Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মানসিক ভারসাম্যহীনকে চোর সন্দেহে খুন

সন্দেহ এবং তার জেরেই গণপিটুনির শিকার হল মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক। ডায়মন্ডহারবারের হরিণডাঙার পরে এ বার সেই তালিকায় নয়া সংযোজন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মির্জাপুর।

দেহ ঘিরে বিলাপ পরিজনদের। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।

দেহ ঘিরে বিলাপ পরিজনদের। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০৩:২৭
Share: Save:

সন্দেহ এবং তার জেরেই গণপিটুনির শিকার হল মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক। ডায়মন্ডহারবারের হরিণডাঙার পরে এ বার সেই তালিকায় নয়া সংযোজন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মির্জাপুর।

মির্জাপুরে নিজের বাড়ি থেকে প্রায়ই বেরিয়ে পড়তেন হাফিজুল খান (৪২)। এলোমলো হেঁটে আশপাশের গাঁ-গঞ্জে প্রায়ই পা রাখতেন তিনি। বুধবার রাতে, তেমনই বেরিয়ে পড়েছিলেন হাফিজুল। পড়শি গ্রাম, সুরুলিয়ায় একটি বাড়ির সামনে গাছতলায় চুপ করে বসেছিলেন তিনি। অন্ধকারে দুয়ার খুলে অচেনা হাফিজুলকে দেখে চমকে উঠে চিৎকার জুড়ে দিয়েছিলেন সে বাড়ির মহিলারা। আর তারই খেসারত দিতে হল বোধ-বুদ্ধিহীন মানুষটিকে। পিটিয়ে মেরে তাঁকে সেখানেই ফেলে রেখেছিল গ্রামবাসীদের একাংশ। খবর পেয়ে, তাঁর পরিবারের লোকজন ছুটে গিয়েছিলেন সুরুলিয়ায়। রক্তাক্ত হাফিজুলকে ভর্তি করানো হয়েছিল বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তবে, চেষ্টা করেও বাঁচানো য়ায়নি তাঁকে।

বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যান তিনি।

হরিণডাঙার মতোই, ক্ষুব্ধ মির্জাপুরের বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার সকালেই চড়াও হন ওই প্রতিবেশী গ্রামে। ভাঙচুর চালানো হয় বেশ কয়েকটি বাড়িতে। হাফিজুলের দেহ নিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধও শুরু করেন তাঁরা। পুলিশ বুঝিয়ে সুঝিতে তাঁদের তুলতে গেলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও শুরু হয়ে যায়। পরে অবশ্য, পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলে তুলে নেওয়া হয় অবরোধ।

মির্জাপুরের এক প্রবীণ গ্রামবাসী জানাচ্ছেন, প্রায় বিনা দোষেই পিটিয়ে মারা হল ওই যুবককে। তিনি বলছেন, ‘‘ওর কি মাথার ঠিক আছে। রাতের অন্ধকারে গ্রামবাসীরা প্রথমে না হয় চিনতে পারেনি। তা বলে জানাজানি হওয়ার পরে লোকটাকে হাসপাতালে পর্যন্ত পাঠানো হল না!’’

হাফিজুলের ভাই সবুরালি বলেন, ‘‘দাদা ‘আলাভোলা’ হলেও মাঝে মধ্যে বেলডাঙার হাটে সব্জি-ফল বিক্রি করতে যেত। বুধবারও খানিক লিচু নিয়ে হাটে গিয়েছিল। কয়েকটা টাকাও পেয়েছিল। সেই টাকার লোভেই দাদাকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে।’’

দু’দিন আগে, মোষ চুরি করেছে বলে সন্দেহ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবারের হরিণডাঙা গ্রামে এক কলেজ পড়ুয়াকে পিটিয়ে মেরেছিল গ্রামবাসীরা। সে ঘটনায় এক মহিলা ছাড়া গ্রেফতার হয়নি কেউ-ই। তবে, মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলছেন, ‘‘সন্দেহ হলেই কাউকে পিটিয়ে মারতে হবে! আমরা কাউকেই ছাড়ছি না। আগামিকাল ফের সুরুলিয়া গ্রামে অভিযান চালানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

thief mentally disable
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE