Advertisement
E-Paper

রাষ্ট্রপতি শাসন হোক, তৃণমূলের ভাঙন দেখে নেবেন: জল্পনা কৈলাস-বচনে

রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা নিয়ে বিজেপি নেতারা কিন্তু কিছু দিন আগে পর্যন্তও প্রবল অনীহা দেখাচ্ছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০ ২১:৪২
রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি নেহাৎ প্রতীকী নয়, ইঙ্গিত মিলছে বিজেপি নেতাদের কথায়।—ছবি পিটিআই।

রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি নেহাৎ প্রতীকী নয়, ইঙ্গিত মিলছে বিজেপি নেতাদের কথায়।—ছবি পিটিআই।

দিন কয়েক আগেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছে বিজেপি। সে দাবি রাষ্ট্রপতি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পেশও করেছে। কিন্তু দাবি পেশ মানেই কি দাবি পূরণ? বিজেপি কি ধরেই নিল যে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হচ্ছেই? বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের মন্তব্য কিন্তু তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে ৩৫৬ জারি হচ্ছে ধরে নিয়েই রণকৌশল সাজাচ্ছে বিজেপি, কৈলাসের মন্তব্যের অর্থ অন্তত তেমনই হয়।

তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক, সাংসদ, এমনকি মন্ত্রীও বিজেপিতে যোগ দিতে চাইছেন, যোগাযোগ রাখছেন— দাবি কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের। পুলিশ দিয়ে খুন করানো হতে পারে বা ভুয়ো মামলায় ফাঁসানো হতে পারে, এই ভয়ে অনেকে বিজেপিতে যোগ দিতে পারছেন না, মন্তব্য অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ওই নেতার। পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া মাত্রই তৃণমূলের ওই নেতা-মন্ত্রীরা বিজেপিতে যোগদান করবেন— এমন কথাও তিনি বললেন। মঙ্গলবার এই কৈলাসের নেতৃত্বেই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছিল পাঁচ সদস্যের বিজেপি প্রতিনিধিদল। হেমতাবাদের বিধায়কের রহস্যমৃত্যুর সিবিআই তদন্ত এবং বাংলায় ৩৫৬ জারির দাবি জানিয়েছিল। তাই বাংলার সংবাদমাধ্যমে কৈলাসের এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ঠিক কী বলেছেন কৈলাস? বলেছেন, ‘‘বিধায়কের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত এবং রাষ্ট্রপতি শাসন, দুটোই চাই আমরা।’’ তাঁর কথায়, পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনের শুধু ‘রাজনৈতিকীকরণ’ হয়নি, ‘অপরাধীকরণ’ও হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনকে দিয়ে যখন অপরাধমূলক কাজ করানো হয়, তখন আর সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার থাকে না— মন্তব্য কৈলাসের। তিনি বলেছেন, ‘‘এই প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন হলে, তা কিছুতেই নিরপেক্ষ হতে পারে না। তাই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন হবে।’’

আরও পড়ুন: রাজ্যে এক দিনে সংক্রমিত ১ হাজার ৮৯৪, বাড়ল সংক্রমণের হার

বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া মাত্রই তৃণমূল হু হু করে ভাঙবে বলেও কৈলাস বিজয়বর্গীয় মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সব জেলায় হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী বিজেপিতে আসছেন। এর পরে দেখতে থাকুন, অনেক সাংসদ, বিধায়ক, তৃণমূলে যাঁদের দম বন্ধ হয়ে আসছে, তাঁরাও বিজেপিতে যোগ দেবেন।’’ বিজেপি সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘পুলিশ দিয়ে হয়তো খুন করানো হবে অথবা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে’, এই ভয়ে অনেকে এখন তৃণমূল ছাড়তে পারছেন না। মুকুল রায় এবং অর্জুন সিংহের মতো নেতাদের নামেও যে ভাবে একের পর এক মামলা হচ্ছে, তাতে অন্যরা ভয় পেতে বাধ্য— ইঙ্গিত কৈলাসের।

এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্যই পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জরুরি বলে কৈলাস বিজয়বর্গীয় দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভিতরে ভিতরে পশ্চিমবঙ্গে খুব আগুন লাগছে। যদি বিজেপিতে যাই আমাদের নামে মামলা দেওয়া হবে, এই ভয়ে অনেকে যোগ দিতে পারছেন না। রাষ্ট্রপতি শাসন যে মুহূর্তে জারি হবে, এই সরকার যে মুহূর্তে ক্ষমতাচ্যুত হবে, অনেক নেতা, বিধায়ক, সাংসদ, এমনকি মন্ত্রীও বিজেপিতে চলে আসবেন।’’

আরও পড়ুন: বিদ্যুতের বিল নিয়ে ক্ষোভ শহর জুড়ে, সিইএসসি-র ব্যাখ্যা চাইলেন মন্ত্রী

রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা নিয়ে বিজেপি নেতারা কিন্তু কিছু দিন আগে পর্যন্তও প্রবল অনীহা দেখাচ্ছিলেন। এক সময়ে রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি দলের অন্দরে তুলতে শুরু করেছিলেন। তখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য ছিল, ৩৫৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সরকার ফেলে দিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের পক্ষে সহানুভূতির হাওয়া তুলতে পারবেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাষ্ট্রপতি শাসন জারির বিষয়ে আগ্রহী হতে শুরু করে। কিন্তু তখন আবার বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একটা অংশ নিজেদের দ্বিধার কথা দিল্লিকে জানান। এখন পশ্চিমবঙ্গে যে পরিস্থিতি, তাতে আর রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রয়োজন হবে না, মমতার প্রস্থানের পথ এমনিতেই প্রশস্ত হয়ে গিয়েছে— রাজ্য বিজেপির কয়েক জন শীর্ষনেতার মত এ রকম। কিন্তু হেমতাবাদের বিধায়কের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই গোটা দল এক সুরে কথা বলতে শুরু করেছে। অন্দরমহলে পুরোপুরি ঐকমত্য এখনও তৈরি হয়নি বলে খবর। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘মেজাজ’ এ বার অন্য রকম, জানাচ্ছেন রাজ্য বিজেপির এক সামনের সারির নেতা। শুধু রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেই বিজেপি থামেনি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছে, এটা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করার মতো বিষয়— বলছেন এক সাংসদও।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অর্থাৎ অমিত শাহ যদি নিজে না চাইতেন, তা হলে বিজেপি প্রতিনিধি দল এই বিষয় নিয়ে তাঁর অফিসে হাজির হতে পারত না, বলছে ওয়াকিবহাল মহল। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভাবনা-চিন্তা যে গুরুতর স্তরে পৌঁছেছে, শাহের সঙ্গে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেনন, বাবুল সুপ্রিয়, স্বপন দাশগুপ্ত, রাজু বিস্তাদের সাক্ষাতেই তার আঁচ মিলছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত। তার মধ্যেই শাহের প্রিয়পাত্র কৈলাসের এই রকম মন্তব্য সংবাদমাধ্যমে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কৈলাসের এই মন্তব্য জল্পনা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।

Kailash Vijayvargiya BJP TMC Article 356
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy