ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) বিরুদ্ধে ঠাকুরনগরে আমরণ অনশনে বসেছেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর এবং তাঁর অনুগামী মতুয়ারা। অনশনের নবম দিনে সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুকেশ চৌধুরী অনশন ভাঙলেন। দিল্লিতে গিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্ততির কারণেই তিনি অনশন আপাতত স্থগিত করলেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু পুরোটাই হল প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর উপদেশে। বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের অনশনমঞ্চে গিয়েছিলেন অধীর। তার সঙ্গে কথাবার্তার পরেই সুকেশ অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। নেত্রী মমতাবালার সঙ্গে পরামর্শ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সুকেশ জানিয়েছেন, অধীরের কথা তাঁদের সকলের ভাল লেগেছে। তাই তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী দিল্লিতে বৃহত্তর আন্দোলনের তোড়জোড় করতে অনশন প্রত্যাহার করলেন তিনি। মমতাবালা তাঁর অনুগামীদের নিয়ে অনশন চালিয়ে যাবেন। পরবর্তী কর্মসূচি আলোচনার মাধ্যমে স্থির করা হবে। ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে সংসদের অধিবেশন শুরু হবে। তার আগেই রাজধানীর বুকে এসআইআরবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে চান মতুয়ারা। সুকেশের কথায়, ‘‘আমাদের সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছু ক্ষণ আগে এই মঞ্চে অধীর চৌধুরী এসেছিলেন। তিনি আন্দোলনের পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের কিছু কথা বলেছেন। যা আমাদের ভাল লেগেছে। এই আন্দোলনকে আমরা দিল্লির বুকে সংগঠিত করতে চাই। ১ ডিসেম্বর সংসদের অধিবেশন শুরু হবে। তার আগেই যা করার করব।’’
আরও পড়ুন:
দিল্লিতে আন্দোলন সংগঠিত করার ভার তাঁকেই নিতে হবে, দাবি সুকেশের। সেই কারণে তিনি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ফলের রস খেয়ে অনশন ভাঙেন। মমতাবালাও তাঁর সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছেন। যদিও অধীরের পরামর্শে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে— এ কথা তিনি মানতে চাননি। জানিয়েছেন, আগে থেকেই দিল্লির বুকে আন্দোলনের পরিকল্পনা তাঁদের ছিল। অধীরও সেই পরামর্শ দিয়েছেন। মমতাবালা বলেন, ‘‘শুধু অধীরদা বলেছেন বলেই নয়। আগে থেকেই আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল যে, আন্দোলনটাকে দিল্লির বুকে নিয়ে যাব। আমি এবং সুকেশ দু’জনেই প্রধান। দু’জনেই যদি অনশনে থাকি, অন্য কাজ হবে না। তাই আমি ওকে অনশন ভাঙতে বলেছি।’’ অধীরের উপদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর কথায়, ‘‘অধীরদার ভাল পরামর্শ দিয়েছেন। দিল্লিতে প্রচুর মতুয়া আছে। উনি যা বলেছেন, তা আমাদের আর কেউ বলেননি। আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাই।’’
দিল্লিতে আন্দোলন সংগঠিত হলে ঠাকুরনগরের অনশনমঞ্চ কি উঠে যাবে? সুকেশ জানান, এখানে অনশন যেমন চলছে, তেমনই চলবে। মমতাবালা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন। দিল্লির বিষয়ে আগামী দিনে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রয়োজনে দু’জায়গায় সমান্তরাল ভাবে আন্দোলন চলতে পারে। আবার ঠাকুরনগর থেকে আন্দোলন তুলে নিয়ে যাওয়া হতে পারে রাজধানীতে। এখনও সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। সারা দেশের মতুয়ারা দিল্লির আন্দোলনে যোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সুকেশ।