Advertisement
E-Paper

‘এসপি ম্যাডাম’ নেই, ফাঁপরে জেলা তৃণমূল

যখন জেলায় ছিলেন বিরোধীরা বলতেন, পুলিশ সুপার নন, তিনি আসলে তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী। সেই ভারতী ঘোষ আর পশ্চিম মেদিনীপুরে নেই। ফলে, ভোটের মুখে তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। শাসক দলের অনেক নেতারই উদ্বেগ, একে ‘এসপি ম্যাডাম’ নেই। তার উপর দলে কোন্দল ও জোটের কাঁটা। এত কিছু সামাল দেওয়া যাবে কী করে!

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৬ ০২:০৩
তৃণমূলের জেলা নেতা-নেত্রীদের মধ্যমণি ভারতী ঘোষ। এই দৃশ্যেই অভ্যস্ত ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর।

তৃণমূলের জেলা নেতা-নেত্রীদের মধ্যমণি ভারতী ঘোষ। এই দৃশ্যেই অভ্যস্ত ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর।

যখন জেলায় ছিলেন বিরোধীরা বলতেন, পুলিশ সুপার নন, তিনি আসলে তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী। সেই ভারতী ঘোষ আর পশ্চিম মেদিনীপুরে নেই। ফলে, ভোটের মুখে তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। শাসক দলের অনেক নেতারই উদ্বেগ, একে ‘এসপি ম্যাডাম’ নেই। তার উপর দলে কোন্দল ও জোটের কাঁটা। এত কিছু সামাল দেওয়া যাবে কী করে!

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার থাকাকালীন শাসক-ঘনিষ্ঠতার জন্য বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছেন এই আধিকারিক। কখনও প্রকাশ্য সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলে বিতর্কে জড়িয়েছেন, আবার সবং কলেজে ছাত্র খুনের পরে কিংবা পিংলা-বিস্ফোরণের পরে তৃণমূলের ব্যাখ্যার সমর্থনে মুখ খুলেছেন। আরও অভিযোগ, খড়্গপুরে পুর-নির্বাচনের পরে পুলিশ-মাফিয়া যোগসাজশে বাম-বিজেপি কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে পুরবোর্ড তৃণমূলের হাতে তুলে দেওয়ারও প্রধান কারিগরি ছিলেন এই ভারতীদেবীই। তা ছাড়া, কখনও তৃণমূলের যুযুধান গোষ্ঠীর নেতাদের নিজের অফিসে ডেকে নরমে-গরমে মিলিয়ে দিয়েছেন, কখনও আবার প্রশাসনিক সভা থেকে বন্যাত্রাণ বিলি করেছেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে।

সেই ভারতী ঘোষ আর পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার নেই। ভোটের আগেই বদলি হয়ে গিয়েছেন। তাঁর ঘাড়ে এখন মাওবাদী দমনের বিশেষ দায়িত্ব। অফিস বাঁকুড়ায়। এই অবস্থায় ভোটের মুখে দলের গোষ্ঠী কোন্দল সামাল দেওয়া নেয়ে ফাঁপরে পড়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতারা। এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘২০১৩ সাল থেকে তো এই কাজটি আমাদের করতেই হয়নি। ফলে অভ্যেসটাই যে চলে গিয়েছে। এতদিন তা করে দিতেন পুলিশ সুপার। তা ছাড়া, দলের কোনও নেতার কথা অন্য নেতা শুনবেনই বা কেন?” আর এক নেতার আফশোস, “নির্বাচনের কারণেই ওঁকে (ভারতী ঘোষকে) সরতে হল। তার উপর আবার সিপিএম-কংগ্রেস জোট হচ্ছে। কী যে হবে বুঝতে পারছি না।’’

ফলে, প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই নারায়ণগড় হোক বা কেশিয়াড়ি, পিংলা হোক বা সবং, ডেবরা, খড়্গপুর সদর বা খড়্গপুর গ্রামীণ, ঝাড়গ্রাম, শাসক দলের বিক্ষোভ চলছেই। মাথায় হাত নেতাদের। ভেবে পাচ্ছেন না কী ভাবে ক্ষোভ সরিয়ে সকলকে এক ছাতার তলায় এনে নির্বাচনী প্রচারে নামানো যাবে।

বিরোধীরাও এক বাক্যে বলছে, ভারতীদেবীই এই জেলায় তৃণমূল দলটাকে সামলাতেন। বিজেপি-র জেলা সভাপতি ধীমান কোলে বলেন, “আগে তো উনিই তৃণমূলের জেলা সভাপতির ভূমিকাও পালন করতেন। এখনও বাইরে থেকে কলকাঠি নাড়তেও পারেন। তবে নির্বাচন কমিশনের ভয়ে তা এখনও শুরু হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। নাহলে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এত প্রকাশ্যে আসত না।।’’ আর জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়ার কথায়, “আগে তো সরাসরি তৃণমূলের পক্ষ নিয়েই পুলিশ চলত। এখন দলীয় কোন্দল থামছেই না দেখে মনে হচ্ছে, পুলিশের আর সরাসরি হস্তক্ষেপ নেই। নির্বাচন কমিশনের ভয়েই অবশ্য এটা হচ্ছে।’’

কী ভাবে শাসক দলের খুঁটিনাটি সামলাতেন ভারতীদেবী?

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ‘ম্যাডামে’র একটা অন্য দাপট ছিল। যা বলতেন, সেটাই করতে বাধ্য ছিলেন নেতারা। উপরের দিকের নেতা হলে নিজের অফিসে ডেকে বুঝিয়ে সমস্যা মেটাতেন আর পঞ্চায়েত বা ব্লক স্তরের ছোটখাটো নেতাদের সমস্যা হলে স্থানীয় ওসি-দের দিয়ে সেরে নিতেন। খড়্গপুরের এক নেতার কথায়, “এমন ভাবে কথা বলতেন যা কোনও দিন রাজ্য নেতারা বলেননি। কান গরম হয়ে যেত। কিন্তু নিরুপায় ছিলাম।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে এ সব কথা মানছেন না। ভারতী ঘোষের নাম এড়িয়ে দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “দল দলের মতো চলে। প্রশাসন তার মতো। আগে সিপিএম প্রশাসনের উপর খবরদারি করত। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তা করতে দেন না। দল আগেও সুশৃঙ্খল ভাবে চলত। এখনও চলছে। কোথাও কোনও সমস্যা নেই।’’

আর যাঁকে নিয়ে এত কিছু, সেই ভারতীদেবী এ সব শুনে রেগে কাঁই। বলে উঠলেন, “এ সব প্রশ্ন আমাকে কেন করছেন? আমার নামে অনেক অপপ্রচার হচ্ছে। আমি এর বিরুদ্ধে আদালতে যাব।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy