তেলঙ্গানায় ধর্ষণে অভিযুক্তদের এনকাউন্টারে মৃত্যু নিয়ে এই রাজ্যে অনেকেই রীতিমতো সরব। ধর্ষকদের এমন ‘শাস্তি’ হওয়া উচিত বলেই মনে করছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্টেরা। তাঁদের মধ্যে অনেকে তৃণমূলের নেতা ও জনপ্রতিনিধি।
এরই মধ্যে একদা বিজেপি নেতা এবং বর্তমানে মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় এনকাউন্টারে দুষ্কৃতী দমনের নিন্দা করে বিষয়টিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছেন। শনিবার কলকাতায় তিনি বলেন, ‘‘এনকাউন্টার কখনও অপরাধমূলক কাজের শাস্তির যথাযোগ্য পথ হতে পারে না। যে কোনও অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীকে গ্রেফতার করে আদালতে নিয়ে যাওয়ার কথা। আদালত তাকে শাস্তি দেবে। এ-দিক ও-দিক গুলি করে মেরে ফেলা সাধারণ ভাবে কখনওই কাম্য নয়। নিন্দা না করে পারছি না।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এনকাউন্টার নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু না বললেও আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার পক্ষেই অভিমত দেন। শুক্রবারই এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ অপরাধীকে গ্রেফতার করে কোর্টে তুলবে। বিচারালয় তার বিচার করবে। এটাই আইন।’’
কিন্তু তাঁর দলের একাধিক সাংসদ প্রকাশ্যেই তেলঙ্গানায় পুলিশের ভূমিকাকে ‘ন্যায়ের পথ’ বলে বর্ণনা করে তার সমর্থনে কথা বলেছেন। এঁদের মধ্যে আছেন দেব, নুসরত এবং মিমি। তৃণমূলের কোনও কোনও নেতার প্রশ্ন, তেলঙ্গানায় পুলিশ যা করেছে, উন্নাওয়ের ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তা করতে পারছে না কেন? বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশ যাদের এনকাউন্টারে মেরেছে, তারা সত্যিই ওই ঘটনায় যুক্ত থাকলে, তাদের উচিত শিক্ষা হয়েছে।’’
তৃণমূল নেত্রী মমতার বক্তব্যের থেকে তাঁর দলের এই সব নেতার কথার সুর কিছুটা আলাদা। সে ক্ষেত্রে মমতার দলে ভিন্নমতের ইঙ্গিত মিলছে কি? দলের এক শীর্ষনেতার বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের কোনও আলোড়নকারী ঘটনা ঘটলে তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয়। যে যাঁর নিজের মতো করে তাঁর বক্তব্য জানান। দলীয় ভাবে কোনও নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত সব সময় দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রেও হয়নি। তাই বিষয়টিকে সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখা উচিত।’’
এ দিনই টুইটে উন্নাওয়ের ঘটনার নিন্দা করে মমতা লিখেছেন, ‘‘দুঃখজনক। নৃশংসতার কোনও সীমা নেই।’’ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘উন্নাওয়ে তো ধর্ষণকারীদের ছেড়ে দিয়ে ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে মারা হল! বিজেপি সরকার চুপ করে আছে। এই অমানবিক দলকে যত দ্রুত তাড়ানো যাবে, তত তাড়াতাড়ি মেয়েরা সম্মান, অধিকার ফিরে পাবে।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই চাপা না দিয়ে সরকারের কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যাতে অপরাধীরা এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে আর সাহস না পায়।’’ পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, উন্নাওয়ের ঘটনায় সিট তৈরি হয়েছে। ফলে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে না। কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী চান ধর্ষণ, নারী নির্যাতন সংক্রান্ত আইনগুলি বিভিন্ন রাজ্য সরকার বাস্তবায়িত করুক।