আলমারি ভেঙে, বিছানা সরিয়ে তাণ্ডব দুষ্কৃতীদের। এভাবেই কাটা হয়েছে লোহার গ্রিল (ইনসেটে)। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।
ফের চুরি পুজোর শহরে। এ বারের ঘটনাস্থল তমলুকেরই ৫ নম্বর ওয়ার্ড। বুধবার এলাকার এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা চুরির অভিযোগ উঠেছে। দিন পনেরোর মধ্যে এই নিয়ে চুরির ঘটনা পাঁচটা।
পুজোর ছুটিতে ফাঁকা বাড়িতে পরপর চুরির ঘটনা ঘটছিল তমলুকে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহরের ধারিন্দা এলাকার তিনটি এবং আবাসবাড়ি এলাকার একটি মিলিয়ে মোট চারটি বাড়িতে এই কয়েকদিনে হানা দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। লুঠ গিয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার সামগ্রী। অবশ্য পুলিশ এই দুষ্কৃতীদের টিকিও ছুঁতে পারেনি। তবে আটক করা হয়েছে দু’জনকে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পুলিশের ভূমিকা নিয়েই। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া অবশ্য বলেন, ‘‘চুরির ঘটনায় জড়িতদের ধরতে তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করি দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে তমলুকের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সঞ্জিত সিংহের বাড়িতে দুষ্কৃতী হানা হয়েছিল। পরিবারের সবাইকে বেঁধে রেখে অস্ত্র দিয়ে গৃহকর্তার মাথায় ভোজালির কোপ মেরে কয়েক লক্ষ টাকার সামগ্রী লুঠ করে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই পুজোর মধ্যে, অষ্টমীর রাতে শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ধারিন্দা এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটে। নন্দকুমারের চক শিমুলিয়া কামাক্ষ্যা বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন পড়ুয়া সেই সময় বাড়ি ছিলেন না। তাঁর বাড়ির দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঘরে ঢুকে আলমারি থেকে সোনার গয়না ও নগদ মিলিয়ে কয়েকলক্ষ টাকার সামগ্রী লুঠ হয় বলে অভিযোগ।
নবমীর রাতে স্বপনবাবুর বাড়ির ঠিক সামনেই প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক আধিকারিক মনোজ রায়ের বাড়িতে চুরি হয়। পুজোয় ওই পরিবার নৈনিতাল বেড়াতে গিয়েছিল। দশমীর সকালে সেই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরই আরও চমক। জানা যায়, ওই ধারিন্দা এলাকাতেই তমলুক-শ্রীরামপুর সড়কের পাশে চিকিৎসক গৌরহরি আদকের বাড়িতেও চুরি হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রেও গৌরহরিবাবু পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন। দুপুরে বাড়িতে ফেরার পরে তাঁর বাড়ির দরজার তালা খোলা অবস্থায় দেখতে পান। জানা গিয়েছে, দু’ক্ষেত্রেই খোয়া গিয়েছে সোনার গয়না ও নগদ টাকা মিলিয়ে কয়েকলক্ষ টাকার সামগ্রী।
আর বুধবার সকালে দেখা যায়, তমলুক থানারমাত্র তিনশো মিটার দূরে আবাসবাড়ি এলাকার স্বপন হাজরার বাড়িতেও চুরি হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ চুরি হয়েছে দশমীর রাতে। দরজার তালা ভেঙে ও গ্রিল কেটে দুষ্কৃতীরা ঘরে ঢোকে বলে অভিযোগ। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার স্বপনবাবু একটি নামী নির্মাণ সংস্থার সিনিয়র অফিসার পদে কর্মরত। কর্মসূত্রে বিদেশেও ছিলেন স্বপনবাবু। পুজোর ছুটিতে সপরিবারে নন্দীগ্রামে গ্রামের বাড়ি ঘুরতে গিয়েছিলেন। বুধবার সকালে বাড়ি ফিরে দেখেন, বাড়ির ঢোকার পথে গ্রিল ভাঙা। স্বপনবাবুর স্ত্রী জয়িতাদেবীর অভিযোগ, ‘‘কয়েক ভরি সোনার গয়না, নগদ টাকা, একটি ল্যাপটপ, দুটি ক্যামেরা, তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। পাঁচ বছর ধরে এখানে রয়েছি। এমন কখনও হয়নি।’’
স্বপনবাবুর বাড়ির কাছেই তাঁর প্রতিবেশী নির্মল করের বাড়ির গ্রিলও কাটা। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার ক্যাশিয়ার নির্মলবাবু সপরিবারে পাঁশকুড়ায় গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘ ভিতরের দিকে তালা থাকায় দুষ্কৃতীরা ঢুকতে পারেনি। এটাই রক্ষে।’’ এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা জয়ন্ত অধিকারী বলেন, ‘‘‘এলাকায় অনেক বাইরের লোকের আনাগোনা হচ্ছে। অনেক পথবাতি নিয়মিত জ্বলে না। নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ ও পুরসভার নজর দেওয়া প্রয়োজন।’’
বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা স্বীকার করে তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘শহরের এইসব ঘটনায় বাইরের দুষ্কৃতীরা জড়িত বলেই অনুমান। শহরের নিরাপত্তা বাড়ানোর পুলিশের টহলদারির কথা বলা হয়েছে। যে সব এলাকায় পথবাতি খারাপ সেগুলিও দ্রুত সারানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy