কংগ্রেসের ‘গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার অভিযান’ কর্মসূচিতে জুড়ল মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেনজির মৃত্যু রহস্যের প্রসঙ্গও। আজ মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের ডাকে দুপুর ১২ টায় অরণ্যশহরে এক বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। রবীন্দ্রপার্ক থেকে মিছিল করে গিয়ে কংগ্রেস কর্মীরা মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে জমায়েত করবেন। প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক অসিত মিত্র এবং ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের মুখ্য সংগঠক সুব্রত ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ৮-দফা দাবিতে মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম দাবিটি প্রশাসন তথা শাসক দলের পক্ষে নিঃসন্দেহে অস্বস্তির কারণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। গত শুক্রবার বেলপাহাড়িতে এক সভায় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিরোধীরা হইচই জুড়ে দেন। জঙ্গলমহলে রাজ্য সরকারের সাফল্যের উদাহরণ দিতে গিয়ে অভিষেক বলেছিলেন, ‘কিষেনজিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার হত্যা করে প্রমাণ করে দিয়েছে, আগামী দিনে মানুষই শেষ কথা বলবেন’। অভিষেকের বক্তব্য নিয়ে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। তবে, খোদ জঙ্গলমহলের বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা কিষেনজির মৃত্যুর প্রসঙ্গে অভিষেকের বক্তব্য নিয়ে সেভাবে সরব হন নি। এই প্রেক্ষিতে কংগ্রেসের গণতন্ত্র ফেরাও আন্দোলনে রীতিমতো হিসেব কষেই কিষেনজির প্রসঙ্গ জুড়ে দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রেই সমর্থন মিলেছে।
ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের মুখ্য সংগঠক সুব্রত ভট্টাচার্য সোমবার স্পষ্ট বলেছেন, “আমরা মাওবাদীদের হত্যার রাজনীতি কখনওই সমর্থন করি না। আমরা এটাও মনে করি, কিষেনজির নেতৃত্বেই এক সময় জঙ্গলমহলে খুন-সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম হয়েছিল। কিন্তু, গণতান্ত্রিক দেশে সরকার যদি পরিকল্পনা মাফিক নিরস্ত্র কোনও মানুষকে হত্যা করে এনকাউন্টার বলে চালায়, তাহলে সেটারও তদন্ত হওয়া উচিত। অভিষেক জঙ্গলমহলে এসে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহটাকে নতুন করে উস্কে দিয়েছেন। সেই কারণে আমরা কিষেণজি হত্যা রহস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।” সুব্রতবাবু জানান, এ ছাড়া উন্নয়নের স্বার্থে অবিলম্বে প্রশাসনিক ভাবে ঝাড়গ্রামকে পৃথক জেলা ঘোষণা করা, জঙ্গলমহলে একশো দিনের কাজের বকেয়া মজুরি প্রদান, পর্যাপ্ত পরিমাণে একশো দিনের কাজ শুরু, জঙ্গলমহলে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী প্রকৃত উন্নয়ন, প্রকৃত গবিরদের নাম বিধবা ভাতা ও বার্ধক্যভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা, বিপিএল তালিকাভুক্ত সমস্ত বৃদ্ধবৃদ্ধাদের ভাতা দেওয়ার মতো আরও বেশ কিছু দাবিতে মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
কংগ্রেসের এমন রাজনৈতিক কৌশলে অস্বস্তি বেড়েছে শাসক দলের। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ বলেন, “কিষেনজি যৌথ বাহিনীর সঙ্গে নিহত হয়েছেন এটা সবাই জানেন। তেমনই জঙ্গলমহলে উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে এটাও সর্বজনবিদিত। জঙ্গলমহলে কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্ব নেই, এটাও সর্বজনবিদিত। এখন এসব নাটক করে ওরা অশান্তির পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।”
রাজনৈতিক মহলেরও ধারণা, কংগ্রেসের এই আন্দোলন আসলে ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের আগে প্রচারের আলোয় আসার চেষ্টা ও ঘর গোছানোর প্রস্তুতি। গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে জঙ্গলমহলে কংগ্রেসের সংগঠন কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছিল। দলের বিপর্যয় ঠেকাতে ২০১৩ সালের নভেম্বরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস থেকে ঝাড়গ্রামকে আলাদা করে পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেস কমিটি গঠন করা হয়। পৃথক জেলা কমিটি গঠনের পরেও কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তির বিন্দুমাত্র উন্নতি হয় নি বলে অভিযোগ ওঠে দলের অন্দরে। এই আবহে গত ৪ ও ৫ জুলাই বেলপাহাড়িতে দলের চিন্তন শিবিরে শাসক দল, রাজ্য সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথমে ঠিক ছিল ২১ জুলাই ৮ দফা দাবিতে ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হবে। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না মেলায় স্থান পরিবর্তন করে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে এই কর্মসূচি হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy