নেপালে গণঅভ্যুত্থানের জেরে আশঙ্কার মেঘ পর্যটনে! লাগাতার বিক্ষোভের পরিস্থিতি দেখে পুজোর আগে পড়শি দেশ থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন এ রাজ্যের পর্যটকেরা। পর পর বুকিং বাতিলে রাজ্যের পাশাপাশি নেপালের পর্যটন ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়েছেন। পুজোর ছুটিতে নেপাল বেড়ানোর পরিকল্পনা করে রাখা এ রাজ্যের পর্যটকদের কেউ সরাসরি বুকিং বাতিল করেছেন, কেউ আবার ভ্রমণ সংস্থার অফিসে এসে অন্যত্র ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য তদ্বির করছেন।
সমাজমাধ্যমের উপরে সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শুরু হওয়া যুবসমাজের বিক্ষোভে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে নেপাল। দফায় দফায় বিক্ষোভ-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেখানে। বিক্ষোভে কার্যত বাধ্য হয়েইস্তফা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। মঙ্গলবার দফায় দফায় বিক্ষোভে পড়শি দেশের সংসদ ভবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বাদ যায়নি কাঠমান্ডুর হোটেলও। বিক্ষোভে ইতিমধ্যেই প্রাণ গিয়েছে অনেকের। বুধবার পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও অশান্তির আবহ এখনও রয়েছে। কার্ফু জারি ছিল এ দিনও।
শহরের পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এ রাজ্য থেকে কয়েক হাজার পর্যটক প্রতি বছর নেপালে বেড়াতে যান। মূলত পুজোর ছুটি থেকে পর্যটকদের যাতায়াত বাড়ে। কলকাতা থেকেও বহু পর্যটক যান পড়শি ওই দেশে। এ বছরও বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার মাধ্যমে অনেকেই পুজোর ছুটিতে সেখানে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। কিন্তু নেপালে যুবসমাজের বিক্ষোভ আপাতত সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে।
সপ্তমীর দিন পরিবার নিয়ে নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল হালিশহরের বাসিন্দা অশোক ঘোষাল চৌধুরীর। বিমানের টিকিট থেকে হোটেল, সবই বুক করে রেখেছিলেন। কিন্তু দু’দিনের ঘটনাক্রম দেখে আপাতত সেইপরিকল্পনা বাতিল করেছেন তিনি। বাতিল করে দিয়েছেন বুকিংও। এ দিন অশোক বললেন, ‘‘যে ভাবে একের পর এক জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখছি, তাতে পরিবার নিয়ে কী ভাবে যাব? আমাদের মধ্যে চার জন বয়স্ক রয়েছেন। কেউই রাজি হচ্ছেন না।’’ বুধবার সকালে বুকিং বাতিলকরার জন্য একটি পর্যটন সংস্থারঅফিসে এসেছিলেন সুবীর ঘোষ নামে এক ব্যক্তিও। ১ অক্টোবর পরিবারের চার জন সদস্যকে নিয়ে নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ দিন তিনি বললেন, ‘‘প্রাণের থেকে তো বেড়ানো বড় হতে পারে না। এই অবস্থায় বেড়াতে গিয়ে ভোগান্তি বাড়ানোর কোনও মানে হয় না। ভ্রমণ সংস্থাকে বলেছি, বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।’’
শহরের ভ্রমণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, শুধু পুজোর বুকিং নয়, তার পরে নভেম্বর-ডিসেম্বরের বুকিংও অনেকে বাতিল করার পথেই হাঁটছেন। ফলে, এ বছর ব্যবসায় খানিকটা ঘাটতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার অমিত রায়ের কথায়, ‘‘আসলে পর্যটকদের মধ্যে বড় অংশ নেপালের ঘটনায় বাংলাদেশের ছায়া দেখছেন। অধিকাংশই ধরে নিচ্ছেন দু’-এক সপ্তাহে এই পরিস্থিতিশান্ত হওয়ার নয়। ফলে, কেউই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।’’ শুধু এ রাজ্যের নয়, আশঙ্কার মেঘ নেপালের পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। এ দিন নেপাল থেকে ফোনে সেখানকার পর্যটন ব্যবসায়ী কমলেশ গুপ্ত বললেন, ‘‘আশঙ্কা তো একটা থাকছেই। এখন তো আর কেউ আসছেন না। আমরাও সকলকে বারণ করছি। তবে আশা করছি, দ্রুত নতুন সরকার গঠিত হবে। দ্রুত সরবে আশঙ্কার কালো মেঘ।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)