E-Paper

সুপ্রিম-নির্দেশেও পুরনো চাকরি ফিরে পাননি চাকরিহারা অনেক শিক্ষক

দৃষ্টিহীন শিক্ষক সোমনাথ নিয়োগী জানালেন, তিনি ২০০৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মানিকলাল হাইস্কুলে চাকরি করছিলেন। তাঁর বাড়ি বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে। বাড়ি থেকে সেই স্কুলের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ০৮:২৭
সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছিল, প্যানেল বাতিল হওয়ায় চাকরি হারানো শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা আগে শিক্ষকতা করতেন বা অন্য কোথাও চাকরি করতেন,

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছিল, প্যানেল বাতিল হওয়ায় চাকরি হারানো শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা আগে শিক্ষকতা করতেন বা অন্য কোথাও চাকরি করতেন, তাঁরা চাইলে আগের চাকরিতে ফিরে যেতে পারবেন। —ফাইল চিত্র।

সরকারি কোনও স্কুলের শিক্ষক অথবা সরকারি কোনও দফতরের কর্মীদের অনেকেই ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই বছরের গোটা প্যানেল বাতিল হওয়ায় বর্তমানে তাঁরাও এখন চাকরিহারা। ২০১৬-র প্যানেল বাতিল করার সময়ে সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছিল, প্যানেল বাতিল হওয়ায় চাকরি হারানো শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা আগে শিক্ষকতা করতেন বা অন্য কোথাও চাকরি করতেন, তাঁরা চাইলে আগের চাকরিতে ফিরে যেতে পারবেন। কিন্তু বেশ কয়েক জন চাকরিহারা শিক্ষকের অভিযোগ, তাঁরা আগের চাকরিতে ফিরে যেতে পারেননি। কারণ, শিক্ষা দফতর এখনও সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেনি। তাঁদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষা দফতরকে নির্দেশ দিয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে আগের চাকরি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। চাকরিহারা ওই শিক্ষকদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের আগের চাকরিতে ফিরিয়ে নিতে হবে।

দৃষ্টিহীন শিক্ষক সোমনাথ নিয়োগী জানালেন, তিনি ২০০৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মানিকলাল হাইস্কুলে চাকরি করছিলেন। তাঁর বাড়ি বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে। বাড়ি থেকে সেই স্কুলের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। বিষ্ণুপুরের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে স্কুটার চালিয়ে এক জন তাঁকে স্কুলে পৌঁছে দিতেন। তিনি বাড়ির কাছাকাছি কোনও স্কুলে চাকরি পেতে ২০১৬ সালে ফের এসএসসি দেন। তাতে পাশ করে বাড়ির কাছেই বাঁকুড়ার প্রতাপপুর দামোদর জিউ হাইস্কুলে চাকরি পান। সোমনাথ বলেন, ‘‘২০১৬ সালের প্যানেল পুরো বাতিল হওয়ায় আমি এখন চাকরিহারা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, আমার পুরনো চাকরি তিন মাসের মধ্যে ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু এখনও ফেরত পাইনি। আমি এক জন দৃষ্টিহীন মানুষ। আমার উপরে পুরো সংসার নির্ভর করছে। ৩১ ডিসেম্বরের পরে যদি আমার চাকরি না থাকে, তখন কী হবে? আমি কিন্তু নতুন করে আর এসএসসি দেব না।’’

আর এক চাকরিহারা শিক্ষক রূপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ২০১০ সালে শিক্ষক হয়েছিলাম। স্কুল ছিল দূরে। তাই বাড়ির কাছের কোনও স্কুলে আসতে এবং একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক হওয়ার জন্য ফের ২০১৬ সালে পরীক্ষা দিই। চাকরিও পাই। এখন চাকরিহারা হয়ে পড়েছি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও পুরনো চাকরি ফিরে পেলাম না।’’ ‘অল পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন গড়াই বললেন, ‘‘শুধু কর্মরত শিক্ষকেরাই নন, সমস্যায় পড়েছেন চাকরিহারা হয়ে যাঁরা গত তিন মাসের মধ্যে অবসর নিয়েছেন, তাঁরাও। তাঁদের আবার পেনশন-সহ অবসরের সুযোগ-সুবিধা কিছুই শুরু হয়নি।’’

যেমন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পবন সোরেন বললেন, ‘‘বাড়ি থেকে স্কুল দূরে ছিল। শিক্ষকতার শেষ জীবনে এসে ভেবেছিলাম, বাড়ির কাছে স্কুল পাব। তাই ২০১৬ সালে ফের এসএসসি দিয়েছিলাম। পাশও করলাম। কিন্তু তার পরে ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল হওয়ায় চাকরি হারালাম। মে মাসে আমি অবসর নিয়েছি। এখনও পেনশন-সহ কোনও সুযোগ-সুবিধা পেলাম না। কবে পাব, তা-ও জানি না।’’ চন্দন জানান, পুরনো চাকরি ফেরত এবং অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন-সহ সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবিতে তাঁরা বিকাশ ভবনে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

বিকাশ ভবনের কর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, অনেক চাকরিহারা তাঁদের পুরনো চাকরি ফিরে পেয়েছেন। যাঁরা এখনও পাননি, জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছ থেকে তাঁদের তথ্য নিয়ে চাকরি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengal SSC Recruitment Case Supreme Court

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy