদবের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মনিরুল ফোনে বলেন, “জরিনা যা বলছে, তা আপনারাই শুনুন। আর যত পারুন লিখুন!”

Advertisement

দিন কুড়ি আগে সানোয়ারের বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেক দূরে একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প হয়েছে। সেখানে দু’জন রাজ্য পুলিশের কর্মী এবং কয়েক জন সিভিক পুলিশকর্মী থাকেন। জরিনা বিবি বলেন, “আদালত নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু, বাড়িতে শুধু অল্প সময়ের জন্য সিভিক পুলিশ থাকে। সকালের দিকে আধ ঘণ্টা আর বিকেল ৪টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। তার পর ফিরে যায়।” তাঁদের অভিযোগ, শনিবার বিকেলে যাদব শেখের নেতৃত্বে মনিরুলের অনুগামীরা এসে মামলা তোলার হুমকি দেয়। না মানলে ছেলেদের মতোই দশা হবে বলে শাসানো হয়।

এ দিন এসপি অফিস থেকে বেরিয়ে জরিনা বিবিরা সিউড়িতে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির একটি কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাটের সঙ্গে দেখা করেন। বৃন্দা দীর্ঘক্ষণ জরিনার সঙ্গে কথা বলেন। পরে বৃন্দা বলেন, “এখানে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে। একটি পরিবারের তিন সন্তানকে হত্যা করা হল। শাসক দলের যে বিধায়ক নিজে ঘটনায় জড়িত, তাঁকে জেড ক্যাটাগরি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। অথচ সন্তানের মা বা ঘটনার যাঁরা সাক্ষী, তাঁদেরই হুমকি দেওয়া হচ্ছে!”

স্থানীয় থানার উপরে আস্থা নেই সানোয়ার শেখদের। তাঁদের কথায়, “সরাসরি পুলিশ সুপারকেই সব কথা জানাবো। দলীয় (সিপিএম) নেতৃত্ব এসপি-কে ফোন করেছিলেন। মঙ্গলবার দেখা করতে বলেছেন। ওই দিনই অভিযোগ জমা দেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.