নদীবাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে দাসপুরে। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।
বর্ষার আর বেশি দেরি নেই। কিন্তু এই বর্ষা এলেই কপালে ভাঁজ ঘাটালবাসীর। দু’দিনের বৃষ্টিতেই নদী উপচে ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি নতুন নয়। আর সেটাই ভাবনার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু বাঁধ সংস্কার ছাড়া এলাকার একাধিক নদীর পাড়কে শক্তপোক্ত করতে সেচ দফতরের কোনও উদ্যোগ নেই। ফলে বাঁধ ভেঙে এলাকা জলমগ্ন হয়ে প়ড়া ঘাটালের খুব চেনা ছবি। তবে প্রশাসনের আশ্বাস, আগাম সতকর্তা হিসাবে নানা রকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধানের দাবি, “বন্যার আগাম সতকর্তা হিসাবে ইতিমধ্যেই একাধিক বার সেচ দফতরের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। বাঁধ সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে। নৌকা-সহ বন্যা মোকাবিলার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
কেমন সেই উদ্যোগ?
জানা গিয়েছে, শিলাবতী ও কংসাবতী নদীর বাঁধের উপর এখন থেকেই ভারী যান চলাচল বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে সেচ দফতর। ঘাটালের রানিচক, প্রতাপপুর, গৌরা, খুকুড়দহ, কোন্নগর-সহ বিভিন্ন নদী বাঁধের উপর রাস্তার দু’পাশে সিমেন্টের খুঁটি বসানোও শুরু হয়েছে। দুর্বল বাঁধগুলিকে চিহ্নিত করে ২৩ টি ভাগে ভাগ করে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। মজুত রাখা হচ্ছে বালির বস্তা, বালি ও বোল্ডার। বিকল্প আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ঘাটালের মহকুমা সেচ আধিকারিক উত্তম হাজরা বলেন, “কোথাও বালির বস্তা দিয়ে নদীর পাড় উঁচু করা হচ্ছে। কোথাও বাঁধ কেটে সেখানে বোল্ডার ও বালির বস্তা দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে।’’ জেলার সেচ কমার্ধ্যক্ষ নির্মল ঘোষের কথায়, ‘‘বাঁধ সংস্কার করতে সেচ দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
ঘাটালে শিলাবতী, কংসাবতী, ঝুমি, কেঠে নদী দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় পলি জমে জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে অনেক। টানা দু’দিনের বৃষ্টিতেই নদীর পাড় উপছে জলমগ্ন হয়ে পড়ে ঘাটাল পুর এলাকার ১২টি ওয়ার্ড-সহ ব্লকের প্রায় দশটি গ্রাম। সমস্যায় পড়েন ঘাটালের বাসিন্দারা। ২০০৭ সালে রূপনারায়ণ নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে পড়েছিল গোটা মহকুমা। জল ঢুকে পড়েছিল ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল-সহ মহকুমা স্তরের সমস্ত সরকারি দফতরেও। খবর পেয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘাটালে বন্যা পরিদর্শনে এসেছিলেন। তৃণমূল সরকারের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও বন্যার সময় একাধিক বার ঘাটালে এসে নদী-বাঁধ সংস্কারের উপর জোর দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বন্যার আগে সামান্য সংস্কার করেই দায় ঝেড়ে ফেলেছে সেচ দফতর।
তবে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। সেচ দফতর সূত্রের খবর, গত বছর জলের তোড়ে দাসপুর ও ঘাটালে কংসাবতী ও শিলাবতীর একাধিক বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। বাঁধগুলি সংস্কারের কাজ শেষের মুখে। স্থানীয় সামাট ও রাইকুন্ডু বালিপোতা, রাজনগরের চাঁদার, রামদেবপুর, ধর্মা, প্রতাপপুর, রানিচক-সহ একাধিক বাঁধ সংস্কার হয়ে গিয়েছে। জেলার সেচ কমার্ধ্যক্ষ নির্মল ঘোষের দাবি, ‘‘যে সব বাঁধ এখনও বাধা হয়নি-চলতি সপ্তাহেই সব কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy