Advertisement
১৮ মে ২০২৪
21st July TMC Rally

21st July TMC Rally: মমতার মুখ রাখলেন ‘ব্যতিক্রমী’ নেতারা

নেতারা নন। কর্মীরাই তৃণমূলের সম্পদ। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় একাধিক বার এ কথা বলতে শোনা গিয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

ছবি: পিটিআই

বরুণ দে
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২২ ০৮:১৮
Share: Save:

মেদিনীপুর নেতারা গেলেন চারচাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে। কর্মীদের কেউ চাপলেন ট্রেনে। কেউ বাসে। জেলা থেকে ধর্মতলায় একুশের সভায় যাওয়ার ক্ষেত্রে বরাবরই এমন ছবিই ধরা পড়ে। এ বারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেমনটা হলেও ব্যতিক্রমী ছবিও দেখা গিয়েছে। কিছু নেতা কর্মীদের সঙ্গেই চেপেছেন ট্রেনে। কয়েকজন সওয়ার হয়েছেন ভাড়া করা বাসে।

নেতারা নন। কর্মীরাই তৃণমূলের সম্পদ। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় একাধিক বার এ কথা বলতে শোনা গিয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এমনকি, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন কর্মীদেরই। কিন্তু তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, এ সবই তো কথার কথা। দলের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানেও তো নেতারা যান বড় এসি গাড়ি হাঁকিয়ে। কর্মীরা গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে সভায় যান ট্রেনে বা বাসে। এ ঘটনা ঘটেছে এ বারেও। কিন্তু কিছু ‘ব্যতিক্রমী’ নেতা মুখ রেখেছেন মমতার। যেমন, সমাবেশের উদ্দেশে এ দিন সকালে মেদিনীপুর থেকে ট্রেনে সওয়ার হন পুরপ্রধান সৌমেন খান। সঙ্গে ছিলেন উপপুরপ্রধান অনিমা সাহা, ‘চেয়ারম্যান ইন ইনচার্জ’ চন্দ্রানী দাস প্রমুখ। পুরপ্রধান বলছিলেন, ‘‘লোকাল ট্রেনেই গিয়েছি। কর্মীদের সঙ্গে। এ ভাবে একসঙ্গে যাওয়ার মধ্যে একটা আনন্দও রয়েছে।’’ কর্মীদের সঙ্গে বাসে করে সমাবেশে গিয়েছেন আরেক ‘চেয়ারম্যান ইন ইনচার্জ’ সৌরভ বসু।

মেদিনীপুরের মতোই খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারও সকালে কর্মীদের সঙ্গে ট্রেনে করে কলকাতা পৌঁছন। তৃণমূলের হিন্দি প্রকোষ্ঠের জেলা সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে, জেলা দেবাশিস চৌধুরী (মুনমুন) ট্রেন এবং কিছু কাউন্সিলরও গিয়েছেন ট্রেনে চেপেই। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বাসে করে ধর্মতলার সমাবেশে গিয়েছেন ঘাটাল পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ। কলকাতায় গিয়ে যাতে কর্মীদের খাওয়া দাওয়ায় কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য ঘাটাল থেকে মাংস ভাত রান্না করে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিভাস বলেন, “কর্মীদের সঙ্গে একসঙ্গে যাওয়ার মজাই আলাদা। আমার নিজস্ব গাড়ি নেই। তাই বাসে গিয়েছিলাম।” চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিভাস অবশ্য চারচাকা গাড়িতে করেই ধর্মতলায় গিয়েছিলেন।

এ বারের একুশের মঞ্চ থেকে অবশ্য তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট বার্তা, ‘‘আমি দেখতে চাই, আমার কর্মীরা সাইকেল নিয়ে গ্রামে ঘুরবে। বিধায়করা পায়ে হেঁটে গ্রামে ঘুরবেন। সাংসদরা দরকার হলে রিকশা করে ঘুরবেন। কর্মীরা চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারবেন।’’ মমতা চেয়েছেন আদর্শ দল হবে তৃণমূল। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। নেতাদের ভাবমূর্তি যে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে বিচার্য হবে তা স্পষ্ট করেছেন অভিষেক স্বয়ং। কিন্তু দেখা গেল, শহরের নেতারাই গণ পরিবহণের উপরে বেশি আস্থা রাখলেন। নেতৃত্বের অবশ্য ব্যাখ্যা, বহু গ্রামীণ এলাকায় রেল সংযোগ নেই। কিন্তু কর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, সেই গ্রামীণ এলাকা থেকেও তো কর্মী, সমর্থকেরা ভাড়া বাসে করে কলকাতা গিয়েছেন। এক সঙ্গে বাস গেলে কি নেতাদের মর্যাদায় বাধে! বিজেপিও অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের খোঁচা, ‘‘ওদের নেতারা কাটমানিতে ফুলেফেঁপে যাচ্ছেন। লোক দেখাতে কিছুজন হয়তো ট্রেনে, বাসে গিয়েছেন!’’

নেত্রী জানিয়েছেন, দলের কেউ খারাপ অবস্থায় থাকলে তাঁকে খবর দিতে। অর্থাৎ বার্তাটা স্পষ্ট— সকলের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে নেতাদের। নেত্রী এ কথা বলার আগেই অবশ্য বুধবার বিকেলে মেদিনীপুর গ্রামীণের প্রয়াত অঞ্জন বেরার বাড়িতে কলকাতা যাওয়ার আগে পৌঁছেছিলেন জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা খড়্গপুরের (গ্রামীণ) বিধায়ক দীনেন রায়। অঞ্জন তৃণমূলের মণিদহ অঞ্চলের সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছিলেন। একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে যেতেন। এলাকার কর্মীদের নিয়ে মেদিনীপুর স্টেশনে চলে আসতেন আগের দিনই। বুধবার বিকেলে প্রয়াত ওই তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন দীনেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘ওর বৃদ্ধা মা, স্ত্রী সহ পরিজনেদের খোঁজখবর নিতেই বাড়িতে গিয়েছিলাম।’’ নেত্রী গড়তে চান আদর্শ দল। তাঁর চাই আদর্শ নেতা। অন্তত একুশ স্মরণে পাওয়া গেল ব্যতিক্রমী নেতাদের।

(তথ্য সহায়তা: অভিজিৎ চক্রবর্তী, দেবমাল্য বাগচী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

21st July TMC Rally TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE