Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বিয়ে করব না, সোজা স্কুলে ষোড়শী ছাত্রী

বছর ষোলোর মেয়েটির বিয়ে ঠিক করেছিলেন বাবা-মা। কথা ছিল, সোমবার মন্দিরে চার হাত এক করে দেওয়া হবে। কিন্তু নিজেই উদ্যোগী হয়ে বিয়ে রুখে দিয়েছে মেদিনীপুর শহরের দশম শ্রেণির ছাত্রী চুমকি দাস।

সৌমেশ্বর মণ্ডল
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ০৯:০০
Share: Save:

বছর ষোলোর মেয়েটির বিয়ে ঠিক করেছিলেন বাবা-মা। কথা ছিল, সোমবার মন্দিরে চার হাত এক করে দেওয়া হবে। কিন্তু নিজেই উদ্যোগী হয়ে বিয়ে রুখে দিয়েছে মেদিনীপুর শহরের দশম শ্রেণির ছাত্রী চুমকি দাস।

এ দিন সকালে সোজা স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে মেদিনীপুরের রাঙামাটি হাইস্কুলের ছাত্রী চুমকি জানায়, বাড়ি থেকে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষিকা চুমকিকে থানায় পাঠিয়ে দেন। সেই সঙ্গে পুলিশকে বলেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে। পুলিশ চুমকির থেকে সব জেনে তাকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লুসি) কাছে পাঠিয়ে দেয়। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন মৌ রায় বলেন, ‘‘মেয়েটিকে আপাতত হোমে পাঠানো হয়েছে। ওর এখনও বিয়ের বয়স হয়নি। তা ছাড়া, ও পড়তে চায়। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে তারপর ওকে বাড়িতে পাঠাব।’’

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে মেয়েদের বিয়ে ঠেকাতে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি চলছে সচেতনতা প্রচার। তার জেরে রাজ্য জুড়ে বহু নাবালিকা বিয়ে আটকাচ্ছেও। কোথাও পুলিশ বা বিডিও খবর পেয়ে গিয়ে বিয়ে আটকাচ্ছেন, কোথাও আবার চুমকির মতো মেয়েরা স্কুলের সাহায্যে বিয়ে আটকে দিচ্ছে। চুমকিও কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।

শরীর খারাপের জন্য তিনদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল ওই ছাত্রী। রবিবার বিকেলে সে বাড়ি ফেরে। তারপর জানতে পারে, সোমবার মন্দিরে তার বিয়ে হবে। পাত্র মেদিনীপুরের খয়েরুল্লাচকে থাকে। মুরগি খামারে কাজ করে। এমন ‘ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে’র কথা শুনে রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ে ওই ষোড়শী। পরিজনদের বোঝানোর চেষ্টা করে, সে আরও পড়াশোনা করতে চায়। এখন বিয়েতে তার মত নেই। কিন্তু বাবা-মা সে কথা কানে তোলেননি। বিয়ে রুখতে মরিয়া ছাত্রীটি এ দিন সকালে তাই সাইকেলে চেরে সোজা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কাছে হাজির হয়ে যায়। তারপর খুলে বলে সব কথা।

আপাতত বিয়েতে দাঁড়ি পড়ায় ওই নাবালিকা খুশি। সে বলছিল, ‘‘মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিক, পড়াশোনাটাই মন দিয়ে করতে চাই। তারপর নিজের পায়ে দাঁড়াব।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বাতী মিশ্র এই লড়াই তার পাশে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওর বাবা-মাকে বুঝিয়ে বলব এত কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। মেয়েটি যাতে ভাল ভাবে পড়াশোনা করে, সে দিকেও নজর রাখব।’’

দিনের শেষে অন্য সুর চুমকির বাবা খোকন দাসের গলাতেও। ফুটপাথে জামাকাপড়ের দোকান চালানো খোকনবাবু বলছেন, ‘‘বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। শুধু কথাবার্তা চলছিল। মেয়ে তাতেই ভয় পেয়ে গিয়ে এ সব করেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

marry Minor Girl Denies
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE