Advertisement
E-Paper

দিঘার শব্দরহস্যে নয়া মাত্রা! জালে উঠল প্রচুর ধাতব যন্ত্রাংশ

ইতিমধ্যেই সেগুলি নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে জেলা পুলিশ। কোথা থেকে এই যন্ত্রাংশগুলি জলে ভেসে এল, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে দিঘা শব্দরহস্যের কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

শান্তনু বেরা

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ১২:২৪
উদ্ধার হওয়া ধাতব যন্ত্রাংশ।— নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার হওয়া ধাতব যন্ত্রাংশ।— নিজস্ব চিত্র

কেটে গেল আরও একটা দিন। কিন্তু, দিঘায় জোড়া শব্দরহস্যের কিনারা হল না। উল্টে সামনে উঠে এল আরও এক রহস্য। দিঘায় শব্দরহস্যের পর এ বার শংকরপুরে প্লেনরহস্য।

সোমবার কাকভরে দিঘা থেকে সমুদ্র পথে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে ‘আজমিরা’ ট্রলারের মৎস্যজীবীরা যখন মাছ ধরছিলেন তখন হঠাৎ করে সমুদ্রে ট্রলার বন্ধ হয়ে যায়। ট্রলারের মৎস্যজীবীরা ভয় পেয়ে যান। ট্রলারের মাঝি পশ্চিম মেদিনীপুরের ললাটের বাসিন্দা অদ্বৈত জানার কথায়, “বহু কষ্টে বোঝা গেল জালে বড় কিছু জড়িয়েছে। জলের নীচে খোঁচাখুঁচি করে জাল চিঁড়ে মনে হল মেটালের বড় কোনও বস্তু। তখন বুঝিনি এটা প্লেন। সৈকতে এসে আধিকারিকদের থেকে জানলাম এটা প্লেনের ভগ্নাবশেষ।’’ ট্রলারের আর এক মৎস্যজীবী অমলেন্দু প্রামাণিক এর দাবি, “দেখেই মনে হয়েছিল প্লেন হোক বা যাই হোক, তা বেজায় পুরনো। রহস্যের গন্ধ পেয়ে জালের ক্ষতি করেও পাড়ে নিয়ে এলাম।’’

শুধু মৎস্যজীবীরা নন, হলদিয়া থেকে ডেপুটি কমান্ড্যান্ট মোদিতকুমার সিং-এর নেতৃত্বে কোস্টগার্ডের প্রতিনিধি দল এবং জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসুর নেতৃত্বে আসা জেলা পুলিশের প্রতিনিধি দলেরও একই মত। কোস্টগার্ডের ডেপুটি কমান্ড্যান্ট মোদিতকুমার সিংয়ের দাবি, “বিষয়টি দু’দিন আগের নয়। এটা জলের মতো পরিষ্কার। অন্তত তিন থেকে চার মাস আগে এই ফাইটার প্লেন ক্র্যাশ করেছে বলে মনে হচ্ছে।’’

জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু জানান, এই যন্ত্রাংশ দেখে মনে হচ্ছে এটা ফাইটার প্লেন। কোস্টগার্ড ও ওডিশার চাঁদিপুরের ডিফেন্স রিসার্চ ডেভলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এর সিকিউরিটি ইনচার্জ কর্নেল এস কে পট্টনায়ককে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে প্রায় ছয় মাস আগে এই প্লেন ক্র্যাশ করেছে।’’

আরও পড়ুন: দিঘার সমুদ্র থেকে উঠল যন্ত্রাংশ, দেখুন কেমন ছিল সেগুলি

জেলা পুলিশ, কোস্টগার্ড ও মৎস্যজীবি সকলেই এই যন্ত্রাংশকে খুব পুরনো মনে করছেন। কারণ কি ?

সব পক্ষের দাবি, উদ্ধার হওয়া যন্ত্রাংশের উপর শ্যাওলা ধরে গিয়েছে। জমেছে প্রবালের স্তর। ছোট শামুক-সহ মরচে ধরা এই যন্ত্রাংশের উপর নোনা ধরেছে। খুব সম্প্রতি প্লেনটা সমুদ্রে পড়লে এ সব সম্ভব নয়। আবার শনিবার সকাল এগারোটা পাঁচে দিঘায় জোড়া আওয়াজ শোনা গিয়েছে। এই প্লেন তখন ক্র্যাশ করলে এত তাড়াতাড়ি শ্যাওলার দেখা পাওয়া যেত না বলে দাবি জেলা পুলিশের। তাহলে দিঘার শব্দ রহস্যের সঙ্গে এই প্লেন রহস্যের কোনও যোগ সূত্র নেই ?

গত শনিবার দিঘার সমুদ্রে বিমান ভেঙে পড়া নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এ দিনের যন্ত্রাংশ উদ্ধার সেই সম্ভাবনাকেও আরও বাড়িয়ে দিল বলেই মনে করা হচ্ছিল। যদিও, বিমান ভেঙে পড়ার বিষয়টি এদিন পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। কলাইকুণ্ডার তরফ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, দিঘার সমুদ্রে ফাইটার বিমান ভেঙে পড়ার কোনও খবর নেই।


আজমিরা নামে এই ট্রলারে তোলা হয় যন্ত্রাংশগুলি।— নিজস্ব চিত্র।

এখনই সেই সম্ভাবনার কথা প্রশাসন পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করছে, দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনা। দিঘার শব্দরহস্যের মতো এই প্লেন রহস্যেও অনেক সম্ভাবনার কথা উঠে আসছে। কোস্টগার্ড ও জেলা পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া যন্ত্রাংশের মধ্যে ব্যাপন প্লেট রয়েছে। এখানে বেশ কিছু তথ্য ইংরাজিতে লেখা রয়েছে। সেখানেই লেখা আছে ব্যাঙ্গালুরুর ‘হিন্দুস্থান আরোনোটিক্স লিমিটেড’ এর নাম। এ ছাড়াও বেশ কিছু তথ্য আছে। সেই তথ্য ধরে তদন্ত করা হবে। এই ব্যাপন প্লেটই প্লেন রহস্যের উদঘাটন করবে বলে আশাবাদী মৎস্যজীবীরা।

উদ্ধার হওয়া যন্ত্রাংশ রাখা হয়েছে দিঘা মোহনা কোস্টাল থানার শংকরপুরের এফ আই বি অপারেটিং স্টেশনে। কলাইকুণ্ডা থেকে বায়ুসেনার একটা প্রতিনিধিদল এই সেন্টারে এসে যন্ত্রাংশগুলি পরিদর্শন করবে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর।

Digha Fighter Jet দিঘা Sound শব্দরহস্য
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy