সৈকতে মৃত ডলফিন। নিজস্ব চিত্র
ফের মৃত ডলফিন ভেসে এলো দিঘায়। দিঘা সহ তাজপুর, শঙ্করপুর ও মন্দারমনির উপকূলে বারবার জীবিত ও মৃত ডলফিন ও শুশুক ভেসে আসার ঘটনা দিন দিন বাড়ায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন সমুদ্র বিজ্ঞানী থেকে বন দফতর এবং পরিবেশবিদরাও।
দিঘা বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, শনিবার রাত ১০টা নাগাদ নতুন দিঘার ২ নম্বর স্নানঘাটের কাছে মৃত ডলফিনটিকে দেখতে পান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। উদ্ধার হওয়া মৃত ডলফিনটিতে পচন ধরে গিয়েছে। প্রায় আট ফুট লম্বা ডলফিনটির পচাগলা দেহ দেখে বন দফতরের অনুমান, বেশ কয়েকদিন আগেই মৃত্যু ঘটেছে প্রাণীটির।
প্রসঙ্গত, ডলফিন গভীর সমুদ্রে থাকে। তাই দিঘা বা তার আশেপাশের সমুদ্রের কিনারায় ডলফিন দেখতে পাওয়া বিরল ঘটনা বলেই বন দফতরের বক্তব্য। অথচ দিঘা-মন্দারমনি এলাকায় গত কয়েক মাসে একাধিক ডলফিনের দেখা মিলেছে। এর মধ্যে কিছু দিন আগে মন্দারমনিতে একটি জীবন্ত ডলফিন পাড়ের একেবারে কাছাকাছি এসে পড়েছিল। সমুদ্রে স্নান করতে নামা পর্যটকেরা সেই ডলফিনটির সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ছবি তোলেন। ওই ঘটনা ছাড়া দিঘায় পর পর কয়েকটি ডলফিনের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় চিন্তিত সমুদ্রবিজ্ঞানীরা।
কেন এমন ঘটনা বারবার ঘটছে ?
সমুদ্র বিজ্ঞানী আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, “সমুদ্রে যথেষ্ট দূষণ এর অন্যতম কারণ। ডলফিন গভীর সমুদ্রের প্রাণী। কিন্তু দূষণের জন্য তারা দলছুট হয়ে পড়ছে। সমুদ্রের মাঝে ইকোসিস্টেমের ব্যালান্স নষ্ট হয়ে যাওয়াও এর অন্যতম কারণ। আবার গভীর সমুদ্রে ট্রলিং খুব বেড়ে গিয়েছে। মাছ ধরার ট্রলারগুলির দৌরাত্ম্যে দলছুট হয়ে দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়ছে ডলফিন ও শুশুক। তারাই দিঘা উপকূলে আসছে।’’
দিঘা উপকূলে মৃত ডলফিন বার বার আসার কারণে রীতিমতো উদ্বিগ্ন বন দফতর। বন দফতরের কর্মীরাই প্রতি ক্ষেত্রে মৃত ডলফিনের দেহ সৈকতে পুঁতে দেন। তবে ডলফিন সৈকতে চলে আসার বিষয়টি ভাল চোখে দেখছে না বন দফতর। দিঘা বন দফতরের আধিকারিক অনির্বাণ মিত্র বলেন, ‘‘গত তিন মাসে বেশ কয়েকটি মৃত ডলফিন দিঘা উপকূলে ভেসে এল। সম্ভবত সমুদ্রের মাঝে মৎস্যজীবীদের জালে জড়িয়ে ডলফিনগুলোর মৃত্যু হচ্ছে। এটা সমুদ্রের প্রাণী বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে মোটেও সুখকর নয়। এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা প্রয়োজন।’’ বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে দিঘা বন দফতর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠিয়েছে।
আবার, দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি দেবাশিস শ্যামলের দাবি, “মাছ ধরার নামে যথেচ্ছ ট্রলিংই এর জন্য দায়ী। মাছ ধরার নামে সমুদ্রের তলদেশের জীব বৈচিত্র্য সম্পূর্ণ ধ্বংস করার ফলে সমুদ্রে প্রাণীদের খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। তাই বারে বারে ডলফিনের মতো প্রাণীরা খাবারের সন্ধানে পাড়ের দিকে ছুটে আসতে বাধ্য হচ্ছে। তা ছাড়া যথেচ্ছ পরিমাণে ট্রলার সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়ানোর ফলে জালে আটকেও বহু প্রাণী মারা যাচ্ছে।’’
তবে বিষয়টি বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকরা উদ্বিগ্ন হলেও বারবার ডলফিন ভেসে আসার ঘটনায় দিঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকেই ডলফিন দেখার সুযোগ পেয়ে খুশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy