Advertisement
০১ মে ২০২৪

এক যুগ পরে ঐতিহ্যের রাসমঞ্চে গোপীনাথ

প্রায় এক যুগ পরে বেলিয়াবেড়ার রাসমঞ্চে বসবেন গোপীনাথ জিউ। সোমবার রাসপূর্ণিমার সন্ধ্যায় সপার্ষদ রাসমঞ্চে বসে উৎসব দেখবেন প্রহরাজ বংশের এই কুলদেবতা। শুনবেন লীলা-সংকীর্তনও।

বেলিয়াবেড়ার রাসমঞ্চ। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

বেলিয়াবেড়ার রাসমঞ্চ। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

কিংশুক গুপ্ত
 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০১
Share: Save:

প্রায় এক যুগ পরে বেলিয়াবেড়ার রাসমঞ্চে বসবেন গোপীনাথ জিউ। সোমবার রাসপূর্ণিমার সন্ধ্যায় সপার্ষদ রাসমঞ্চে বসে উৎসব দেখবেন প্রহরাজ বংশের এই কুলদেবতা। শুনবেন লীলা-সংকীর্তনও। প্রায় পাঁচশো বছর ধরে গোপীনাথ ও তাঁর পার্শ্বদেবতাদের সম্পর্কে এমনই জনশ্রুতি এলাকাবাসীর মুখে মুখে ফেরে।

আর্থিক সমস্যার কারণে ২০০৫ সাল থেকে বেলিয়াবেড়ায় রাসযাত্রা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের হস্তক্ষেপে ১১ বছর পরে ফের এ বার ফের শুরু হচ্ছে সেই উৎসব। আর উৎসব ঘিরে স্থানীয় বাজার কমিটির সৌজন্যে সেজে উঠেছে কয়েক শতাব্দী প্রাচীন রাসমঞ্চটি।

জনশ্রুতি, প্রায় পাঁচশো বছর আগে ঝাড়গ্রামের মল্লদেব বংশের এক রাজার বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন নিমাইচাঁদ দাস নামে এক উৎকল ব্রাহ্মণ। নিমাইচাঁদের বিদ্যাবুদ্ধিতে খুশি হয়ে রাজা তাঁকে এলাকার একশোটি গ্রামের জমিদারি লিখে দিয়েছিলেন। জনশ্রুতি, মল্লদেব রাজার নির্দেশে এক প্রহরের মধ্যে ঘোড়ায় চেপে নিজের জমিদারির এলাকা চিহ্নিত করেছিলেন নিমাইচাঁদ। সেই কারণে নিমাইচাঁদকে ‘প্রহরাজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন ঝাড়গ্রামের মল্লদেব রাজা।

বেলিয়াবেড়ায় প্রহরাজ বংশের প্রাসাদের চত্বরে রয়েছে কুলদেবতা গোপীনাথের প্রাচীন মন্দির। জনশ্রুতি, নিমাইচাঁদ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে গোপীনাথের বিগ্রহ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গোপীনাথের মন্দিরে পার্শ্বদেবতা নারায়ণ শিলা রঘুনাথেরও নিত্যসেবার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। নিমাইচাঁদের আমলেই রাজবাড়ির বাইরে কিছুটা দূরে পোড়া ইট আর চুনসুরকির গাঁথনির রাসমঞ্চ তৈরি হয়েছিল। প্রতি বছর রাস যাত্রার কয়েকদিন আগে উৎসব শুরু হয়ে যেত। রাতে শীতলভোগ দানের পরে পার্শ্বদেবতাদের রাস মঞ্চে নিয়ে আসা হত। কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে শয়নের জন্য দেবতাদের মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হত। রাসপূর্ণিমার রাতে পার্শ্বদেবতাদের সঙ্গে গোপীনাথ ও শ্রীমতীর বিগ্রহকে রাস মঞ্চে নিয়ে আসতেন ৯ জন ব্রাহ্মণ। সেখানে মিঠাই ভোগ ও আরতির পরে মধ্যরাত পর্যন্ত রাসমঞ্চে অবস্থান করতেন গোপীনাথ। সারা রাত ধরে চলত নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

প্রহরাজ পরিবার সূত্রের দাবি, দেবত্র সম্পত্তির বেশ কিছু অংশ দখল হয়ে গিয়েছে। বার্ষিক রাসযাত্রা উৎসবের বিপুল খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে ওঠায় ২০০৪ সালে শেষ বারের মতো রাসযাত্রা উৎসব হয়। প্রহরাজ বংশের প্রবীণা প্রতিমারানিদেবী বলেন, “উৎসব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সকলেরই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। গত ১১ বছর ধরে রাসযাত্রার দিনে গোপীনাথ জিউয়ের মন্দিরেই বিশেষ পুজো হয়েছে। ফের উৎসব শুরু হওয়ায় আমরা সকলেই খুশি।” প্রহরাজ পরিবারের তরুণ সদস্য বিশ্বজিত দাশমহাপাত্র বলেন, “সোমবার পূর্ণিমার রাতে সপার্ষদ গোপীনাথ জিউ ও শ্রীমতীকে নিয়ে যাওয়া হবে রাসমঞ্চ। মধ্যরাত পর্যন্ত উৎসব চলবে।’’

বেলিয়াবেড়ার বিডিও কৌশিক ঘোষ বলেন, “প্রশাসনিক উদ্যোগে রাসমঞ্চ লাগোয়া এলাকাটি সংস্কার করে পর্যটনের অন্যতন কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলা হবে।” প্রতি বছর রাসযাত্রা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রশাসনিকভাবে সব রকম সাহায্যেরও আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rash yatra Jhargram 2005
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE