Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

কিডনি দেওয়ার নাম করে টাকা লোপাটের চেষ্টা, ধৃত মামা

পুলিশ সূত্রের খবর, জানুয়ারির ১৭ তারিখে বছর কুড়ির ছেলেকে নিয়ে আসেন বাংলাদেশের বাসিন্দা লুৎফার হাসান মণ্ডল। সঙ্গে ছিলেন তাঁর শ্যালক আইনাল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:০১
Share: Save:

ছেলের কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য বাংলাদেশ থেকে পূর্ব যাদবপুরে এসেছিলেন এক ব্যক্তি। কথা ছিল, তাঁর শ্যালক ছেলেটিকে একটি কিডনি দান করবেন। কিন্তু হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করার প্রক্রিয়া শুরুর মুখেই এল ধাক্কা। কিডনি দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে লক্ষাধিক টাকা নিয়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন ওই শ্যালক। পরে অবশ্য বনগাঁ থেকে গ্রেফতার করা হয় আইনাল হক সর্দার নামে ওই ব্যক্তি এবং আরও দু’জনকে।

পুলিশ সূত্রের খবর, জানুয়ারির ১৭ তারিখে বছর কুড়ির ছেলেকে নিয়ে আসেন বাংলাদেশের বাসিন্দা লুৎফার হাসান মণ্ডল। সঙ্গে ছিলেন তাঁর শ্যালক আইনাল। লুৎফারের ছেলে তারিক হোসেনের একটি কিডনি খারাপ। তাকে আইনাল একটি কিডনি দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ২ ফেব্রুয়ারি লুৎফারের মোবাইল, ভারতীয় ও বাংলাদেশের মুদ্রা এবং আমেরিকান ডলার মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা, পাসপোর্ট, ছবি, গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে উধাও হয়ে যান আইনাল। এমনই অবস্থা দাঁড়ায় যে বাবা ও ছেলের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়াই কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ দেশে থাকার বৈধ নথি লোপাট হয়ে যাওয়ায় আইনগত সমস্যাও দেখা দেয়। এর পরে ৩ ফেব্রুয়ারি, শনিবার পূর্ব যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন লুৎফার। তদন্তে নামে পুলিশ।

লালবাজার সূত্রের খবর, অভিযোগ পাওয়ার পরেই সোনারপুর-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হলেও কারও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই আইনালের ফোনের বিস্তারিত তথ্য যাচাই করতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। দেখা যায়, বেশ কয়েক জন ব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেছে আইনাল। সেগুলির মধ্যে একটি নম্বরে অনেক বার ফোন গিয়েছে। জানা যায়, ওই নম্বরটি সোনারপুর থানা এলাকার কুম্ভমণ্ডল পাড়ার বাসিন্দা মুজিবর মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির। এর পরে সোনারপুরের বোয়ালিয়া অঞ্চল থেকে তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন পূর্ব যাদবপুর থানার তদন্তকারী অফিসারেরা। তাঁর বক্তব্যে নানা অসঙ্গতি পান তদন্তকারীরা। পরে তিনি জানান, আইনালকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালানোর জন্য সাহায্য করছে স্মরজিৎ দাস নামে বনগাঁর পেট্রাপোলের এক যুবক।

এর পরেই একটি তদন্তকারী দল পৌঁছয় বনগাঁয় স্মরজিতের বা়ড়িতে। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, রবিবার রাতেই সীমান্ত পেরোবে আইনাল। বনগাঁর পুলিশের সাহায্যে রবিবার সন্ধ্যায় তাকে রামনগর রোড থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। উদ্ধার হয়েছে খোওয়া যাওয়া অধিকাংশ জিনিসই। গ্রেফতার করা হয় মুজিবর এবং স্মরজিৎকেও।

পুলিশের কাছে আইনাল জানিয়েছেন, তাঁর তেমন রোজগার ছিল না। এ দিকে, মেয়ে বড় হচ্ছে বলে টাকার দরকার পড়েছিল। তাই একটি কিডনি দিতে রাজি হয়ে যান তিনি। তাঁর দাবি, সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দেবেন বলেছিলেন লুৎফার। কিন্তু সেই টাকা শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন আইনাল। সে কারণেই টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেন আইনাল। লুৎফার অবশ্য বলেন, ‘‘আইনালের সঙ্গে কোনও আর্থিক চুক্তি হয়নি। কথা ছিল, ভবিষ্যতে ওর যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেটা আমরা দেখব।’’ লালবাজার সূত্রের খবর, পাসপোর্ট-সহ অন্য নথিও আইনাল নিয়ে গেলেন কেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। চুরি ছাড়াও অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল কিনা, দেখা হচ্ছে তা-ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE