Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন

পাহাড়ে বাহিনী কেন কমলো, ক্ষুব্ধ রাজ্য

পাহাড়ে যখন বিমল গুরুঙ্গের বাহিনীর হাতে রাজ্য পুলিশ রক্তাক্ত, তখনই কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তে হতচকিত রাজ্য সরকার। রবিবার সকালে রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে-কে চিঠি পাঠিয়ে বাহিনী তুলে নেওয়ার কথা জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব।

সিংলা জঙ্গলে গুরুঙ্গের ডেরায় পুলিশ ও সিআরপি।

সিংলা জঙ্গলে গুরুঙ্গের ডেরায় পুলিশ ও সিআরপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৫১
Share: Save:

ছুটির দিনে আচমকা চিঠি পাঠিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাহাড় থেকে ১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল দিল্লি। পরে রাজ্যের প্রবল বিরোধিতায় সিদ্ধান্ত বদলে কেন্দ্র জানায়, আপাতত ৭ কোম্পানি বাহিনী তুলে নেওয়া হবে।

পাহাড়ে যখন বিমল গুরুঙ্গের বাহিনীর হাতে রাজ্য পুলিশ রক্তাক্ত, তখনই কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তে হতচকিত রাজ্য সরকার। রবিবার সকালে রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে-কে চিঠি পাঠিয়ে বাহিনী তুলে নেওয়ার কথা জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব।

শুক্রবার ভোরেই লেপচাবস্তিতে বিমল গুরুঙ্গের গোপন ডেরায় হানা দেয় যৌথ বাহিনী। ওই অভিযানে মৃত্যু হয়েছে রাজ্য পুলিশের অফিসার অমিতাভ মালিকের। তাঁর অন্ত্যেষ্টির পর দিনই কেন্দ্রের এমন চিঠি আসায় হতচকিত হয়ে যান রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। খবর যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি ফোন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী রাজনাথের কাছে সরাসরি এর কারণ জানতে চান। রাজনাথ তাঁকে বলেন, তিনি কিছুই জানতেন না। বিস্তারিত জেনে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। বিকেলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, ১০ কোম্পানির বদলে আপাতত ৭ কোম্পানি বাহিনী তুলে নেওয়া হবে।

সাক্ষাৎ: রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে ফিরছেন বিনয় তামাঙ্গ।

পাহাড়ে বর্তমানে ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। তার মধ্যে তিন কোম্পানি মহিলা বাহিনী-সহ ১২টি সিআরপিএফ-এর। বাকি তিন কোম্পানি সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)। যে ৭টি বাহিনী তুলে নেওয়ার হচ্ছে, সেগুলি সবগুলিই সিআরপিএফ। তিনটি এসএসবি বাহিনীকে প্রথমে তুলে নেওয়ার কথা বলা হলেও শেষমেশ তা রেখে দেওয়া হচ্ছে। যে আটটি বাহিনী রয়ে গেল, সেগুলিকে আপাতত দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় ২০ অক্টোবর পর্যন্ত রাখতে বলা হয়েছে।

এই ১৫ কোম্পানি বাহিনীর মধ্যে ৪ কোম্পানি পুরভোটের সময় থেকেই পাহাড়ে ছিল। আরও ১১ কোম্পানি পাহাড়ের গোলমাল শুরু হওয়ার পরে ধাপে ধাপে পাঠানো হয়। দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা মিলিয়ে ওই বাহিনী বিভিন্ন থানা এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। রবিবার বিকাল অবধি কোনও বাহিনী প্রত্যাহারের খবর নেই বলে রাজ্য পুলিশের পাহাড়ে নিযুক্ত অফিসারেরা জানিয়েছেন। কালিম্পঙের জেলা পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বা দার্জিলিঙের অখিলেশ চতুর্বেদি জানিয়ে দিয়েছেন, বাহিনী প্রত্যাহারের কোনও খবর তাঁদের কাছে এসে পৌঁছয়নি।

শাসক দল তৃণমূলের এক নেতা জানান, পাহাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। তা ব্যাহত করতে শহরের বাইরে বিভিন্ন এলাকায় গোলমালের ছক কষা হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে সিআরপিএফ যৌথ ভাবে সে সব রোখার কাজ করছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করে নিলে গুরুঙ্গ বাহিনীই উৎসাহ পাবে। বাহিনী প্রত্যাহার অনুচিত বলে মনে করছেন বিনয় তামাঙ্গপন্থী নেতারাও। বিজেপি-র জাতীয় স্তরের একাংশের নেতাদের বক্তব্য, লেপচাবস্তিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানের পরেই এনডিএ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন গুরুঙ্গ। তার পরেই এমন সিদ্ধান্তে মনে হতেই পারে যে, গুরুঙ্গের চাপেই বাহিনী প্রত্যাহার করল কেন্দ্র। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেন্দ্র বাহিনী তুলে নেওয়ার পরেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার গুরুঙ্গ শিবিরের তরফে রাজনাথকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE