Advertisement
E-Paper

দিল্লি থেকে ডাক ‘শহিদ’ পরিবারদের

নির্বাচনী প্রচারে এসে, বিপুল জয়ের পরেও মোদীর মুখে বার বার বাংলায় ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগ শোনা গিয়েছে।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০১:২১
বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদী, সোমবার। ছবি: পিটিআই।

বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদী, সোমবার। ছবি: পিটিআই।

দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী পাশে চাইছেন পশ্চিমবঙ্গের দলের ‘শহিদ’ কর্মীদের পরিবারকে। সোমবার রাতে দিল্লি থেকে সেই আমন্ত্রণ পৌঁছে গিয়েছে পুরুলিয়ার বিজেপির ছয় পরিবারের কাছেও। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভরনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মঙ্গলবারই কয়েকটি পরিবারের সদস্য নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

এ দিন বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দিল্লি থেকে বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে পুরুলিয়া জেলায় বিজেপির উত্থানের জেরে আমাদের দলের ছ’জন কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। দলের জন্য ‘শহিদ’ হওয়া ওই পরিবারগুলির সদস্যদের তাই প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’’ তিনি জানান, সোমবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ পেয়েই রাতে ওই পরিবারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে দিল্লিতে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

নির্বাচনী প্রচারে এসে, বিপুল জয়ের পরেও মোদীর মুখে বার বার বাংলায় ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগ শোনা গিয়েছে। যদিও তা মানতে চাননি রাজ্যের শাসকদলের নেতৃত্ব। তবে, মোদী তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দলের ‘শহিদ’ পরিবারগুলিতে আমন্ত্রণ জানানোয় উচ্ছ্বসিত দলের জেলা নেতা-কর্মীরা।

গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে পুরুলিয়া জেলায় বিজেপি নিজেদের প্রভাব বাড়ায়। ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরে ৩০ মে বলরামপুর থানার সুপুরডিতে বিজেপি কর্মী কলেজ পড়ুয়া ত্রিলোচন মাহাতোর ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। তাঁর টি-শার্টে পেন দিয়ে লেখা ছিল— ‘১৮ বছর বয়সে বিজেপি করা, বোঝ’। তার ক’দিন পরেই ২ জুন পাশের ডাভা গ্রামে বিদ্যুতের হাইটেনশন তারের খুঁটিতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় আর এক বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের দেহ। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বলরামপুর থানারই আমটাঁড়ের বিজেপি কর্মী জগন্নাথ টুডুর পথ দুর্ঘটনার মৃত্যু হয়।

তিনটি মৃত্যুর পিছনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বিজেপি নেতৃত্ব সিবিআই তদন্ত চেয়ে আন্দোলনে নামেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ প্রতিবাদ সভা করতে পুরুলিয়ায় আসেন। তিনি শহিদ পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথাও বলেন। সিআইডি তদন্ত করে ত্রিলোচনের খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করে। সিবিআই তদন্তের বিষয়টি বর্তমানে আদালতের বিচারাধীন রয়েছে।

অঘটন অবশ্য থেমে নেই। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়েও বারবার উত্তপ্ত হয়েছে পুরুলিয়া। অগস্টের শেষ সপ্তাহে জয়পুরের ঘাঘরায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে ঘিরে গুলি চলে। নিহত হন দামোদর মণ্ডল ও নিরঞ্জন গোপ নামে দুই বিজেপি কর্মী-সমর্থক। এই ঘটনাতেও বিজেপি সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিল।

লোকসভা ভোটের মুখে ১৮ এপ্রিল সকালে আড়শার সেনাবনা গ্রামে ঝুলন্ত দেহ মেলে বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে শিশুপাল সহিসের। আগের দিন তিনি বিজেপির হয়ে দেওয়াল লিখতে বেরিয়েছিলেন। সেই ঘটনার পিছনেও তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে বিজেপি।

যদিও প্রতিটি ঘটনাতেই তাঁদের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করে এসেছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বারবার দাবি করে এসেছেন, ‘‘বিজেপি কর্মীদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত নয়। মৃত্যু নিয়ে বিজেপি ঘৃণ্য রাজনীতি করছে।’’

বিদ্যাসাগরবাবু এ দিন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ৯ মে পুরুলিয়ায় সভা করতে এসেও শহিদ পরিবারগুলি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন। ভোটে জিতেও তিনি তাঁদের কথা ভোলেননি। তাই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ওই পরিবারগুলির যাতে এক বা দু’জন করে আসেন, সে জন্য তিনি বলেছেন। জেলা কমিটি পরিবারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন।’’

জয়পুরের বাসিন্দা দলের জেলা সম্পাদক রবীন সিংহ দেও বলেন, ‘‘ঘাঘরার দুই পরিবারের মোট তিন জন দিল্লিতে যাচ্ছেন। তাঁরা কলকাতায় রওনা হয়েছেন। সেখান থেকে ট্রেন ধরবেন।’’ ত্রিলোচনের দাদা বিবেকানন্দ মাহাতো বলেন, ‘‘সকালেই তিনি রাঁচী রওনা দেন। সেখান থেকে প্লেনে দিল্লি যাচ্ছেন।’’ শিশুপালের বাবা যাদব সহিস জানান, তাঁরা সস্ত্রীক মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার হাওড়া থেকে ট্রেন ধরব। সুযোগ হলে মন্ত্রীদের বলব, ছেলের খুনের যেন সুবিচার পাই।’’

Narendra Modi Oath taking ceremony
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy