E-Paper

ক্ষোভ নিয়েই নতুন এবং অভিজ্ঞদের তথ‍্য যাচাই

মঙ্গলবার সল্টলেকের করুণাময়ীতে এসএসসির নতুন অফিসের সামনে যাঁরা তথ্য যাচাই করাতে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সুপর্ণার মতোই ২০১৬ সালের চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক। এসএসসির নতুন প্রার্থীদেরও অনেকে তথ্য যাচাই করতে এসেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:২৬
নথি যাচাইয়ের জন্য কোচবিহার থেকে এসেছেন চাকরিপ্রার্থী। সঙ্গী কন্যাও। করুণাময়ীতে।

নথি যাচাইয়ের জন্য কোচবিহার থেকে এসেছেন চাকরিপ্রার্থী। সঙ্গী কন্যাও। করুণাময়ীতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতর থেকে তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এক মাসের সদ্যোজাত শিশুকে কোলে করে বেরিয়ে আসছিলেন একাদশ-দ্বাদশের এক চাকরিপ্রার্থী। পাশে তাঁর স্বামী। সুপর্ণা পাল নামে ওই চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘আমি চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষিকা। এর আগে ২০১৬ সালে নিয়োগে একবার তথ্য যাচাই হয়েছিল। যা বাতিল হল। আবার পরীক্ষা দিলাম। আবার পাশ করলাম। ফের তথ্য যাচাই। এর পরে আবার ইন্টারভিউ পর্ব বাকি। এখনও অনেকটাই অনিশ্চিত। কী হবে জানি না।’’ সুপর্ণা জানান, এ বার যখন পরীক্ষা দিয়েছিলেন তখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি। সন্তানসম্ভবা দশায় চাকরি হারানোর মানসিক যন্ত্রণা নিয়েই পরীক্ষা দিতে হয় তাঁকে।

মঙ্গলবার সল্টলেকের করুণাময়ীতে এসএসসির নতুন অফিসের সামনে যাঁরা তথ্য যাচাই করাতে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সুপর্ণার মতোই ২০১৬ সালের চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক। এসএসসির নতুন প্রার্থীদেরও অনেকে তথ্য যাচাই করতে এসেছিলেন। তথ্য যাচাই করতে এসেও অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা নতুন এসএসসি প্রার্থীদের উপরে ক্ষোভ উগরে দিলেন। আবার নতুনরা অভিজ্ঞদের ১০ নম্বর পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।

যেমন তথ্য যাচাইয়ের জন্য এসেছিলেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ মেহেবুব মণ্ডল। মেহেবুব বলেন, ‘‘অভিজ্ঞদের ১০ নম্বর পাওয়ার জন্য নতুনরা যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তার কোনও ভিত্তি নেই। এই পরীক্ষা হওয়ার আগেই সব নিয়ম লেখা ছিল। একবার কোনও খেলা শুরু হওয়ার পরে নিয়ম পরিবর্তন করা যায় কি? আমরাও আগে বলেছিলাম, নতুনদের সঙ্গে পরীক্ষা দেব না। ওঁদের আর আমাদের আলাদা পরীক্ষা হোক। আমাদের সেই দাবিও গ্রাহ্য হয়নি। আমাদের ১০ নম্বর পাওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। সেই মামলা খারিজ হয়ে গেছে। এখন আর এটা নিয়ে নতুন করে কারও কিছু বলার নেই।’’ আর এক চাকরিহারা যোগ্য প্রার্থী আবিরা দাস বলেন, ‘‘শুধু নতুনরাই নন, আমাদেরও অনেকে ৬০ এ ৬০ পেয়েছে।’’

অন্য দিকে, এক নতুন চাকরিপ্রার্থী সুখেন্দু ঘোষ তথ্য যাচাইতে ঢোকার আগে বলেন, ‘‘২০১৬এর প্যানেল বাতিল হয়ে গিয়েছে। তা হলে সেই বাতিল হওয়া প্যানেলের শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা কী ভাবে বিবেচিত হবে? ওঁরা ইন্টারভিউয়ের আগে ১০ নম্বর পাচ্ছেন আবার ইন্টারভিউয়ের সময়ে স্কুলে কী ভাবে পড়াবেন সেটা দেখানোর সময়েও ওঁরা ১০ নম্বরে এগিয়ে থাকবেন। লিখিত পরীক্ষায় ৬০ এর মধ্যে ৬০ পেয়েও ইন্টারভিউয়ের তালিকায় নাম ওঠেনি এমন নতুন প্রার্থী অনেকে আছেন। ওঁদের আর কী যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে? দেখা গিয়েছে, জেনারেল ক্যাটেগরিতে নতুনরা খুব কম জন ইন্টারভিউয়ে ডাক পেয়েছেন।’’

তবে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থেকে আসা বিশেষভাবে সক্ষম এসএসসির নতুন চাকরিপদ প্রার্থী সনৎ হালদার আবার চাকরিহারা অভিজ্ঞ শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সনৎ বলেন, ‘ওঁরা চাকরি হারিয়েছেন। ওঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। তবে আমরাও অনেক কষ্ট করে এখানে পৌঁছেছি।’’

প্রার্থীরা জানালেন, তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবে হয়েছে। সব নথি খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। চাকরি পদপ্রার্থী মায়েদের সঙ্গে আসা ছোট শিশুদের খাওয়ানোর আলাদা ব্যবস্থা রেখেছিল এসএসসি। এসএসসির এক কর্তা জানান, এ দিন বাংলার শিক্ষক, শিক্ষিকা ৭০৬ জনের মতো তথ্য যাচাই করার কথা ছিল। ছ’জন অনুপস্থিত ছিলেন। আজ, বুধবার ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক পদপ্রার্থীদের তথ্য যাচাই করা হবে।

তথ্য যাচাই হয়ে যাওয়া বাংলা ও ইংরেজি ভাষার প্রার্থীদের আগামী ২৬ নভেম্বর ইন্টারভিউ হবে বলে জানায় এসএসসি। ইন্টারভিউ এসএসসি-র আঞ্চলিক দফতরে। ইন্টারভিউয়ের সবিস্তার সূচি পরে দেওয়া হবে। এই সপ্তাহের শেষে নবম-দশমের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal School Service Commission Scrutiny

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy