জেলাস্তরে বইমেলার পাশাপাশি গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জুড়ে ছোট ও বড় আকারে বিভিন্ন সময়ে বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে ঘটা করে সরকারি উদ্যোগে। উদ্দেশ্য, ছাত্রছাত্রী তথা সাধারণের মধ্যে বই পড়ার উৎসাহ দান। অথচ, একই উদ্দেশ্যে এক সময় গড়ে তোলা হয়েছিল একাধিক শহর ও গ্রামীণ গ্রন্থাগার। ওই সব গ্রন্থাগারের জন্য বই কিনতে সরকারি বরাদ্দও রয়েছে। কিন্তু কেমন চলছে ওই সব গ্রন্থাগার। অন্তত পূর্ব মেদিনীপুরের পরিসংখ্যান বলছে, কর্মীর অভাবে জেলায় গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলির প্রায় এক চতুর্থাংশ দিনের পর দিন বন্ধ রয়েছে কর্মীর অভাবে। কর্মীর অভাবে ধুঁকছে জেলা গ্রন্থাগার এবং শহর গ্রন্থাগারগুলিও।
প্রতিদিন বিকেলে খবরের কাগজ ও গল্পের বই পড়তে বাড়ির কাছে গ্রন্থাগারে যেতেন নন্দকুমারের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের বছর পঞ্চান্নর প্রদ্যোৎ সামন্ত। কিন্তু গত দু’মাস ধরে সেই অভ্যাসে ছেদ পড়েছে। কারণ গ্রন্থাগারে যে কর্মী ছিলেন তিনি অবসর নেওয়ার পর থেকে আর লোক নেই। ফলে গ্রন্থাগার তালা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। শুধু শ্রীকৃষ্ণপুর তুষার স্মৃতি গ্রন্থাগার নয়, জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার এভাবে তালা বন্ধ হয়ে রয়েছে স্রেফ কর্মীর অভাবে। ফলে ওইসব গ্রামীণ গ্রন্থাগারে গিয়ে খবরের কাগজ, পত্রপত্রিকা, গল্প-উপন্যাস সহ বিভিন্ন ধরনের বই ও পাঠ্যবই পড়তে যাওয়া স্কুল-কলেজের পড়ুয়া-সহ সাধারণ পাঠকেরা সমস্যায় পড়েছেন। তেমনই এক পাঠক প্রদ্যোৎ সামন্ত বলেন, ‘‘প্রতিদিন বিকেলে গ্রন্থাগারে গিয়ে খবরের কাগজ ও গল্পের বই পড়তাম। বাড়ির ছেলেমেয়েদের জন্যও মাঝেমধ্যে বই নিয়ে আসতাম। কিন্তু গ্রন্থাগারিক অবসর নেওয়ার পরে গত দু’মাস ধরে গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় খুবই অসুবিধায় পড়েছি।’’
গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সরকারিভাবে ১১০টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার, ১০টি শহর গ্রন্থাগার (টাউন লাইব্রেরি) ও তমলুক জেলা গ্রন্থাগার মিলিয়ে মোট ১২১টি গ্রন্থাগার রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, জেলা গ্রন্থাগারে একজন গ্রন্থাগারিক সহ মোট ১০ জন কর্মী থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে গ্রন্থাগারিক সহ আছেন মাত্র তিনজন। একই অবস্থা শহর গ্রন্থাগারে। প্রতিটি শহর গ্রন্থাগারে একজন গ্রন্থাগারিক সহ চারজন কর্মী থাকার কথা। অথচ অধিকাংশ গ্রন্থাগারেই তা নেই বলে অভিযোগ। প্রতিটি গ্রামীণ গ্রন্থাগারে একজন গ্রন্থাগারিক ও একজন জুনিয়র লাইব্রেরি অ্যাটেন্ডেন্ট (জেএলএ) থাকার কথা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রয়েছেন একজন কর্মী। জেলার সব গ্রন্থাগারগুলি মিলিয়ে গ্রন্থাগারিক সহ অন্যান্য কর্মী মোট ২৭০ জন থাকার কথা। অথচ বর্তমানে রয়েছেন ৫৬ জন। ফলে কর্মীর অভাবে জেলার প্রায় ৩০টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার তালা বন্ধ রয়েছে। কর্মীর অভাবে একজন গ্রন্থাগারিককে একাধিক গ্রামীণ গ্রন্থাগারের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে।