E-Paper

পড়ুয়াকে রক্ত দিয়েই শিক্ষিকা থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধা

সুস্মিতার চেষ্টায় গত কয়েক বছরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ পর্যন্ত ১৮টি থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা শিবির হয়েছে।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২২
পড়ুয়াদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় শিবিরে সুস্মিতা ঘোষ মণ্ডল।

পড়ুয়াদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় শিবিরে সুস্মিতা ঘোষ মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।

প্রায় ন’বছর আগের কথা। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক স্কুল পড়ুয়াকে রক্তদানই বদলে দিয়েছে শিক্ষিকা সুস্মিতা ঘোষ মণ্ডলের জীবন-দর্শন! বছর ন’য়েক পরে সেই শিক্ষিকাই এখন ঝাড়গ্রাম জেলায় থ্যালাসেমিয়া সচেতনতার অন্যতম অগ্রপথিক।

সুস্মিতার চেষ্টায় গত কয়েক বছরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ পর্যন্ত ১৮টি থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা শিবির হয়েছে। যদিও বিষয়টিকে ‘সিন্ধুতে বিন্দুবৎ’ বলেই মনে করেন সুস্মিতা নিজেই। তবে এর একটি সদর্থক দিকও তৈরি হচ্ছে বলে মানেন তিনি। একাংশ অভিভাবক এখন সচেতন হয়ে তাঁদের সন্তান থ্যামাসেমিয়া বাহক কি না, সে জন্য রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। সুস্মিতার প্রচারে সাড়া দিয়ে বিয়ের আগে হবু বর-কনেরও থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানো হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম শহরের বলরামডিহি এলাকার অশোক বিদ্যাপীঠ নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষিকা সুস্মিতা ২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান পেয়েছেন। পুঁথি শিক্ষার পাশাপাশি তিনি লোকশিক্ষায় জোর দেন। শহরের প্রান্তিক বলরামডিহি এলাকার ওই সরকারি প্রাথমিক স্কুলটিতে মূলত অভাবী পরিবারের ছেলেমেয়েরাই পড়ে। সুস্মিতার উদ্যোগেই ওই স্কুলের পড়ুয়াদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় শুরু হয়েছিল। প্রত্যেক পড়ুয়ার রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে তাদের কার্ডও দেওয়া হয়। যাতে অভিভাবকরা সন্তানের রক্তের গ্রুপ জানতে পারেন। স্কুলের নথিতে প্রত্যেক পড়ুয়ার নাম-ঠিকানার পাশে লেখা হয় পড়ুয়াদের রক্তের গ্রুপও। পড়ুয়াদের শেখানো হয়, কেন রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করাটা জরুরি। এ ব্যাপারে সচেতন করা হয় অভিভাবকদেরও। সুস্মিতার উদ্যোগে স্কুলে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা শিবিরও করা হয়।

জানা গেল, ২০১৪ সালে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুশ্রেণির এক খুদে পড়ুয়াকে দেখে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন স্কুলের টিচার-ইনচার্জ সুস্মিতা। রক্তের সঙ্কটের সময় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তরা সমস্যায় পড়েন। সুস্মিতার স্কুলের পড়ুয়াটিকেও একবার সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। রক্তের গ্রুপ এক হওয়ায় সুস্মিতা ওই পড়ুয়ার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন। সুস্মিতা বলেন, ‘‘সেই সময়ই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, স্কুলের পাঠদানের পর অবসর সময়ে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা প্রচারের কাজ করব। ন’বছর ধরে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন স্কুলে কর্মসূচি করি।’’ লাইফলাইন নামে একটি সংস্থা গড়ে সচেতনতার কাজ করেন ওই শিক্ষিকা। জেলার বিভিন্ন স্কুলে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা ও নির্ণয় শিবিরের আয়োজন করেন নিয়মিত। জামবনি ব্লকের বারুণশোল বেনারসীলাল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন বাগ বলছেন, ‘‘সুস্মিতাদির উদ্যোগে আমাদের স্কুলে সচেতনতা শিবির হয়েছে। কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি করা গিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষাও করানো হয়েছে।’’

পাশাপাশি, রক্তদান সম্পর্কেও নিয়মিত প্রচার করেন সুস্মিতা। নিজের স্কুলে বছরে দু’টি রক্তদান শিবির করেন। এ ছাড়াও কোথায় রক্তদান শিবির হলে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হাজির হয়ে যান তিনি। রক্তের সঙ্কট দাতা জোগাড়ও করে দেন। বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন রক্তের তালিকাও নখদর্পণে রাখেন। শিক্ষাদানের পাশাপাশি, সামাজিক কর্মসূচিতে সুস্মিতার এই উদ্যোগের কারণে আর্দশ শিক্ষিকা হিসেবে ২০১৭ সালে পেয়েছেন শিক্ষারত্ন সম্মান। ২০২৮ সালে অবসর নেবেন। তারপর পুরোপুরি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্য রক্তের ব্যাঙ্ক তৈরি করতে চান এই শিক্ষিকা!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Thalassemia Jhargram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy