আলুখেতে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র
মানু (নাম পরিবর্তিত) খেতে আলু বোনে। রোজ সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা। যে সময় সমবয়সিরা স্কুলে পড়ে, সে সময় আলু বুনে ওর রোজগার ১০০ টাকা। একা নয়, পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে প্রাক-শীতের মরসুমে আলু বোনে মানু এবং আরও কয়েক জন। সবাই নাবালক।
ভাতারের রায়রামচন্দ্রপুরে সম্প্রতি আলুর বীজ বসানোর কাজ করতে দেখা গিয়েছে স্থানীয় স্কুলের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া দশ জনকে। খবর পেয়ে সোমবার ওই এলাকায় যান শ্রম দফতরের ন্যূনতম মজুরি পরিদর্শক (ভাতার) প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে কাউকে দিয়ে কাজ করানো অপরাধ। আগামী দিনে এমন যাতে না ঘটে, তা নিয়ে সচেতন করা হয়েছে এলাকাবাসীকে।’’ কিন্তু এত দিন সচেতন করা হয়নি কেন, সে জবাব মেলেনি। নজরে এসেছে শিশু-সুরক্ষায় নানা ‘ফাঁক’।
মানুরা দিনমজুর পরিবারের সন্তান। ধান বোনা, কাটা, আলু লাগানো, একশো দিনের কাজের উপরে দিন চলে পরিবারগুলোর। আয় মাসে দু’-তিন হাজার টাকা। পরিবারের দাবি, বাচ্চারা স্কুলে না গিয়ে দিনমজুরি করছে, সে খবর তারা রাখে না। কিন্তু যাঁরা সে খবর রাখতে পারতেন, তাঁরা কোথায়?
আরও পড়ুন: তেলঙ্গানার প্রতিবাদে চুঁচুড়ায় ধর্না তরুণীর
শিশু-শ্রম আটকাতে জেলা জুড়ে গ্রাম সংসদ, ব্লক বা পুর-ওয়ার্ডভিত্তিক শিশু সুরক্ষা সমিতি গড়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সমাজকল্যাণ দফতর মানছে, জেলার চার হাজারের কাছাকাছি সংসদের মধ্যে মাত্র সাড়ে আটশোতে সমিতি গড়া হয়েছে। সংসদভিত্তিক সমিতি গড়ায় ভাতার পিছিয়ে রয়েছে। জেলা শিশু-সুরক্ষা আধিকারিক সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিশুরা খেতে কাজ করছে, এটা ব্লক সুরক্ষা সমিতির জানা উচিত ছিল।’’
বাচ্চারা যে স্কুলের পড়ুয়া, তার প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ গণের দাবি, বিষয়টি জানা ছিল না তাঁরও। ওই পড়ুয়া ও অভিভাবকদের বোঝানো হবে, যাতে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সমঝোতা করা না হয়।
শিক্ষার অধিকার আইনে মিড-ডে মিল, পোশাক, বইপত্র, ব্যাগের মতো সুবিধা পায় পড়ুয়ারা। তার পরেও ‘ফাঁক’ থাকছে কেন? জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির প্রাক্তন চেয়ারম্যান দেবাশিস নাগ বলেন, ‘‘আমার ধারণা, শিশু সুরক্ষা সমিতি বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা ঠিকমতো নজর দিচ্ছেন না।’’ শিক্ষকদের একাংশের আবার দাবি, কোনও পড়ুয়া খেতে কাজ করে নগদে রোজগার করছে দেখলে, আরও অনেকে সে কাজে জুটে যায়। স্কুলছুট বাড়ে।
ভাতারের বিধায়ক তৃণমূলের সুভাষ মণ্ডল বলেন, ‘‘এখনও যাঁরা শিশুশ্রমিক নিয়োগ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলব প্রশাসনকে।’’ ডিএম বিজয় ভারতীর বক্তব্য, ‘‘যদি দেখা যায়, ওই বাচ্চারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছে, তা হলে জমির মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy