বাড়িতে বসে কাজের বিনিময়ে মিলবে মোটা মাইনে। এই আশ্বাসে প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খুইয়েছিলেন পাঁশকুড়ার এক যুবক। প্রতারিত ওই যুবকের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে দমদম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এক মহিলা ও ভুয়ো কল সেন্টারের মালিকককে। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করছে পাঁশকুড়া থানার পুলিশ। পাশাপাশি, ভুয়ো কল সেন্টারে যুক্ত ১৭ জন মহিলার বিরুদ্ধে দমদম থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের এক ইনস্পেক্টরের বাড়ি ভাড়া নিয়েই চলত ওই ভুয়ো কল সেন্টার।
তাপসকুমার হাজরা নামে বাহারপোতা গ্রামের এক যুবক সম্প্রতি পাঁশকুড়া থানায় আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ করেন। তাপসের দাবি, তাঁকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কয়েক দফায় মোট ৫ লক্ষ ৮৬ টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি সংস্থা। তদন্ত শুরু করে পুলিশ। সাহায্য নেওয়া হয় সাইবার শাখার। গত শনিবার পাঁশকুড়া থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে বৈশাখী রায় নামে হুগলির উত্তরপাড়ার এক মহিলাকে গ্রেফতার করে। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, দমদমের মতিলাল কলোনিতে কলকাতা পুলিশের এক ইনস্পেক্টরের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বারাসতের বাসিন্দা ঘনশ্যাম হালদার ভুয়ো কল সেন্টার চালাচ্ছেন।
সোমবার দুপুরে পাঁশকুড়া থানা দমদম থানা পুলিশের সহযোগিতায় ওই কল সেন্টারে পৌঁছয়। ১৭ জন মহিলা তখন সেখানে কাজ করছিলেন। কিছুক্ষণ পরে ঘনশ্যামও আসেন। পাঁশকুড়া পুলিশ ঘনশ্যামকে গ্রেফতার করে। ধৃতকে মঙ্গলবার তমলুক আদালতে তোলা হলে তার চার দিন পুলিশ হেফাজত হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘনশ্যাম ভুয়ো কল সেন্টার খুলে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার কারবার চালাতেন। তাঁর কল সেন্টারে অনেক মহিলা কাজ করেন। তাঁদের দায়িত্ব ছিল, বেকার যুবক-যুবতীদের ফোন করে ফাঁদে ফেলা। এক লক্ষ টাকা হাতাতে পারলে একজন মহিলা ১০ হাজার টাকা কমিশন পেতেন। প্রতারিতদের মোবাইলে ভুয়ো মেসেজ-সহ যাবতীয় তথ্য পাঠানোর কাজ ঘনশ্যামই করতেন।
জেলা পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গত ৮ ফেব্রুয়ারি এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করে সোমবার দমদম থেকে ভুয়ো কল সেন্টারের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেখানে কর্মরত ১৭জন মহিলার বিরুদ্ধে দমদম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তাঁদের নোটিস পাঠানো হবে। তদন্তের স্বার্থে তাঁদেরও ডেকে পাঠানো হতে পারে। সহযোগিতা না করলে গ্রেফতার করা হবে।’’ প্রতারিত বছর পঞ্চাশের তাপস একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে বসে কাজ করে মাসে ৬০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে, এরকম একটি মেসেজ পাই। ওদের দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করি। তারপর গত এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ওই সংস্থায় ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা দিয়েছি অনলাইনে। চাকরি না পাওয়ায় অভিযোগ জানাই। শুনেছি দু'জন ধরা পড়েছে। টাকা ফেরতের অপেক্ষায় রয়েছি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)