প্রতীকী ছবি।
প্রসূতিকে অন্যত্র রেফার করায় সম্প্রতি ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে পরিজনেদের বিরুদ্ধে। চিকিৎসক ও নার্সদের মারধরের অভিযোগও ওঠে। ঘটনায় যুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে চিকিৎসক ও নার্সরা সরব হন। যদিও ওই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় সোমবার ফের স্মারকলিপি জমা দিল চিকিৎসকদের সংগঠন ‘সার্ভিস ডক্টরস্ ফোরাম’।
সোমবার ফোরামের এক প্রতিনিধি দল মেদিনীপুরে এসে জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে স্মারকলিপি জমা দেয়। দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফোরামের রাজ্য সম্পাদক সজল বিশ্বাস। পরে সজলবাবু বলেন, “ডেবরার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। ওখানে চিকিৎসক-নার্সদের মারধর করা হয়েছে। অথচ, ওই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। আমরা তাণ্ডবে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।” তাঁর কথায়, “এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে তো চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াই মুশকিল হয়ে পড়বে।” আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও স্মারকলিপি দেবে ফোরাম।
ডেবরার ঘটনার প্রেক্ষিতে সোমবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরে জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দফতরে এক বৈঠক হয়। ছিলেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা, উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারঙ্গী প্রমুখ। ছিলেন ডেবরার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রজত পালও। ঘটনায় উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার।
এ দিন চিকিৎসকদের ফোরামের কাছেও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবু স্বীকার করেন, “ডেবরায় প্রসূতির পরিজনেরা যা করেছেন তা নিন্দনীয়।” সজলবাবু বলেন, “আমরা কলকাতা থেকে এসে স্মারকলিপি দিয়ে গেলাম। আশা করছি, পুলিশ-প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।” তাঁর দাবি, শুধু মেদিনীপুর নয়, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এমন তাণ্ডবের ঘটনা ঘটছে। গত ৫ মাসে অন্তত ৫০টি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে চিকিৎসক-নার্সরা প্রহৃত হয়েছেন।
ডেবরা হাসপাতালে তাণ্ডবের ঘটনাটি ঘটে গত ২৯ অগস্ট। গত ২৮ অগস্ট প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অর্জুনির শালকুঠির বাসিন্দা বছর বাইশের আলপনা পাত্র। ওই দিন সকালে প্রসূতিকে পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, সব ঠিক রয়েছে। তবে রাতের দিকে প্রসূতির অবস্থার অবনতি হয়। ২৯ অগস্ট তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে রেফার করে দেওয়ায় প্রসূতির পরিজনেরা তাণ্ডব চালান হাসপাতালে। চিকিৎসক ও নার্সদের মারধর করা হয়। প্রসূতির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু হয়নি। রেফারের কথা জানতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিজনেরা। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রজত পালকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ঘটনায় জেলার বিভিন্ন মহলে শোরগোল পড়ে।
শুধু ডেবরার ঘটনা নয়, মেদিনীপুরে নার্সের মৃত্যুর ঘটনারও তদন্তের দাবি জানিয়েছে ফোরাম। গত ২৯ অগস্ট তৃপ্তি দিণ্ডা নামে এক নার্সের মৃত্যু হয় মেডিক্যালে। তৃপ্তিদেবী মেডিক্যালেই কর্মরত ছিলেন। মৃতার পরিজনেদের অভিযোগ, হাসপাতালে তৃপ্তিদেবীর চিকিৎসাই হয়নি। অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে এরপর আন্দোলন শুরু করেছিলেন নার্সরা। নার্সের মৃত্যুর ঘটনায় অবশ্য তিন চিকিৎসককে শো-কজ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy