ভয়াবহ সেই ঝড়ের রাতের পর ঘুরেছে পাঁচটা বছর। ২০২০ সালের ২০ মে-র ‘আমপান’ ঘূর্ণিঝড়ের স্মৃতি অবশ্য টাটকা জেলার নদী এবং উপকূলের বাসিন্দারের কাছে। ঝড়ের পাঁচ বছর পূর্তিতে নদী বাঁধের সংস্কার কাজ নিয়ে কোনও এলাকায় বাসিন্দারা খুশি। তো কোথাও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভুটভুটি-ট্রলার মালিকেরা এখনও আর্থিক সাহায্য পাননি বলে জানাচ্ছেন।
জেলার হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, খেজুরি হলদি, রূপনারায়ণ এবং রসুলপুর নদীর তীরে অবস্থিত। আবার দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুরে রয়েছে বঙ্গোপসারের উপকূল। এই সব এলাকাতেই আমপানের প্রভাব পড়েছিল বেশি।
নন্দীগ্রাম
সোনাচূড়া, গোকুলনগর এলাকায় প্রচুর সংখ্যক গাছ রাস্তায় ভেঙে পড়েছিল। কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল এলাকা। কেন্দামারিতে বহু পানের বরজ ভেঙেছিল আর মাছের ভেড়িতে নোনা জল ঢুকে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সে সময় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ জোটেনি। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তাঁরা ভেড়ি এবং বরজ মেরামত করে কাজ চালাচ্ছেন।
কাঁথি
এশিয়ার বৃহত্তম পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরে ক্ষতি হয়েছিল। মাছ নিলাম কেন্দ্রের ছাউনি উড়ে যায়। যা এখনও সারানো হয়নি। রোদ-ঝড় মাথায় মাছ নিলাম হয়। কাঁথি-১ ব্লকে মাজিলাপুর ও নয়াপুটে বাড়ি, গাছ ভেঙেছিল। যাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাঁরা অনেকেই সরকারি ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
দিঘা ও রামনগর
অজস্র বড় গাছ ভেঙে পড়েছিল ১১৬ বি জাতীয় সড়কের উপর। এরপর অবশ্য নতুন করে আর জাতীয় সড়কের দু’দিকে চারারোপণ হয়নি। ঝড়ে বিদ্যুতের লাইন প্রায় সব জায়গাতেই ছিঁড়ে পড়েছিল। তিন-চারদিন বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হয়। ওই পরিস্থিতি এড়াতে দিঘায় এখন মাটির তলা দিয়ে বিদ্যুতের কেবল পাতা হয়েছে। তবে কয়েকশো ভুটভুটি এবং ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাতে সরকারি ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি বলে মৎস্যজীবী মহলে অভিযোগ।
হলদিয়া
বন্দরের একাধিক বার্থে ‘ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজিং সিস্টেম’ বসে গিয়েছিল। সিগন্যালিংয়ের অসুবিধা হয়েছিল। সেই সমস্যা মিটে যায় দ্রুত। একটি চিনি কারখানায় বয়লারের চিমনি ও গুদামে প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল। তা-ও বর্তমানে স্বাভাবিক। বেশি প্রাণহানিও হয়েছিল হলদিয়ায়। ১ নম্বর ওয়ার্ডে সিংহ পরিবারের দুই সদস্য মারা গিয়েছিলেন। পুরসভার তৎকালীন পুর পারিষদ তথা বিজেপি নেতা সত্যব্রত দাস বলেন, ‘‘ওঁরা সরকারিভাবে দু’লক্ষ করে পেয়েছিলেন।’’ পরিবারের সদস্য রামচন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ মিলেছিল। কিন্তও আজও আফশোস হয় ওঁদের জন্য।’’
খেজুরি
খেজুরি-২ ব্লকের পাচুড়িয়া, ওয়াসিলচক এলাকায় রসুলপুর নদীর বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। প্লাবিত হয়েছিল পার্শ্ববর্তী এলাকা। মৎস্য খটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেচ দফতর এখন বেশ কিছুটা অংশ কংক্রিট দিয়ে বাঁধ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন ক্ষতিপূরণও পেয়েছিলেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)