চিরাচরিত গ্যাস ওভেনে রান্না নয়। যে সব স্কুলের ছাদে সৌর প্যানেল বসানো আছে, সেই সব স্কুল এ বার সৌর প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতের সাহায্যে রান্না করতে পারবে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল। ইতিমধ্যেই দমদম পার্কের কৃষ্ণপুর আদর্শ বিদ্যামন্দিরে এই পদ্ধতিতে রান্না হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, নতুন এই ব্যবস্থায় মিড-ডে মিলের বেশ কিছু পদ রান্না করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা। এ ক্ষেত্রে প্রথাগত গ্যাস ওভেন লাগছে না। সৌর প্যানেলে যে বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে, তার সাহায্যে রান্না হচ্ছে ইনডাকশন ওভেনে। রান্নায় সময়ও লাগছে গ্যাসের থেকে কিছুটা কম।
নতুন এই পদ্ধতিতে মিড-ডে মিল রান্না করাকে বলা হচ্ছে ‘ই-গ্রিন কুকিং’। এই ব্যবস্থায় রান্না করতে স্কুলগুলিকে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো দিয়ে সহায়তা করেছে রাজ্য সরকারের অপ্রচলিত শক্তি উন্নয়ন দফতর। ওই দফতরের প্রকল্প-ইঞ্জিনিয়ার প্রত্যয় সরকার বলেন, ‘‘ইনডাকশন ওভেনে রান্নায় সময় তো বাঁচছেই, সাশ্রয় হচ্ছে খরচেও। কৃষ্ণপুর আদর্শ বিদ্যামন্দিরে এই ব্যবস্থায় দু’ঘণ্টায় ২০০ জন পড়ুয়ার জন্য রান্না করা গিয়েছে। বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে ২০ ইউনিট। এক ইউনিটের দাম ছ’টাকা ধরলে মোট খরচ পড়ছে ১২০ টাকা। অন্য দিকে, গ্যাসে রান্নার ক্ষেত্রে ২০০ পড়ুয়ার জন্য একটি সিলিন্ডার গড়ে তিন দিন যায়। একটি সিলিন্ডারের দাম এক হাজার টাকা ধরা হলে গ্যাসে রান্না করতে এক দিনেই লাগছে প্রায় সাড়ে তিনশো টাকা। সৌরবিদ্যুতে রান্নায় বাঁচছে ২০০ টাকার বেশি।’’ অপ্রচলিত শক্তি উন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের দাবি, নতুন এই ব্যবস্থায় অনেক বেশি পদ রান্না করা যাবে। ইনডাকশন ওভেনে সহজে রান্না করতে পারবেন রাঁধুনিরাও।
গ্যাসের বদলে ইনডাকশন ওভেনে রান্না করে খুশি কৃষ্ণপুর আদর্শ বিদ্যামন্দিরের এক মিড-ডে মিল কর্মী রঞ্জু নায়েক। তিনি বলেন, ‘‘গরমে রান্না করার সময়ে আমাদের ঘেমেনেয়ে একশা হতে হচ্ছে না। রান্নার সময়ে পাখাও চালানো যাচ্ছে। সম্প্রতি আমরা ইনডাকশনে পড়ুয়াদের জন্য ভাত, কাঁচা আম দিয়ে ডাল, সয়াবিন রান্না করেছি।’’
উল্লেখ্য, সারা রাজ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো স্কুলের ছাদে ইতিমধ্যেই সৌর প্যানেল বসেছে। ওই সব স্কুলগুলি অবশ্য এখনও ‘ই-গ্রিন কুকিং’ পদ্ধতিতে রান্না করার পথে এগোয়নি। তবে অপ্রচলিত শক্তি উন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের দাবি, দমদম পার্কের কৃষ্ণপুর আদর্শ বিদ্যামন্দিরে সফল ভাবে ‘ই-গ্রিন কুকিং’-এর মাধ্যমে রান্না হলে অন্য স্কুলগুলিও সেই পথে রান্না করতে উৎসাহিত হবে।
কৃষ্ণপুর আদর্শ বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক সুশান্তকুমার খান বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতরের সহযোগিতায় এই ই-গ্রিন কুকিং চালু হয়েছে। এই ব্যবস্থায় পরিবেশবান্ধব উপায়ে মিড-ডে মিল রান্না করছেন কর্মীরা। ইনডাকশন ওভেনে রান্নার ক্ষেত্রে যে হেতু কোথাও আগুন জ্বালাতে হয় না, তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কম। তবে এই ব্যবস্থায় রান্না সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এখনও কিছু রান্না গ্যাসেই হচ্ছে। আগামী দিনে পুরো রান্না ই-গ্রিন কুকিং পদ্ধতিতে হবে।’’ সুশান্ত জানান, এর ফলে তাঁদের স্কুলে এক দিনের রান্নায় খরচ কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। সাশ্রয় হওয়া খরচে তাঁরা পড়ুয়াদের বেশি পদ খাওয়াতে পারবেন। এতে পড়ুয়াদের পুষ্টিও বাড়বে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)