Advertisement
E-Paper

সিঙ্গুরের অন্যত্র শিল্পের দাবি ‘অনিচ্ছুক’দের

‘অশান্তির বন্ধ্যা জমি’তে নয়। সিঙ্গুরেরই অন্যত্র খাসজমিতে শিল্প চাইছে সিঙ্গুর।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০১:৫৪
গোপীনাথ দাস, মধুসূদন বাড়ুই ও নাড়ুগোপাল দাস। ছবি: দীপঙ্কর দে

গোপীনাথ দাস, মধুসূদন বাড়ুই ও নাড়ুগোপাল দাস। ছবি: দীপঙ্কর দে

সুর বদলালেন সিঙ্গুরের এক সময়ের ‘অনিচ্ছুক’রাও। শিল্পের দাবি এখন তাঁদের অনেকের মুখে!

তবে, সেই ‘অশান্তির বন্ধ্যা জমি’তে নয়। সিঙ্গুরেরই অন্যত্র খাসজমিতে শিল্প চাইছেন তাঁরা। শিল্প গড়তে তাঁরা এখন এতটাই মরিয়া যে ওই জমিতে হলে ফের দলাদলি, অশান্তিতে তা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন। তাই প্রয়োজনে নিজেদের জমি দিতেও তাঁরা রাজি। শিল্প হলে কর্মসংস্থান হবে, এখন মানছেন তাঁরাও।

খাসেরভেড়ির নাড়ুগোপাল দাসের কথাই ধরা যাক। জমি-আন্দোলন পর্বে তিনি তৃণমূলের অনেক মিছিলে শামিল হয়েছিলেন। টাটাদের প্রকল্পে তাঁর তিন বিঘা জমি গিয়েছিল। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এবং তৃণমূল সরকারের তৎপরতায় জমি ফিরে পেয়ে এখনও সে ভাবে চাষ শুরু করতে পারেননি। বাড়িতে দুই স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রী। সামান্য জমিতে চাষ করে সংসার চালান। এখন তিনি বলছেন, ‘‘শিল্পের প্রয়োজন বুঝছি। তবে ওই জমিতে যেন না-হয়। অনেক অশান্তি হয়েছে ওখানে। ওই বন্ধ্যা জমিতে শিল্প করে কী লাভ? সব দলের নেতানেত্রীরা বসে ঠিক করুন। নতুন জমিতে শিল্প হোক।’’

সিঙ্গুর আন্দোলনে পা মিলিয়ে ছিলেন ওই এলাকারই মধুসূদন বারুই-ও। টাটা প্রকল্পে থাকা এক বিঘে পাঁচ কাঠা জমি ফেরত পেয়েছেন। তিনিও বলেন, ‘‘ওই জমিতে এখন বেনাবন। চাষিরা যাচ্ছেন না। ওই জমি চাষযোগ্য করে দেওয়া হোক। শিল্পের জন্য সিঙ্গুরে অন্য জমি দেখা হোক। তা হলেই কোনও সমস্যা হবে না। প্রয়োজনে আমি জমি দিতে রাজি।’’

২০০৬ সালে বাম সরকার টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য সিঙ্গুরের প্রায় হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল। সেই অধিগ্রহণে আপত্তি তুলে এবং চাষের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে যে সব চাষি সরকারি ক্ষতিপূরণের চেক নেননি, তাঁরাই ‘অনিচ্ছুক’ হিসেবে পরিচিত হন। সেই সংখ্যাটা ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার। নাড়ুগোপাল, মধুসূদনরা ছিলেন সেই দলেই। তাঁদের বেশিরভাগই শামিল হন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনে। সেই আন্দোলন মমতাকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে পৌঁছে দেয়। মমতা চাষিদের জমি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জমি নিয়ে মামলা হয়েছিল। ২০১৬-র মাঝামাঝি সুপ্রিম কোর্ট জমি অধিগ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করে তা ফেরানোর নির্দেশ দেয়। মুখ্যমন্ত্রী ওই জমিকে ‘চাষযোগ্য’ করে ফেরাতে উদ্যোগী হন। মাঠে নামে প্রশাসন। চাষিরা জমি ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু বেশিরভাগই চাষ শুরু করতে পারেননি।

যে সিঙ্গুরের জন্য মমতা মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, সেই সিঙ্গুর কিন্তু এ বার লোকসভা ভোটে তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছে। হেরে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগ। জিতে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় সিঙ্গুরে ফের শিল্প আনার কথা বলেছেন। শুক্রবারই সিঙ্গুরে শিল্পের দাবিতে মিছিল করেছে বিজেপি। বেনাবন আর উলুখাগড়ায় ভরা ওই জমিতেই শিল্পের দাবি ওঠে।

নাড়ুগোপাল, মধুসূদন বা খাসেরভেড়ির গোপীনাথ দাস সেই মিছিলে পা মেলাননি। কিন্তু শিল্পের দাবির সঙ্গে এখন তাঁরাও সহমত। গোপীনাথের কথায়, ‘‘ওই জমিতে শিল্প হলে ফের অশান্তি হবে। অন্য কোনও জমিতে হোক। আমরা সাহায্য করব। সব দলের লোকেরা আসুন। খেয়োখেয়ি করে কী লাভ? আমাদের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান এখন আমাদের ভাবাচ্ছে।’’

গ্রামবাসীর এই মনোভাবের কথা জানতে পেরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘তখন গ্রামবাসীদের ভুল বোঝানো হয়েছিল। আমরা যে ঠিক পথেই হেঁটেছিলাম, দেরিতে হলেও মানুষ বুঝছেন।’’ সিঙ্গুরে পরাজয়ের কারণ খুঁজছে তৃণমূল। সদ্য পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগ গ্রামবাসীদের শিল্পের দাবির কথা শুনে অবশ্য অবাক হননি। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে সবাই ভাবেন। সিঙ্গুরের অন্যত্র শিল্প করা যাবে না, এ কথা তৃণমূল কখনও বলেনি। আমাদের আন্দোলন ছিল অবৈধ ভাবে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে। আমরাও চাই সিঙ্গুরে শিল্প আসুক।’’

Singur Industry
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy