পঞ্চায়েত ভোটের আগে জাতিসত্তার আন্দোলনে ক্রমেই জটিল হচ্ছে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি। ফাইল ছবি।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে জাতিসত্তার আন্দোলনে ক্রমেই জটিল হচ্ছে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি। নানা সংগঠন সুর চড়াচ্ছে। তবে মঙ্গলবার কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে প্রশাসনের। সন্ধ্যায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বাদল কিস্কু গোষ্ঠী।
আজ, বুধবার দু’দফা দাবিতে পুরভবনের সামনে অনির্দিষ্টকালীন ধর্নায় বসছে ভারতীয় আদিবাসী ভূমিজ সমাজ। সংগঠনের দাবি, পুরসভার রবীন্দ্র পার্কে তাদের ধর্মাচরণের (শারুল থান) অনুমতি দিতে হবে। সাবিত্রী সিনেমা মোড়ে চুয়াড় বিদ্রোহের শহিদ রঘুনাথ সিংয়ের পূর্ণাবয়ব মূর্তি বসাতে হবে। জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে এপ্রিলের গোড়ায় ঘাঘর ঘেরার ডাক দিয়েছিল কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ। খেমাশুলিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ হয়। পাশাপাশি আদিবাসী কুড়মি সমাজ খেমাশুলিতে রেল অবরোধও করেছিল।
ফের ২৪ এপ্রিল জঙ্গলমহলের চার জেলায় (ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া) হুড়কা জামের ডাক দিয়েছে কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ। কুড়মি সমাজ, পশ্চিমবঙ্গ’-এর মুখপাত্র রাজেশ মাহাতো বলেন, ‘‘এই বন্ধের ডাক আমাদের সংগঠনই দিয়েছে। তবে বন্ধ ২৪ এপ্রিলই হবে না পরে, তা সন্ধ্যায় বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেব। তবে সমাবেশ ১ মে হবে।’’ আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা কিন্তু কোনও বন্ধ ডাকিনি।’’ বন্ধ নিয়ে একই ভাবে দূরত্ব বজায় রেখেছে কুড়মি সম্প্রদায়ের আরেকটি সংগঠন পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজ। এই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক শুভেন্দু মাহাতো বলেন, ‘‘এই বন্ধ নিয়ে যেমন আমাদের কোনও সমর্থন নেই, তেমনই বিরোধিতাও নেই। তবে জাতিসত্তার দাবির প্রতি আমাদেরও সমর্থন রয়েছে।’’
এ দিন সকাল থেকে ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের দফতরে ঘেরাও চালায় ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বাদল কিস্কু গোষ্ঠী। সোমবার সকালে শুরু হওয়া ওই ঘেরাওয়ে শামিল হয় সাঁওতাল সম্পদায়ের একাধিক সামাজিক সংগঠনও। রাত পর্যন্ত ঘেরাও হয়ে ছিলেন জেলাশাসক। সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব জেলাশাসকের কাছে খোঁজখবর নেন। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরে সন্ধ্যায় ঘেরাও প্রত্যাহার করা হয়। সংগঠনের ঝাড়গ্রাম জিলা পারগানা ঢাঙ্গা হাঁসদা বলেন, "প্রশাসনের আশ্বাসে ঘেরাও কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে।"
তিনি জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে ঝাড়গ্রাম সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে সাঁওতালি মাধ্যমে পাঠক্রম চালুর লিখিত আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সাঁওতালি শিক্ষা পর্ষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত একটি সরকারি নজরদারি কমিটি গড়ে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পাঠদানের বিষয়টি দেখভাল করা হবে বলে শিক্ষা দফতর আশ্বাস দিয়েছে।
এ ভাবে জাতিসত্তার আন্দোলন দানা বাঁধায় শাসকদলকেই দুষছে বিরোধীরা। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সহ সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলছেন, ‘‘গোড়া থেকেই কুড়মি ও আদিবাসীদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে এসেছে তৃণমূল। কুড়মি ও আদিবাসী ভাইবোনেরা শাসকদলের এই কৌশল বুঝে গিয়েছেন। তাই তাঁরা অধিকারের দাবিতে পথে নেমেছেন। এজন্য তৃণমূলের সরকারই দায়ী।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার বলেন, ‘‘সংবিধানসম্মত ভাবে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার উপযুক্ত ভূমিকা পালন না করে জনগোষ্ঠীগুলিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার কারণেই এই পরিস্থিতি।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘জনজাতি ও কুড়মি কল্যাণে আমাদের সরকার যা করেছে, তা আগের কোনও সরকার করেনি। বিরোধীরাই উস্কানি দিয়ে অশান্তি ছড়াতে চাইছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy