Advertisement
E-Paper

অতি বামেরা সক্রিয়, জানতেন না গোয়েন্দারা

জঙ্গলমহল শান্ত মানেই মাওবাদীদের ঠান্ডা করা গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া যে ভুল ছিল, সেটা এখন স্বীকার করে নিচ্ছেন পুলিশ-গোয়েন্দাদের তাবড় কর্তারা। তাঁদের উপলব্ধি, রাঢ়বঙ্গে শান্তি মানেই অতি বামেরা রাজ্যের অন্য জায়গাকে অশান্ত করতে পারবেন না, সেটা মনে করে তাঁদের শক্তিকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার খেসারতই দিতে হচ্ছে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায়।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৭

জঙ্গলমহল শান্ত মানেই মাওবাদীদের ঠান্ডা করা গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া যে ভুল ছিল, সেটা এখন স্বীকার করে নিচ্ছেন পুলিশ-গোয়েন্দাদের তাবড় কর্তারা।

তাঁদের উপলব্ধি, রাঢ়বঙ্গে শান্তি মানেই অতি বামেরা রাজ্যের অন্য জায়গাকে অশান্ত করতে পারবেন না, সেটা মনে করে তাঁদের শক্তিকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার খেসারতই দিতে হচ্ছে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায়।

চার বছরেরও বেশি, জঙ্গলমহলে মাওবাদী হিংসার একটা ঘটনাও ঘটেনি। সেখানে মাওবাদী গণ সংগঠন ‘পুলিশি সন্ত্রাসবিরোধী জনসাধারণের কমিটি’-র অস্তিত্ব বহু আগেই লুপ্ত। পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া গণ সংগঠনগুলো তেমন দানা বাঁধেনি। তার উপর মাওবাদী দলের রাজ্য পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা জেলে। মাওবাদী সশস্ত্র স্কোয়াডের বহু সদস্য আত্মসমর্পণ করে মূলস্রোতে ফিরেছেন, কেউ বা শাসক দলে যোগ দিয়েছেন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে।

রাজ্য সরকারের পর্যবেক্ষণে, জঙ্গলমহলের সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ লালগড় আন্দোলন পর্বের নির্বিচার হত্যার রাজনীতি সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বন্‌ধ-ধর্মঘট-পথ অবরোধে তাঁদের রুজি রোজগারে যে টান পড়েছিল, সে কথা মনে করে আর সে সব দিনে তাঁরা ফিরতে চান না। কারণ, দু’টাকা কেজি-র চাল, জুনিয়র কনস্টেবল-হোমগার্ড-সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ পাওয়া, রাস্তা-সেতু-স্কুল-কলেজ হওয়া— তাঁদের জীবনে মোটামুটি একটা ‘শান্তিপূর্ণ স্থিতাবস্থা’ বজায় রেখেছে। এবং সেই জন্য এখনই সেখানে মাওবাদীদের ফের জমি পাওয়া মুশকিল।

কিন্তু জঙ্গলমহলের নাড়ি ধরতে পেরে সেখান থেকে থেকে সরে মাওবাদী গণ সংগঠনগুলো ও নকশালপন্থীরা যে তাঁদের কর্মসূচি ও আন্দোলনকে শহর ও শহরতলিতে সংহত করছেন, সে দিকে তেমন খেয়াল করা হয়নি। ‘‘আর সেই ফাঁকে ছোট ছোট স্থানীয় সমস্যাকে ধরে ওঁরা আন্দোলন করেছেন, মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন,’’— বলছেন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা বা আইবি-র এক শীর্ষকর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘মাওবাদী গণ সংগঠনের কাজ মানেই আমরা কেউ কেউ ধরে নিয়েছিলাম, কলেজ স্কোয়ার থেকে একটা মিছিল বার করে ওরা ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে ছোটখাটো সভা করবে, এর বেশি কিছু নয়। এখানেই মস্ত ভুল।’’

তবে শহর ও শহর লাগোয়া এলাকায় অতি বাম বিভিন্ন গণ সংগঠন ও দলের কর্মসূচি ও আন্দোলন নতুন কিছু নয়। এটা বহু কাল ধরেই তাঁরা করছেন। তা হলে এ বার কী এমন নতুন?

রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার অভিমত, জঙ্গলমহলে ধাক্কা খাওয়ার পর শহর ও মফস্‌সলে গণ সংগঠনকে সামনে রেখে চলাই এই পর্যায়ে মাওবাদী রাজনীতির অভিমুখ। বছর দুয়েক আগে প্রকাশিত, সিপিআই (মাওবাদী)-এর সাধারণ সম্পাদক মুপ্পাল্লা লক্ষ্ণণ রাও ওরফে গণপতির একটি সাক্ষাৎকার থেকেও ঠারেঠোরে সেটা বেরিয়ে এসেছিল। সে সব ধরতে না-পারাই ব্যর্থতা।

ওই অফিসারের বক্তব্য, রোজ জঙ্গলমহলে মাওবাদী স্কোয়াডের গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা-তথ্য তালিকা দেওয়া হয়। গত বছর মাওবাদী নেতা বিকাশ ধরা পড়ার পর জানা যায়, তিনি চার-পাঁচ বছর ধরে অসুস্থ, জঙ্গলমহলেই ছিলেন না। অথচ তখন গোয়েন্দা-তথ্যে জানা যাচ্ছিল, বিকাশ ও তাঁর স্ত্রী তারা সশস্ত্র স্কোয়াড নিয়ে জঙ্গলে ঘুরছেন! তবু শহর ও শহরতলিতে নকশালপন্থীদের কাজকর্মকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণ, শহর ও লাগোয়া তল্লাটে সক্রিয় মাওবাদীদের গণ সংগঠন ও সংসদীয় গণতন্ত্রে অংশ নেওয়া নকশালপন্থী কিছু দলের নেতা-নেত্রী-কর্মীরা সহজে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন। ভাঙড়ে যেমন এক নেত্রী রাতের পর রাত কাটিয়েছেন। আইবি-র এক কর্তা জানাচ্ছেন, মূলত গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পর রাজ্যে শাসক দলের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ রাজনৈতিক মোকাবিলার বিষয়টি এক রকম উধাও। যেখানে যা গণ্ডগোল হচ্ছে, তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শাসক দলেরই একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অন্য গোষ্ঠী সামিল। ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ যেন জেনেই গিয়েছেন, এ সব ঘটনায় প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক কোনও সুরাহা তাঁরা পাবেন না। ভাঙড়ে আরাবুল ইসলাম ও তাঁর বাহিনীর সম্পর্কে এলাকাবাসীর অধিকাংশের যেমন মনোভাব। এই অবস্থায় ক্ষুব্ধ জনতা পাশে পাচ্ছেন নকশালদের। আর তাঁরা ফাঁকা রাজনৈতিক জমি পেয়ে আন্দোলনের ফসল তুলছেন।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, শুধু ভাঙড় নয়, ঠাকুরপুকুরের কাছে রসপুঞ্জ ও সোদপুরেও নকশালদের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান জেলার শিল্পাঞ্চলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করেছে মাওবাদীরা। এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘যে সময়টায় ওরা এটা করে ফেলল, তখন আমরা বুঁদ হয়ে থাকলাম জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়ে আনার সাফল্যে!’’

maoist Investigators
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy