সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন’ (এনসিবিআই) এক গবেষণায় দাবি করেছে, বায়ুদূষণ যেমন হার্টের রোগ, ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য দায়ী, তেমনি অন্ধত্বের কারণও হতে পারে দূষণই। খুব বেশি ধুলোধোঁয়া আছে, এমন জায়গায় বেশি ক্ষণ থাকলে যেমন ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে, তেমনই ক্ষতি হতে পারে চোখের কনজাঙ্কটিভারও। বাতাসের কণায় ভর করে ভেসে বেড়ায় অনেক ভাইরাস, যার মধ্যে শক্তিশালী অ্যাডিনোভাইরাস চোখে সংক্রমণ ঘটায়। কর্নিয়ায় ছোট ছোট দানা তৈরি হয়। যার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকে, আঠালো তরল বার হয়, পিচুটি জমে যায় চোখে। একেই বলে কনজাঙ্কটিভাইটিস। মূলত ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে এই অসুখ হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে দূষণ, ফুলের রেণু থেকে অ্যালার্জিও এই অসুখের কারণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অসুখটিকে তাচ্ছিল্য করেন সাধারণ মানুষ। আর তাতেই আরও বেড়ে যায় সমস্যা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথমে এক চোখে সমস্যা শুরু হয়। পরে অন্য চোখকেও আক্রমণ করে। কারও কনজাঙ্কটিভাইটিস হলেই ধরে নেওয়া হয়, যে হেতু এই অসুখ ছোঁয়াচে, তাই রোগীর দিকে তাকালেই বুঝি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়— এই ধারণা কি ঠিক? চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘এ অসুখ ছোঁয়াচে ঠিকই, তবে তখনই হবে, যদি রোগীর চোখের কোনও রকম সংস্পর্শে কেউ আসেন। যেমন রোগী নিজের চোখে হাত দিয়ে তার পর হয়তো কিছু একটা ধরলেন, সে জিনিস তার পর আপনিও ধরলেন, আর সে হাত চলে গেল চোখে। তখনই এই অসুখ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কাউকে ছুঁয়ে নিলে কিংবা কারও দিকে তাকালে এই রোগ আপনার হবে না।’’
চিকিৎসক-এর সংযোজন, ‘‘বাড়িতে কারও কনজাঙ্কটিভাইটিস হলে, তাঁর ব্যবহার করা কোনও জিনিসপত্র না ছোঁয়া, তাঁর তোয়ালে, রুমাল, বিছানার চাদর ব্যবহার না করা, তাঁর ঘরে গেলে হাত ভাল করে ধুয়ে তার পরে অন্য কোনও কাজে হাত দেওয়া— এই ক’টা নিয়ম মাথায় রাখতেই হবে।’’
কী কী লক্ষণ দেখে চেনা যায় এই রোগ?
চোখের নীচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ব্যথা বা খচখচ করা, জল পড়া, চোখ জ্বালা করা ও চুলকানি, আলোয় কষ্ট হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা গেলেই অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কখনও কখনও চোখের লোম আঠার মতো জুড়ে যাওয়া বা চোখের নীচে ময়লার আস্তরণ পড়তেও দেখা যায় এই রোগে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ এই রোগটিকে হালকা ভাবে নেন। কিন্তু ঠিক মতো চিকিৎসা না হলে এই রোগ দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। ক্ষতি হতে পারে কর্নিয়ারও। এই রোগ কি কোনও ভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। কনজাঙ্কটিভাইটিস ভাইরাল রোগ, তাই একে আটকানোর তেমন কোনও উপায় নেই। বার বার হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে ঝুঁকি খানিকটা এড়ানো যায়। তবে একেবারেই এই রোগ হবে না, তা বলা যায় না। এই রোগ না হওয়ার কোনও ওষুধ কিংবা ভ্যাকসিন নেই। তাই সাবধানতাই একমাত্র পথ। কনজাঙ্কটিভাইটিস হলে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
কনজাঙ্কটিভাইটিস হলে চোখে জল দেওয়া যায়?
কনজাঙ্কটিভাইটিস হলে চোখে বার বার জলের ঝাপটা দিতে পারেন। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বললেন, ‘‘দিনে ৪-৫ বার ঈষদুষ্ণ গরম জলে এক চিমটে নুন দিয়ে সেই জলে তুলো ভিজিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে পারেন। তুলো চোখের উপর রেখে গরম ভাপও নিতে পারেন। এতে আরাম পাওয়া যায়।’’