Advertisement
০৩ মে ২০২৪

মুক্তি, তবু নথির গেরোয় শিবিরে বন্দি বহু বিদেশি

তাঁরা বন্দি। অথচ বন্দি নন! তাঁদের জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও স্থায়ী বন্দোবস্ত হয়নি! সেই জন্য আপাতত অস্থায়ী বন্দোবস্তেই থাকতে হবে রাজ্যের ‘জানখালাসদের’। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য ও  প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৬
Share: Save:

তাঁরা বন্দি। অথচ বন্দি নন! তাঁদের জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও স্থায়ী বন্দোবস্ত হয়নি! সেই জন্য আপাতত অস্থায়ী বন্দোবস্তেই থাকতে হবে রাজ্যের ‘জানখালাসদের’।

‘জানখালাস’ হলেন সেই সব বিদেশি বন্দি, মামলা থেকে খালাস পাওয়া বা সাজা শেষ হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরি না-হওয়ায় যাঁরা দেশে ফিরতে পারছেন না। তাঁদের জন্য রাজ্যে এখনও পাকাপাকি কোনও ‘ডিটেনশন সেন্টার’ বা বন্দি শিবির তৈরি হয়নি। দমদম সেন্ট্রাল জেলে একটি অস্থায়ী শিবিরের ব্যবস্থা হয়েছে। বুধবার থেকে সেই শিবিরে রয়েছেন ১৫২ জন ‘জানখালাস’।

দমদম জেলের একটি ভবনের একতলার ডান দিকের একাংশ খালি করে চালু হয়েছে ‘ডিটেনশন সেন্টার’। সেখানে কমবেশি ৪৫০ জন জানখালাসের থাকার ব্যবস্থা আছে বলে কারা দফতর সূত্রের খবর। জানখালাসদের মধ্যে বাংলাদেশিদের নিয়েই বেশি সমস্যায় পড়তে হয় জেল-কর্তৃপক্ষকে। এক কারাকর্তা বলেন, ‘‘মায়ানমার, নাইজেরিয়া বা জিম্বাবোয়ের বন্দিদের নিয়ে বেশি সমস্যা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে সময়মতো নথিপত্র জমা পড়ে না। তাই সাজা শেষের পরেও তাঁদের বন্দি হিসেবে থেকে যেতে হয়।’’

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, স্থায়ী ‘ডিটেনশন সেন্টার’ তৈরির আগে পর্যন্ত জানখালাসেরা দমদমের অস্থায়ী শিবিরেই থাকবেন। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশ, মায়ানমার ছাড়াও অন্য দেশের নাগরিকেরা রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী নিজেদের দেশে ফেরার বন্দোবস্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁদের বন্দি শিবিরেই থাকতে হবে। কোনও নথি ছাড়া কোনও মুক্ত জায়গায় তাঁদের রাখা যায় না বলেই জেলের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হয়েছে।

কিন্তু তড়িঘড়ি এমন অস্থায়ী শিবিরের ব্যবস্থা করতে হল কেন?

কারা সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে মায়ানমারের জনা কুড়ি নাগরিক এ রাজ্যে এসে ধরা পড়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’টি শিশু এবং দু’জন মহিলাও ছিলেন। বিনা নথিতে এ দেশে ঢোকার অপরাধে সাজা হয় তাঁদের। সেই সাজা শেষ হয়েছে, কিন্তু তাঁদের মুক্তি হয়নি। প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, ওই নাগরিকদের নিজেদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া জটিল বলেই তাঁদের বন্দিদশা কেটেও কাটছে না।

রাজ্যের তরফে গত অক্টোবরে কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রকের কাছে ওই বন্দিদের নথি পাঠানো হয়েছিল বলে কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। মায়ানমার সরকারের নিয়ম অনুযায়ী নিজেদের নাম সে-দেশের ভাষায় লিখতে হয়েছিল সংশ্লিষ্ট বন্দিদের। কারণ, সেই পদ্ধতিতেই মায়ানমার সরকার বুঝবে, ওই বন্দিরা আদৌ তাঁদের দেশের নাগরিক কি না! নিয়ম অনুযায়ী বন্দিদের ছবি এবং আরও কিছু নথি মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছিল রাজ্য। শেষে বন্দিদের মধ্যেই এক জন মুক্তির দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। আদালতের রায় তাঁদের পক্ষেই যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সম্প্রতি রাজ্যের কাছে আবার ওই বন্দিদের সম্পর্কে সবিস্তার নথি চেয়েছে। তা পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্য। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিষয়টি নিয়ে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে দৌত্য শুরু করেছে ভারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prisoners Detention Center Dumdum Central Jail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE