Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি নিয়ে কড়া রাজ্য

জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মতে, ডেঙ্গি প্রতিরোধে এ বার কড়া অবস্থান নিয়েছে রাজ্য। কোনও রকম গাফিলতি কিংবা উদাসীনতা যে বরদাস্ত করা হবে না তা এই পদক্ষেপেই স্পষ্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২০

ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে জেলায়। শুধু খড়্গপুরেই ইতিমধ্যে ৭০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। ডেঙ্গি প্রতিরোধে কেন আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাকে চিঠি দিয়ে এ বার তা জানতে চাইল জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

জবাব যে চাওয়া হয়েছে তা মানছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবুও। তাঁর কথায়, “এটা প্রশাসনিক বিষয়। যা জানতে চাওয়া হয়েছে তা জানানো হচ্ছে।” তাঁর সংযোজন, “জেলায় অনেক আগে থেকে সচেতনতামূলক প্রচার শুরু হয়েছে। এখন সচেতনতামূলক প্রচারের উপর আরও জোর দেওয়া হচ্ছে।”

মাস কয়েক আগে থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় চোখ রাঙাতে শুরু করে ডেঙ্গি। তারপরেও ডেঙ্গি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। রাজ্যের একাংশ স্বাস্থ্যকর্তার মতে, ডেঙ্গির প্রকোপ যে বাড়তে পারে, তার পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল জেলার কাছে। মেদিনীপুর, খড়্গপুরের মতো শহরের নানা জায়গায় মশার লার্ভার খোঁজ মিলেছিল। তাও জেলার যে পদক্ষেপ করার কথা ছিল তা যথাযথ করেনি। জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মতে, ডেঙ্গি প্রতিরোধে এ বার কড়া অবস্থান নিয়েছে রাজ্য। কোনও রকম গাফিলতি কিংবা উদাসীনতা যে বরদাস্ত করা হবে না তা এই পদক্ষেপেই স্পষ্ট।

খড়্গপুর শহরের ভবানীপুর, ইন্দা, গোলবাজার, কৌশল্যা, মালঞ্চ, তালবাগিচা, শ্রীকৃষ্ণপুর, দেবলপুর, খরিদা, উত্তর সিমলা, সুভাষপল্লি, নিউ সেটেলমেন্ট এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমসিম খাচ্ছে পুর-প্রশাসন। গত সোমবার তড়িঘড়ি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে পুরসভা, স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি রেলের আধিকারিকেরা ছিলেন। একটি মনিটরিং কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দিন কয়েক আগেও রেলশহরে নতুন করে ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। কেন এই পরিস্থিতি? খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের বক্তব্য, “শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তবে এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। মশা নিধনে অভিযান চলছে। পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখা হয়েছে।”

জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার অবশ্য দাবি, “প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই করা হয়েছে। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। জেলাস্তরে বৈঠক যেমন হয়েছে, তেমন পুরসভাস্তরেও বৈঠক হয়েছে। ডেঙ্গি প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচির ওপর জোর এ বার শুরু থেকেই জোর দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং, হোর্ডিং, ব্যানার থেকে বাসিন্দাদের নিয়ে পদযাত্রা- সবই হয়েছে।”


১ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে সাফাইয়।

বুধবার খড়্গপুর শহরের ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে নজরদারি চালিয়েছে মনিটরিং কমিটি। ওই তিনটি ওয়ার্ড রেল এলাকায় হওয়ায় জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক, পুরপ্রধান ছাড়াও ছিলেন রেলের আধিকারিকেরা।

এই তিনটি ওয়ার্ডে নজরদারি নিয়ে অবশ্য তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাকে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, অন্য ওয়ার্ডগুলি অবহেলিত। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে জেলায় ৭৪জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মধ্যে ৭০জন খড়্গপুর শহরের। বিরোধীরা অবশ্য তোপ দেগেছেন স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধেও। তাঁদের দাবি, শহরের প্রায় কয়েক হাজার মানুষের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে। স্বাস্থ্য দফতর তা প্রকাশ্যে আনছে না।

খড়্গপুরে সিপিএমের জোনাল সদস্য অনিল দাস বলেন, “শহরে ডেঙ্গি মহামারীর আকার নিয়েছে। সরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম মিলিয়ে কয়েক হাজার আক্রান্তের চিকিৎসা চলছে। অথচ মনিটারিং কমিটি গড়ে দায় সারতে চাইছে রাজ্য। লোক দেখানো কর্মসূচি বন্ধ করে সমস্ত ওয়ার্ডকে দ্রুত ডেঙ্গিমুক্ত করা হোক।”

যদিও এই নজরদারি প্রতিটি ওয়ার্ডে চলবে বলেই দাবি করেছে স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা। এ দিন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “অভিযান ঠিক মতো চলছে কি না সেটা দেখতেই তো এই কমিটি। প্রতিটি ওয়ার্ডেই যাবেন সদস্যরা। সোমবার থেকে ১০-১২জন শ্রমিক নামিয়ে বিশেষ অভিযান হবে।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত ডেঙ্গি রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’

গোলবাজার ও তার আশেপাশের এলাকাও পরিদর্শন করে কমিটি। সেখানেও জল জমে থাকতে দেখা যায়। জমা জলে মশার লার্ভাও রয়েছে। পরিদর্শক দলের আশ্বাস, জমা জল পরিষ্কার করা হবে।

ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

Dengue Malaria Water pollution Mosquitoes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy