E-Paper

কড়াকড়ি মেডিক্যাল ভিসাতেও, বাংলাদেশি রোগী কম আসায় খরা অতিথিশালার ব্যবসায়

বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের বড় অংশেরই গন্তব্য ছিল ই এম বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালগুলি। আর তার জেরে ওই সব হাসপাতালের আশপাশে চলা হোটেল, অতিথিশালা কিংবা খাবার-দাবারের ভাল ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছিল।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৩৯

—প্রতীকী চিত্র।

রোগীর সংখ্যা আগে দিনে ছিল ৩০ থেকে ৪০ জন। কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যা চোখে পড়ার মতো হারেকমেছে কলকাতা তথা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে। ভারতে আসার সাধারণ ভিসা বন্ধ। অনেক কড়াকড়ির মধ্যে মিলছে এ দেশে চিকিৎসা করতে আসার মেডিক্যাল ভিসা। এর জেরে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে কলকাতায়।

বাংলাদেশ থেকে আসা ওই সব রোগীদের বড় অংশেরই গন্তব্য ছিল ই এম বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালগুলি। আর তার জেরে ওই সব হাসপাতালের আশপাশে চলা হোটেল, অতিথিশালা কিংবা খাবার-দাবারের ভাল ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশি অতিথি কিংবা ক্রেতার ভিড় কমে যাওয়ায় আর-পাঁচটি ব্যবসার মতো ওই সব হোটেল, অতিথিশালাগুলি এখন অনেকটাই কলকাতার বাইরে থেকে আসা অতিথিদের উপরে নির্ভরশীল হতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকেই জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তাঁদের ব্যবসায় চরম মন্দা ডেকে আনছে।

রুবি মোড়, মুকুন্দপুর, হাইল্যান্ড পার্কের মতো জায়গায় চলা তিনটি বড় বেসরকারি হাসপাতাল জানাচ্ছে, বর্তমানে দিনে চার-পাঁচ জনের বেশি বাংলাদেশি রোগীর দেখা মিলছে না। সাধারণ পরিস্থিতিতে যে সংখ্যাটি ৩০-৪০ জনের মধ্যে ঘোরাফেরা করত। আর এই হাসপাতাল ব্যবসার অনুসারী হিসেবে গড়ে উঠেছিল হাইল্যান্ড পার্কে শান্তি পার্ক, সোনালি পার্ক কিংবা মুকুন্দপুরের বিভিন্ন জায়গায় হোটেল-অতিথিশালার ব্যবসা। যে সব বাংলাদেশি হোটেল-অতিথিশালার ভাড়া দিতে সমর্থ নন, তাঁরা তুলনামূলক কম টাকায় স্থানীয়দের বাড়িতে ঘর ভাড়া নিতেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে শুরু হওয়া অরাজক পরিস্থিতিতে কলকাতায় আসা রোগীর সং‌খ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। যাঁরা তার মধ্যেও আসছেন, তাঁরা জানাচ্ছেন, মেডিক্যাল ভিসা পেতে হচ্ছে অনেক কষ্ট করে।

হাইল্যান্ড পার্কের কাছে শান্তি পার্ক আর সোনালি পার্কের গায়ে ‘মিনি বাংলাদেশ’ ছাপ পড়ে গিয়েছিল অনেক বছর ধরেই। সেখানে কোনও কোনও অতিথিশালার নামেই রয়েছে বাংলাদেশের গন্ধ। অতিথিশালা, বিদেশি মুদ্রার বিনিময়, বাংলাদেশি খাবারের পদের হোটেল— সব ধরনের ব্যবসা চলে সেখানে। সকাল-সন্ধ্যায় শান্তি পার্ক, সোনালি পার্কের অলিগলিতে বাংলাদেশি মানুষের ভিড় দেখা যেত। বর্তমানে ওই সব জায়গা কার্যত খাঁ খাঁ করছে।

শীতের এক সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এক ধরনের শূন্যতার পরিবেশ। ‘সোনার গাঁ’ নামে একটি অতিথিশালার কর্মী লক্ষ্মী হেমব্রমের কথায়, ‘‘গত এক-দেড় বছর ধরে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি চলছে, তার প্রভাবে এ দিকের অতিথিশালাগুলিতে বাংলাদেশি লোকজন প্রায় আসছেন না। অতিথিশালার ব্যবসা পুরোটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে অন্য রাজ্যের রোগীদের উপরে। কিন্তু সেই সংখ্যাটা বাংলাদেশি অতিথিদের থেকে তুলনায় অনেকটাই কম।’’

আবার শান্তি পার্কের পাশেই সোনালি পার্কের সান ভিউ অতিথিশালার রিসেপশনে বসা গোপাল মণ্ডলের কথায়, ‘‘সোনালি পার্ক ও শান্তি পার্ক মিলিয়ে প্রায় ৯০টি অতিথিশালা রয়েছে। পুরো ব্যবসাটাই এখানে চলত বাংলাদেশিদের আসা-যাওয়ার উপরে নির্ভর করে। খুব সামান্য মানুষ যাঁরা আসছেন, তাঁদের থেকে শুনছি, মেডিক্যাল ভিসা পেতেও খুব কড়াকড়ি।’’

একই পরিস্থিতি হাইল্যান্ড পার্কের কাছাকাছি মুকুন্দপুর এলাকায়। সেখানে দু’টি বড় বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে একটিঅতিথিশালার মালিক সমীরকুমার মণ্ডলের কথায়, ‘‘এ দিকে হাসপাতালগুলিতে বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড থেকে রোগী আসেন। ফলে আমাদের এখানে ততটা প্রভাব পড়ছে না। তবে যাঁরা চিকিৎসা করতে আসা বাংলাদেশিদের বাড়ি ভাড়া দেন, তাঁদের খুবই সমস্যা। আমাদের অতিথিশালাতেও বাংলাদেশি রোগী উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে।’’

শান্তি পার্কের একটি বাংলাদেশি খাবারের দোকানের কর্মীরা জানালেন, অন্য রাজ্য থেকে কিংবা উত্তরবঙ্গ থেকে আসা লোকজন দু’-তিন দিন থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশি মানুষজন একটা লম্বা সময়ের জন্য ঘর ভাড়া নেন। যে কারণে ব্যবসা ভাল চলে।

সোনালি পার্কে ঘুরতে দেখা গেল ফরিদপুরের বাসিন্দা মহম্মদ জিন্না আলি সর্দারকে। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে ওষুধ খুব ভাল পাওয়া যায়। ঢাকায় চোখের অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। খুব কষ্ট করে মেডিক্যাল ভিসা পেয়েছি। চোখের চিকিৎসা চলছে এখানে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Unrest medical treatment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy