বালুঘাটায় ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে প্রকৃতি পাঠে মগ্ন পড়ুয়ার দল। নিজস্ব চিত্র
হাতে নোট বুক আর ম্যাগনিফাইং গ্লাস। সকাল সকাল ওরা বালুঘাটার ঝাউ আর ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে হাজির।
পূর্ব মেদিনীপুরের ১৫টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রবিবার সকালে হলদিয়ার বালুঘাটায় প্রকৃতি পাঠ ‘নেচার স্টাডি’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। ছাত্রছাত্রীদের কেউ এসেছিল দিঘা থেকে, কেউ রামনগর কেউ বা ময়নার। বিজ্ঞানমঞ্চের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসে হলদিয়ার চকদ্বীপা স্কুলে টেলিস্কোপের সাহায্যে আকাশ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল শনিবার। রবিবার ভোর হতে না হতেই তারা পৌঁছে যায় বালুঘাটার জঙ্গলে।
জেলার বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক শুচিস্মিতা মিশ্র, কলকাতার একটি কলেজের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক প্রান্তিক ঘোষ ও দুই কলেজপড়ুয়া আঁখি মুখোপাধ্যায় ও সর্বজিত ভট্টাচার্য গাইড হিসেবে ছিলেন। হলদি নদী, হুগলি নদী ও রূপনারায়ণের নামে তিনটি দলে পড়ুয়াদের ভাগ করে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে পাখি, গাছ-পালা, মাটি, পোকামাকড়ের চরিত্র নিরীক্ষণ। বইয়ের বাইরে বেরিয়ে প্রকৃতিকে জানার এমন সুযোগ পেয়ে খুশি পড়ুয়ারাও।
ময়নার শ্রীরামপুর এগ্রিকালচার হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির রাজদীপ সামন্ত ও অভিষেক তরাই এর আগে এমন ভাবে প্রকৃতিকে জানার সুযোগ পায়নি। স্বভাবতই খুবই উচ্ছ্বসিত দু’জন। তাদের কথায়, ‘‘এতো সুন্দর ঝাউবন ও ম্যানগ্রোভের জঙ্গল দেখতে পাবো ভাবিনি।’’ অভিষেক জানায়, রাতের আকাশে টেলিস্কোপের মাধ্যমে তারা দেখে সে খুব আনন্দ পেয়েছে। ম্যানগ্রোভের জঙ্গলও তার ভাল লেগেছে। ঢেকুয়া বিবেকানন্দ অগ্রণী সঙ্ঘ হাইস্কুলের ছাত্র সুরজিত সামন্ত শেয়ালের গর্ত আর সাপ দেখে এতটাই আনন্দ পয়েছে যে ফের সে আসতে চায় প্রকৃতি পাঠের এমন আসরে। পানিপারুল মুক্ত বিদ্যালয়ের সুদীক্ষা মণ্ডলের কথায়, ‘‘শহরের এতো কাছে এমন খাঁড়ি আর ম্যানগ্রোভ জঙ্গল সত্যিই ভাবা যায়।’’
পানিপারুলেরই সঙ্গীতা মাঝি জানায়, এতো ধরনের যে পিঁপড়ে হয় সেটাই তো জানতাম। না। তবে ভাল পাখি দেখতে না পাওয়ায় সকলের গলাতেই হতাশার সুর। রাজদীপ, অভিষেক থেকে সঙ্গীতা প্রত্যেকেই জানিয়েছে, নানা রকমের পাখি দেখতে পেলে আরও ভাল লাগত। মেটেলি, জলঢোঁড়া, চিতি সাপ আর ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে শিয়ালের গর্ত দেখে বেশ উত্তেজিত সুদীক্ষা জানায়, শেয়ালের গর্ত এ ভাবে জঙ্গলের মধ্যে দেখতে পাবো ভাবিনি।
প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক প্রান্তিকবাবু বলেন, ‘‘এখানে আমরা দশ ধরনের পিঁপড়ে দেখেছি। মাকড়সাও অনেক রকম দেখেছি। তবে আরও বেশি পাখি আশা করেছিলাম।’’ তাঁর দাবি, সামনে খেত-খামারে বেশি কীটনাশক দেওয়ার জন্যই হয়তো পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা আঁখি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হলদিয়ার মতো শিল্প শহরের মাঝে এমন পরিবেশ যে আছে, না এলে বোঝাই যেত না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এতদিন বইতে ছেলেমেয়েরা যা দেখে এসেছে, তা সরাসরি হাতের কাছে দেখা ও জানার সুযোগ পেয়ে ওরা খুব খুশি।’’
উদ্যোক্তা শুচিস্মিতা মিশ্র জানান, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪০ জন ছাত্রছাত্রী এসেছিল প্রকৃতি পাঠের এই আসরে। তাদের অনেকেই ফের আসতে চায় বলে জানিয়েছে। সে দিক থেকে এই উদ্যোগ সফল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy