পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করুক, এমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে টাকা দিল পুলিশ।
যে ছাত্রের আইটিআইয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ডে কুকুরের ছবি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হল, সেই সৌম্যদীপ মাহাতোর লেখাপড়ার সব খরচের দায়িত্ব নিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। পুলিশ মঙ্গলবার সৌম্যদীপকে গোয়ালতোড় কলেজে বাংলা অনার্সে ভর্তি করে দিয়েছে। এককালীন ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে গোয়ালতোড়ের পেরুমারার বাসিন্দা সৌম্যদীপকে। প্রতি মাসে দেওয়া হবে তিন হাজার টাকা।
জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ সোমবারই সৌম্যদীপকে ডেকে পাঠিয়ে সরকারি অনুদানের কথা জানিয়ে দেন। তিনি এ দিন বলেন, “ওই ছাত্রটির পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। ও যাতে ভাল ভাবে পড়াশোনা করতে পারে, ভবিষ্যতে সরকারি চাকরি পেতে পারে, সেটা দেখা হবে।”
জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর সৌম্যদীপের মতো বহু দরিদ্র পডুয়া আছে। তাহলে সৌম্যদীপকেই সাহায্য কেন? পুলিশ সুপারের জবাব, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই সব করা হয়েছে।’’
বিরোধীদের দাবি, সরকারের মুখরক্ষা করতেই ওই ছাত্রের প্রতি ‘দরদি’ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘ওই ছাত্রের নামে বদনাম দিয়ে ওঁর সরকারের মন্ত্রী যা করেছিলেন, সেই লজ্জার পরে এখন মুখ বাঁচাতে সাহায্যের কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ সেলিমের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী নানা ঘটনায় বারবার টাকা দিয়ে বিতর্ক চাপা দিচ্ছেন। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, ‘‘সরকার ওই ছেলেটিকে সাহায্য করে ভুল সংশোধন করলে বাহবা দেওয়া উচিত। কিন্তু গরিব ওই যুবককে যে অপমান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী করেছেন, তারপরে তিনি পদে থাকবেন কেন?’’
তদন্তের আগেই রাজ্যের কারিগরি মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস কলকাতায় বসে বলেছিলেন, অ্যাডমিট কার্ডে ওই ছবি সৌম্যদীপ নিজে লাগিয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ অবশ্য এ বিষয়ে খোঁজখবর করে এমন কিছুই পায়নি, যাতে সৌম্যদীপকে দায়ী করা যায়।
কী বলছেন মন্ত্রী? এ দিন তাঁর গলায় ভিন্ন সুর। তিনি বলেন, ‘‘আমি সে দিন ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করতে বলিনি। বলেছিলাম, প্রয়োজনে ওকে গ্রেফতার করা হতে পারে।’’ সরকার সৌম্যদীপের পাশে দাঁড়ানোয় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও করেন তিনি।
সাহায্যের আশ্বাস মিলতে সাইকেল গ্যারাজের কাজটা ছেড়ে দিয়েছেন সৌম্যদীপ। গোয়ালতোড় কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হতে পেরে তিনি খুশি। তবে আইটিআইতে সুযোগ পেলে সেখানেই পড়বেন বলেন জানান। তিনি বলেন, “সরকার যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতী ম্যাডামকে ধন্যবাদ।” সৌম্যদীপের বাবা সুদীপ্তবাবু এবং মা তরুলতাদেবীও বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে খোঁজ নিয়ে সত্যিটা জেনেছেন, তাতেই আমরা কৃতজ্ঞ।”
তবে অপমানটা হজম করতে পারছেন না সৌম্যদীপ। তাঁর কথায়, ‘‘মন্ত্রিমশাই গ্রেফতার করতে বলায় আমার সম্মানহানি হয়েছিল। উনি আগে খোঁজ নিলে ভাল করতেন।”
কী করে কুকুরের ছবি এল অ্যাডমিট কার্ডে, তার খোঁজ অবশ্য এখনও দিতে পারেনি পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy